1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আর্থিক অসততা-লোভ অন্ধকারে নিলো নুরকে 

কবির য়াহমদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩

নুরুল হক নুর নবগঠিত রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের নেতা। ২০২১ সালের অক্টোবরে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলো গণঅধিকার পরিষদ। ছাত্রঅধিকার পরিষদ, যুবঅধিকার পরিষদ থেকে বিবিধ-অধিকার পরিষদ হয়ে গণ সংগঠনের পথে এসেছিলো নুরুল হক নুররা। রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের সময়ে তাঁরা তাঁদের সংগঠনের ‘প্রধান মুরুব্বি’ হিসেবে ‘হায়ার’ করেছিলো ড. রেজা কিবরিয়াকে। রেজা কিবরিয়ার রাজনৈতিক অতীত নেই। তাঁর পিতা শাহ এএমএস কিবরিয়া ছিলেন সাবেক আমলা, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী। সেই সুবাদে তাঁর পরিচিতি। গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক কিংবা প্রধান মুরুব্বি হওয়ার আগে তিনি ড. কামাল হোসেনের গণফোরামে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানেও টেকেননি। তাঁর নিজের কারণে হোক, অন্যদের সঙ্গে তাঁর মতের অমিলের কারণেই হোক এখন পর্যন্ত তিনি সফল রাজনীতিবিদ যে নন এটা প্রমাণিত।

গণঅধিকার পরিষদ রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত হওয়ার আগেই ভেঙে গেছে দলটি। রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে কাউন্সিলও করছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন অংশটি। নুর রেজা কিবরিয়াকে অব্যাহতি দিলেও তাঁর সঙ্গে আছেন দলের অন্তত চল্লিশের বেশি সংখ্যক নেতা। তাঁরা রেজা কিবরিয়ার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। ইসিতে গণঅধিকার পরিষদ রেজা কিবরিয়ার নামে নিবন্ধিত হওয়ার কথা, এবং দলের পক্ষে সব কাজ করার কথা ছিলো নুরুল হকের নুরের। এখন রেজা কিবরিয়া এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন অন্য একজনকে।

গণঅধিকার পরিষদে এই যে ভাঙন তার কারণ আদর্শিক নয়, আর্থিক। আদর্শিক মতানৈক্যের কারণে দেশের অনেক রাজনৈতিক দলে ভাঙনের কথা আমরা জানি, কিন্তু স্রেফ আর্থিক কারণে ভাঙনের ইতিহাস গড়ল গণঅধিকার পরিষদ। তাও আবার রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসিতে নিবন্ধনের আগেই। এর জন্যে একমাত্র দায়ী দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নুরুল হক নুর। তাঁর কারণে দলের প্রতিষ্ঠা একদিকে, আবার তাঁর কারণেই দলের এই হাল।

গণঅধিকার পরিষদের ভিত্তি ও বর্তমান ব্যাপ্তির মূলে প্রধান ব্যক্তি নুরুল হক নুর। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু তাঁর যাত্রা। এই পথ পরিক্রমায় তাঁরা তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছিলো। কোটা সংস্কার করেছিলো সরকার। এরপর ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে নুরুল হক নুর ডাকসুর ভিপি হন, এই সংগঠনের কয়েকজন ডাকসুর বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদেও নির্বাচিত হন। নুরুল হক নুর সরকার-দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হয়েছেন বারবার। আহত হয়েছেন, আহত হওয়ার অভিনয়ও করেছেন বারবার। এরমাধ্যমে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহানুভূতি অর্জন করেছেন, দেশের সরকারবিরোধী অংশের সহানুভূতি অর্জন করেছেন। সারাদেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। বিবিধ-নামের সংগঠন গড়েছেন দেশে-বিদেশে। যেভাবেই হোক তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম এক মুখ হয়ে ওঠেছিলেন। কিন্তু বাগাড়ম্বর এবং আর্থিক অসততা কি তাঁকে এখন পতনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে না?

আর্থিক অসততায় তিনি এখন নিজ দলেই বিতর্কিত। তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী-সহমর্মী অনেকেই তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। দলে ভাঙন ধরেছে। গণতন্ত্র মঞ্চ নামের সরকারবিরোধী একটা জোটে গিয়ে নয় মাসের মাথায় সেই জোট ছেড়েছেন। রাজনৈতিক দল গঠনের পৌনে দুই বছরের মাথায় দলের মধ্যেও ভাঙন ধরেছে। তিনি আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছিলেন, কিন্তু দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সেই তহবিলের তসরুপ করেছেন। গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক রেজা কিবরিয়ার অভিযোগ প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই তিনি দলের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন এবং সেগুলো নিজে আত্মসাৎ করেন। এইসব কর্মসূচিতে দলের কোনো লাভ হয় না বলে অভিযোগ খোদ দলের আহবায়কেরই।

