1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শিবির কর্তৃক কুখ্যাত এইট মার্ডারের ২২ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০২২

১২ জুলাই চট্টগ্রামের বহর্দ্দারহাটে বহুল আলোচিত ‘এইট মার্ডার’ এর ২২ বছর। এদিন শিবিরের ব্রাশ ফায়ারে ছাত্রলীগের ৬ জন নেতাকর্মী ও ২ ড্রাইভার ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায়ই নিজ দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর এ ধরনের নির্মমতায় তোলপাড় হয় সারাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তুমুল ক্ষোভ ঝাড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর সেই সময়।

এ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র সমাজ ফুঁসে ওঠে আন্দোলনে। এ হত্যাকাণ্ডের মামলায় রায় এখনো কার্যকর হয়নি। এ নিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। এ হত্যা দিবসটি উপলক্ষে ছাত্রলীগ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ১২ জুলাই চট্টগ্রামের শেরশাহ পলিটেকনিক এলাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য বাকলিয়াস্থ সরকারি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটে যাচ্ছিলেন। গাড়িটি বহর্দ্দারহাট পুকুরপাড় এলাকায় আসলে আরেকটি মাইক্রোবাস তাদের সামনে এসে গতিরোধ করে। গতিরোধ করার মুহূর্তের মধ্যেই ব্রাশফায়ার শুরু করে বর্বর শিবির ক্যাডাররা।

এ সময় গাড়ির ভেতরেই লুটিয়ে পড়েন ছাত্রলীগের ছয় নেতা, তাদের মাইক্রোবাসের চালক ও একজন অটোরিকশার চালক। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন সরকারি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট (পলিটেকনিক এলাকাস্থ) ছাত্র সংসদের ভিপি হাসিবুর রহমান হেলাল, এজিএস রফিকুল ইসলাম সোহাগ, ইনস্টেটিউটের ছাত্র জাহাঙ্গীর হোসেন, বায়েজিদ বোস্তামী ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, শেরশাহ কলেজ ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আবুল কাশেম, জাহিদ হোসেন এরশাদ, মাইক্রোবাস চালক মনু মিয়া এবং অটোরিকশা চালক কাশেম।

এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলাটি ‘এইট মার্ডার’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। মামলায় আসামি করা হয় ২২ জনকে। বিচার চলাকালে ২ জন আসামি মারা যায়।

ঘটনার ৮ বছর পর ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ মামলাটির রায় দেন চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ একরামুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্র পরে ৪৩ জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত দায়রা জজ ২০০৮ সালে ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। রায়ে ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায়ে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খান, মো. আলমগীর কবির ওরফে বাইট্টা আলমগীর, মো. আজম ও মো. সোলায়মানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এ ছাড়া আরও ৩ শিবির ক্যাডার হাবিব খান, এনামুল হক ও আবদুল কাইয়ুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা এখনো পলাতক। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন খান ভারতের কারাগারে, অন্য তিনজন দেশের কারাগারে বন্দী রয়েছে।

এই ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ৪ আসামি। একইসঙ্গে ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য তা ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। এ মামলায় পরবর্তীতে ২০১৪ সালের এপ্রিলে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আব্দুল হাই ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেব নাথের ডিভিশন বেঞ্চ চট্টগ্রামের বহর্দ্দারহাটে বহুল আলোচিত ‘এইট মার্ডার’ হত্যা মামলায় ফাঁসির ৪ আসামিকে খালাস দেন হাইকোর্ট। রায়ে খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, সাজ্জাদ হোসেন খান ওরফে সাজ্জাদ, আলমগীর কবির ওরফে মানিক, আজম ও মো. সোলায়মান।

লাশের স্তূপের নীচে পড়ে বেঁচে যাওয়া সেই সাইদুল: আপিলের রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়ার সাথে সাথেই তৎকালীন ছাত্রনেতা সাইদুল ইসলামের বক্তব্য, ‘ভাই ছোটখাট চাকরি করে খাই। উচ্চতর আদালতের রায়ের ওপর কী বলব?

