1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

টেকসই প্রবৃদ্ধিতে ক্যাশলেসের গুরুত্ব

সৌম্য বসু : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩

ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে আমাদের প্রতিদিনকার জীবন আর কাজের ধরন ক্রমেই পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে আমরা অনলাইন থেকে কাপড় কিনছি, ট্রাভেল পোর্টাল থেকে ঘুরতে যাওয়ার খোঁজখবর করছি, অ্যাপ থেকে খাবার অর্ডার করছি, ওয়ালেটের মাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে খাবারের বিল ভাগাভাগি করে নিচ্ছি। কয়েক বছর ধরে এই রূপান্তরের কারণে আমাদের লেনদেনের ধরনও অবিশ্বাস্য গতিতে পরিবর্তিত হয়েছে। বিল পরিশোধ করা থেকে শুরু করে জনপ্রিয় ‘ই-টেইলিং’, সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গ্রাহকরা দিন দিন ডিজিটাল পেমেন্টে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।

বহুদিনের পুরনো নগদ লেনদেনের পদ্ধতি থেকে কার্ড, কিউআর কোড, অনলাইন পেমেন্ট বা ওয়ালেটের মতো ‘ক্যাশলেস’ পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হতে কেবল সময় নয়, সঙ্গে আরো বেশ কিছু বিষয়ের প্রয়োজন। গ্রাহকরা প্রথমে সেবা ব্যবহার করেছেন, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন; সব শেষে ক্যাশলেস পেমেন্টের সুবিধাগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়েছেন। এসব সুবিধার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে খুব বেশি পরিবর্তিত হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। এতে খুব সহজেই খরচের হিসাব রাখা যাচ্ছে; পাশাপাশি জালিয়াতি শনাক্ত, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করাসহ লেনদেন নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে সব রকম নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত থেকে কার্ড ব্যবহারের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ‘পয়েন্ট অব সেল’-এর ক্ষেত্রে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ৫৮ শতাংশ, অর্থমূল্যে যা দুই হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। একই সময়ে অনলাইন বা ই-কমার্স পেমেন্ট বেড়েছে ৩.৩ গুণ, যার অর্থমূল্য এক হাজার ৭২ কোটি টাকা। নিঃসন্দেহে ক্যাশলেস পেমেন্ট এর উন্নতির শিখরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

নীতিনির্ধারণী সহায়তা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এতে উদ্ভাবন ত্বরান্বিত হচ্ছে। আর এটিই যোগাযোগবিহীন লেনদেনের (কনটাক্টলেস পেমেন্ট) ক্ষেত্রে উদাহরণ হয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট।

কনটাক্টলেস লেনদেনের প্রবৃদ্ধি

বাংলাদেশে ২০১৮ সালে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যোগাযোগবিহীন লেনদেনের (কনটাক্টলেস পেমেন্ট) সূচনা ঘটে। বর্তমানে কার্ডধারীরা ক্রেডিট, ডেবিট বা প্রি-পেইড কার্ডের মাধ্যমে পিন বা দুই স্তরের অথেনটিকেশন (টুএফএ) ছাড়াই পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত মাত্র এক ট্যাপে অর্থ পরিশোধ করতে সক্ষম হচ্ছেন। কার্ড ও টাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা প্রয়োজনীয় তথ্যসহ এসএমএস অ্যালার্ট পাচ্ছেন।

যোগাযোগবিহীন লেনদেনে একই সঙ্গে যেমন নিরাপদ, তেমনি স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক। এর প্রথম সুবিধা হচ্ছে, এতে নগদ টাকা ব্যবহারের অসুবিধায় পড়তে হয় না, কেনাকাটার ক্ষেত্রে কার্ডে একটিমাত্র ট্যাপ করেই লেনদেন করে ফেলা যায়। ট্রানজিটের মতো যেখানে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লাগে ও সময়ের স্বল্পতা থাকে বা রেস্তোরাঁ, সুপারমার্কেট বা পেট্রল পাম্প, যেখানে দ্রুত সেবা পাওয়া দরকার, সেখানে এই সুবিধা বেশ কার্যকর হবে। বাংলাদেশ সরকার আগামী চার বছরের মধ্যে দেশে ৭৫ শতাংশ লেনদেন ক্যাশলেস করতে কাজ করে যাচ্ছে।

বর্তমানে কার্ডে চিপ-অ্যান্ড-পিন টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এতে কার্ড ক্লোন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রতারণার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে এখন কার্ডে ‘রিয়েল টাইম ফ্রড ডিটেকশন’ ও একাধিক স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমার্শিয়াল কার্ড বা অন্যান্য মাধ্যমে হওয়া যোগাযোগবিহীন লেনদেন ব্যবসার ক্ষেত্রে স্ট্রিমলাইন অপারেশনে সহায়তা করে। পাশাপাশি এটি ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ক্ষেত্রেও সহায়তা করে এবং অর্থপ্রবাহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রেখে দক্ষতা বাড়াতে ব্যবসা ও কর্তৃপক্ষ—দুই পক্ষকেই সহায়তা করে।

