1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

লবণ, কেমিক্যাল ও অতিরিক্ত কর্মী নিয়ে প্রস্তুত ট্যানারিগুলো

বানিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০২৩

পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদের প্রধান আকর্ষণ পশু কোরবানি দেওয়া। কোরবানির মধ্য দিয়ে দেশের চামড়া শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের প্রায় ৮০ শতাংশ সংগ্রহ করেন করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাই অতিরিক্ত লবণ, কেমিক্যাল এবং প্রয়োজনীয় শ্রমিক নিয়ে প্রস্তুত রয়েছেন দেশের প্রায় দেড়শ’ ট্যানারির উদ্যোক্তারা। রাজধানী অদূরে সাভারের চামড়া শিল্প নগরী ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, ট্যানারি শিল্পে চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম কোরবানির ঈদ। প্রতিবছর চামড়ার বার্ষিক চাহিদার সিংহভাগ জোগান আসে কোরবানির পশু থেকে। ফলে এ শিল্পের জন্য উন্নতমানের চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীরাও এ সময় ব্যস্ত থাকেন। কোরবানির সময় যে চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তা দিয়েই সারা বছর ট্যানারি শিল্পের কারখানাগুলো চলে। বাংলাদেশে চামড়া শিল্প এগিয়েছে অনেকটা ঢিমেতালে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শিল্পটি কিছুটা গুরুত্ব পেতে থাকে। বিপুল সম্ভাবনাময় এ খাত থেকে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। স্থানীয় ট্যানারি কারখানাগুলোতে চার ধরনের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়ে থাকে।

সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোরবানির পশু থেকে লবণযুক্ত চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মৌসুমি শ্রমিকদেরও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ট্যানারিগুলোতে। ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লক্ষ্য অনুযায়ী কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করতে এ বছর প্রায় ৮০৫ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। তবে এ বছর কোরবানির ঈদে চামড়া কিনতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বাজারে ছেড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সারা দেশ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে ট্যানারিগুলোতে দেওয়ার জন্য আগেভাগেই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মৌখিক চুক্তি করেছেন। কিছু ব্যবসায়ী চুক্তির বাইরেও দাম উন্মুক্ত রেখেছেন।

চামড়া খাতের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারণে এ বছরও দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির চামড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। ফলে ইউরোপের দেশগুলোয় বাংলাদেশ থেকে চামড়া রফতানি করে লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা সন্দিহান রয়েছেন। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ সংক্রান্ত জটিলতায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশে এর প্রভাব পড়বে কিনা, তা নিয়ে দেশীয় ব্যবসায়ীরা আশঙ্কায় রয়েছেন।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, এবার প্রায় এক কোটি পিস চামড়া সংগ্রহ করবেন দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা। এরমধ্যে ৬৫ লাখ পিস গরুর চামড়া প্রতিটির গড়ে ১ হাজার টাকা, ৩০ লাখ পিস বকরি, খাসি ও ভেড়ার চামড়া প্রতিটি গড়ে ১০০ টাকা দরে এবং প্রায় ৫ লাখ পিস মহিষের চামড়া প্রতিটি গড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা দর ধরে কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রেখেছেন তারা। এবার ঈদে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা প্রতি বর্গফুট এবং ঢাকার বাইরে ৪৭ থেকে ৫২ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া গত বছরের নির্ধারিত ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা দরে কিনতে হবে।

চামড়ার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বেড়েছে। এতে অশান্তি বেড়েছে মালিক-শ্রমিক উভয়েরই। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যমূল্য ও কাঙ্ক্ষিত মুনাফা নিয়ে প্রতিমুহূর্তে দুশ্চিন্তায় দিন কাটায় মালিক। লোকসানের ভয়ে থাকেন তারা। অপরদিকে শ্রমিক তার কাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিক না পাওয়ায় তারা থাকেন অশান্তিতে। অনেক দিন থেকেই নাজুক পরিস্থিতি পার করছে দেশের চামড়া শিল্প। পানির চেয়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া। কয়েক বছর ধরে নামমাত্র মূল্যে কাঁচা চামড়া কিনছেন ব্যবসায়ীরা। তারপরও এ খাতের বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই খেলাপিঋণের চক্রে আটকা পড়েছেন। এ অবস্থায় এবার পশুর চামড়া কেনার ঋণে গণছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে নিয়ে যাওয়া হয় ট্যানারি শিল্প। ১৬২টি ট্যানারি শিল্পকে বিসিক প্লট বরাদ্দ দিলেও এখনও তা পুরোপুরি চালু হয়নি। তবে যেসব ট্যানারি হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তার অনেক শ্রমিক এখনও হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে আসা-যাওয়া করে কাজ করছেন। এতে নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছেন দীর্ঘদিন ধরে ট্যানারি শিল্পে কাজ করা শ্রমিকরা। কারখানা হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তর হয়ে সাভারে যাওয়ার কারণে শ্রমিকদের বিভিন্ন খরচ বেড়েছে। এরমধ্যে যাতায়াত ও বাড়িভাড়া মুখ্য। বাসা ভাড়া নিতে না পারা অনেকেই হাজারীবাগ থেকে সাভারে গিয়ে কাজ করেন। এতে পরিবহন ব্যয় বাড়ছে। অপর দিকে এসব শ্রমিকের খাবার খেতে হয় হোটেলে। এটি তাদের বাড়তি খরচ। এসব খরচের চাপে তারা দিশেহারা।

জানা গেছে, আবাসন সুবিধা না থাকায় এখনও ট্যানারিগুলোতে প্রায় ২ হাজার শ্রমিক হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে গিয়ে প্রতিদিন কাজ করেন। এসব শ্রমিকের অধিকাংশের বেতন ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। পরিবার নিয়ে এখনও থাকেন পুরান ঢাকার হাজারীবাগে।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ জানিয়েছেন, চামড়া শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সিংহভাগই জোগান আসে কোরবানির সময়। তাই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে শতভাগই। তবে প্রস্তুতির পাশাপাশি তিনটি বিষয়ে আমাদের শঙ্কা আছে। ভরা বর্ষায় ঈদ হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে চামড়া ছাড়ানোয় সমস্যা হলে এবং যথাযথ লবণ লাগাতে না পারলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে আমরা কোরবানির পশুর চামড়ায় যথাযথভাবে লবণ লাগানো এবং লবণযুক্ত চামড়া এক সপ্তাহ পর ঢাকায় প্রবেশের সুপারিশ জানিয়েছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, সারা দেশ থেকে সুষ্ঠুভাবে চামড়া প্রক্রিয়াজাত ও পরিবহন নিশ্চিত করতে ডিসি ও ইউএনওদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ট্যানারি মালিকদের সুপারিশে লবণ ছাড়া চামড়া পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঈদের সাত দিন ঢাকার ভেতর ও ঢাকার বাইরে কাঁচা চামড়া পরিবহন না করা, নির্দিষ্ট সময় শেষে দেশের অভ্যন্তরে কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহনে যাতে কোনও  প্রতিবন্ধকতা না হয়, সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বলেছি। এ ছাড়াও কাঁচা চামড়া পাচার বন্ধে সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তদারকি বাড়াতে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