রায়ের ব্যাপারে কিছু না বললেও সেদিনের ঘটনার কথা মনে হলে এখনও আঁতকে উঠেন সাইদুল। সেদিন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েও শুধু বাঁচার জন্য হাতে মুখে রক্ত মেখে মৃত্যুর ভান করে শুয়ে ছিলেন তিনি। লাশের নীচে। খুনিরা লাশ উল্টে দেখেছিল। কিন্তু সাইদুল মরে গেছে ভেবে তাকে ফেলে যায় খুনিরা। এ মামলায় সাইদুল আদালতে সাক্ষ্যও দিয়েছেন। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তিনি ১ লাখ টাকা অনুদানও পেয়েছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী: রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সন্তোষ প্রকাশ করেন। একইসাথে তিনি একে আইনের শাসনের বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন।

এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল: এ ব্যাপারে নগর আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট ইফতেখার সাইমুল জানান, হাইকোর্টের রায়ের ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাই না। তবে এ ধরনের জঘন্য হত্যাকাণ্ড যারাই করুক তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া আইনের শাসনের দাবি। তিনি বলেন, এ মামলায় বাদীপক্ষের লিভ টু আপিলের সুযোগ এখনও রয়েছে।

ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান তারেক: কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, উচ্চতর আদালতের রায়ের বিষয়ে কিছু বলা সমীচীন হবে না এ মুহূর্তে। তবে এইট মার্ডারের মতো ঘটনায় জড়িতদের বিচার হলে আইনের শাসনের জয় হবে। তিনি বলেন, সরকার চাইলে এ ধরনের জঘন্য ঘটনায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে। যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না হয়।

কোথায় শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ: শহরের বায়েজীদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী এলাকার আবদুল গনি কন্ট্রাক্টরের ছেলে দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের বিরুদ্ধে শুধু বায়েজীদ থানাতেই হত্যাসহ ১০টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া এইট মার্ডারসহ বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে মোট মামলা সংখ্যা ১৩টি। একটি অস্ত্র মামলায় তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা বিচারাধীন এবং ৭টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

এইট মার্ডার মামলার রায়ের আগে ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পায় সাজ্জাদ। ২০০৫ সালে সে ভারতে পালিয়ে যায়। পরে তার গন্তব্য হয় দুবাই শহর। সর্বশেষ ২০১২ সালের নভেম্বরে সাজ্জাদ ভারতে গ্রেফতার হয়। এর আগে তাকে গ্রেফতারের জন্য বাংলাদেশ থেকে ইন্টারপোলের কাছে বার্তা পাঠানো হয়। অনেকদিন ধরে শোনা যাচ্ছে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার বহর্দ্দারহাটের এইট মার্ডার মামলার আসামি সাজ্জাদ খানকে। ‘বন্দি বিনিময়’ চুক্তির আওতায় নয়, সাজ্জাদকে পুশইন-পুশব্যাক প্রক্রিয়ায় ফেরত দিচ্ছে ভারত।

ইন্টারপোলের লাল নোটিশধারী দুর্ধর্ষ এ সন্ত্রাসীর নাম বিভ্রাটসহ নানা জটিলতার কারণে এ পন্থা বেছে নিয়েছে ভারত। এদিকে তাকে সরাসরি হস্তান্তরে ভারতের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফ মাহমুদ বলেন, ‘সাজ্জাদ হোসেনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’

এর আগে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ভারতের কাছে সাজ্জাদসহ বাংলাদেশের একাধিক মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী তালিকা দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১২ সাল থেকে সাজ্জাদকে দেশে ফিরিয়ে চেষ্টা করছে সরকার। দুই দেশের মধ্যে পত্র চালাচালিও হয়েছে প্রচুর। কিন্তু নাম বিভ্রাটসহ নানা কারণে সাজ্জাদকে আর ফেরত আনা যায়নি।

ভারতের দাবি, এর আগে বাংলাদেশ সরকার তাকে ফিরিয়ে আনতে যেসব তথ্য সেখানে পাঠিয়েছে, তা অসম্পূর্ণ। এছাড়া সাজ্জাদ নিজের নাম মো. আবদুল্লাহ বলেও ভারতের কাছে দাবি করেছে। সে দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে তার পাসপোর্টও ফেরত চেয়েছে।

সিএমপি সূত্র জানায়, বহর্দ্দারহাটের আলোচিত এইট মার্ডার মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলেও হাইকোর্টে অব্যাহতি পায় সাজ্জাদ। সম্প্রতি দিল্লির তিহার জেল থেকে ছাড়া পায় সাজ্জাদ। এর আগে ২০০১ সালে একে-৪৭ রাইফেলসহ নগরের পাঁচলাইশ চালিতাতলী থেকে গ্রেফতার হয় সাজ্জাদ। দেড় বছর পর জামিন পেয়ে চট্টগ্র্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের তৎকালীন এক সংসদ সদস্যের সহায়তায় দুবাই পালিয়ে যায় সাজ্জাদ।

দুবাইতে টাইলস ও সিরামিকের ব্যবসা করতো সাজ্জাদ। সেখানে থাকা অবস্থায় ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের এক তরুণীকে বিয়ে করে সাজ্জাদ। তাদের সংসারে একটি শিশু কন্যাও রয়েছে। জামিনে মুক্ত হয়ে বর্তমানে সে দিল্লিতে বসবাস করছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