ইতিবাচক হস্তক্ষেপ

গ্রাহকদের ক্যাশলেস পেমেন্টে অভ্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাজধানীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফুটপাতের বিক্রেতাদের ডিজিটাল পেমেন্টের আওতায় নিয়ে আসতে ইন্টারঅপারেবল কিউআর কোডের মাধ্যমে ডিজিটাল পেমেন্টকে জনপ্রিয় করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ উদ্যোগ।

ই-কমার্স খাত ক্যাশলেস পেমেন্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। অনলাইন ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির সঙ্গে নিজেদের খুব শিগগির মানিয়ে নিয়েছেন, তাঁরা ডিজিটাল পেমেন্টকে গ্রাহকদের মধ্যেও পরিচিত করিয়েছেন। ঈদের মতো বিশেষ যেকোনো উপলক্ষে ক্যাম্পেইন পরিচালনার মাধ্যমে তাঁরা যে কেবল ব্যবসায় অবদান রাখছেন তা নয়, বরং একই সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের আওতাও প্রসারিত করতে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।

তৃতীয়ত, ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রণোদনা (ইনসেনটিভস) বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ক্যাশলেস পেমেন্ট ব্যবহার ও গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা ক্যাশব্যাকের মতো প্রণোদনা নিয়ে আসতে পারেন। মূল্য সংযোজন করে (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স—ভ্যাট) ছাড় দিয়ে গ্রাহকদের ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে আগ্রহী করে তোলা যায়। পাশাপাশি ডিজিটাল নানা ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেশকে আরো ক্যাশলেস করে তুলতে এ খাতের জন্য তহবিল বরাদ্দ করা যেতে পারে।

সর্বশেষ বাস্তবিক কিছুর সঙ্গে ডিজিটাল সম্পর্কিত রয়েছে—এমন একটি ক্ষেত্র হতে পারে গণপরিবহন। গণযোগাযোগ ব্যবস্থাকে যোগাযোগবিহীন ও পরস্পর আদান-প্রদানযোগ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো স্বচ্ছন্দ করে তোলার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। মেট্রো রেল বা র‌্যাপিড বাসের যাত্রীদের জন্য ভ্রমণের ক্ষেত্রে যোগাযোগবিহীন কিন্তু সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের ব্যবস্থায় সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে ভিসা।

ডিজিটাল হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিই সমৃদ্ধ হবে। এতে আর্থিক সেবায় অংশগ্রহণ বাড়বে, ক্রেডিট হিস্ট্রি তৈরি হবে, ঋণের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বাড়বে—সর্বোপরি এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করবে। জাতিসংঘভিত্তিক ‘বেটার দেন ক্যাশ অ্যালায়েন্স’ ও অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) অনুযায়ী, ডিজিটাল পেমেন্ট বছরে ১.৭ শতাংশ হারে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

অবিশ্বাস্য গতিতে সামনে এগিয়ে যাওয়া

দেশের অনেক জায়গায় এখনো অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ সম্পর্কিত প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়ে গেছে। আর এ কারণেই ডিজিটাল পেমেন্টের বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অনেক গ্রাহকের জন্য ডিজিটাল সেবার আওতায় আসা কষ্টসাধ্য। ডিজিটাল পেমেন্টকে মূলধারায় নিয়ে আসতে চাইলে অবকাঠামো ও সচেতনতায় বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ হওয়ার দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। নীতিনির্ধারণী সহায়তা ও ই-কমার্স খাতের প্রবৃদ্ধির কারণে গ্রাহকের কাছে লেনদেনের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহার করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এতে কেবল স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাত্রা ত্বরান্বিত হবে না, বরং বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের অবস্থানও সংহত হবে।

ক্যাশলেস সোসাইটির লক্ষ্য অর্জনে সব অংশীজনকে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারকে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে হবে এবং মানুষকে ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এই লক্ষ্যের পরিপূরক হয়ে উঠতে হবে, অবস্থান বা আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে সব গ্রাহকের জন্য এই সেবা সহজলভ্য করতে হবে। পাশাপাশি গ্রাহকদেরও কার্যকর ডিজিটাল পেমেন্টের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে হবে; আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আশপাশের সবার মাঝে বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। আর এর মধ্য দিয়ে আরো বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

লেখক: সৌম্য বসু – কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান), ভিসা।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