পটুয়াখালীর অসচ্ছল একটা পরিবারের সন্তান ছিলেন নুরুল হক নুর। বাবা ছিলেন কৃষক। ছিলেন একটা ছোটখাটো চা-দোকানের মালিক। বাড়িতে ছিলো টিনের ঘর। গণঅধিকার পরিষদের সূত্র বলছে, তাঁর ভাইয়েরা নাকি ঢাকায় কলা বিক্রি করতেন। অর্থাৎ অসচ্ছল পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। কিন্তু এই দুই বছরের সবকিছু বদলে গেছে। নুরুল হক নুরের বাবা এখন চায়ের দোকান চালান না, ভাড়া দিয়েছেন। মাটির মেঝের টিনের ঘরের জায়গায় ওঠেছে একটা দালান।

একটা টেলিভিশনের টক-শোতে নুরুল হক নুর ভাষায় তাঁর আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানান, ‘আপনি একজন লোকাল প্রতিনিধি পাঠিয়ে জানবেন, আমার বাবার কতটুকু কৃষিজমি আছে। আমরা জয়েন্ট ফ্যামিলি। আমরা তিন ভাই। আমার দুই ভাই কিন্তু পেশাজীবী। তারা কিন্তু উত্তরাতে ব্যবসা-বাণিজ্য করে। বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে। আমার ওয়াইফ একজন প্রাইমারি শিক্ষক। সেখান থেকে সাপোর্ট পাই। আমার যারা শুভাকাঙ্ক্ষী, যারা চায় আমি রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পাই, সে জন্য তারাও আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে। ফেসবুক থেকে আমার মাসে অন্তত একদেড় লাখ টাকা আর্নিং হয়। দেখবেন, আমার মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউয়ারৃসেখান থেকে একটা পরিমাণে ডলার ইনকাম হয়। আমার মাছের প্রজেক্ট আছে। অ্যাগ্রিকালচার থেকে আমার আর্নিং হয়। ধানের সিজনে ধান, ডালের সিজনে ডাল মাছের সিজনে মাছ’। [প্রথম আলো ১০ জুলাই ২০২৩, এ কোন নুর? একে তো আমরা চিনি না/সারফুদ্দিন আহমেদ]

কীভাবে সম্ভব? আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের কথা শোনা যায় উপন্যাসে/টিভি সিরিয়ালে, এ কোন প্রদীপ পেলেন নুরুল হক নুর? আর্থিক অসততায় প্রশ্নবিদ্ধ গণঅধিকার পরিষদ। এই আর্থিক অসততার সঙ্গে আছে ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তাঁর বহুল বিতর্কিত বৈঠক। এ বছরের শুরুর দিকে সাফাদির সঙ্গে নুরের বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠক নিয়ে গণঅধিকার পরিষদে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন নুর। স্বীকারও করেছিলেন বৈঠকের, কিন্তু কী কারণে সে বৈঠক সেটা বলতে রাজি হননি। সংগঠনের বৈঠকে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গ স্বীকার করলেও গণমাধ্যমের কাছে এটা অস্বীকার করছেন নুরুল হক নুর। বিতর্কিত এই ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর এই বৈঠকের কারণে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার একটি আবেদন পড়েছে ইতোমধ্যে। এরআগে একই ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জেল খাটছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক রেজা কিবরিয়াসহ অনেক নেতার অভিযোগ মেন্দি এন সাফাদির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন নুরুল হক নুর। নুর টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করছেন না, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করছেন না। আবার বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত টাকাপয়সার হিসাবও দিচ্ছেন না।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের উত্থান আকস্মিক ছিলো। কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে তাঁকে কেউ চিনতই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের ছাত্রলীগের কমিটির অখ্যাত এক পদবীধারী ছিলেন তিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলন তাঁকে আলোচনায় এনেছিলো। তিনি সেই আন্দোলনের পথ ধরে ডাকসুর ভিপি হয়েছিলেন, বিবিধ সংগঠনের জন্ম দিয়ে অবশেষে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকতে পারলেন না। স্রেফ আর্থিক অসততা তাঁকে শেষ করে দিলো। বিএনপির বাইরে দেশে সরকার বিরোধী যে উচ্চকণ্ঠের দেখা মিলেছিলো তার সমাপ্তি ঘটল হয়তো টাকার কারণেই। নুরুল হক নুরকে নিয়ে যাঁরা স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার অপেক্ষা এখন কেবল। আর্থিক অসততা, লোভ: সর্বোপরি টাকা কেড়ে নিল নুরুল হক নুরকে। হ্যাঁ, নুর হয়তো টিকে থাকার চেষ্টা করবেন, কিন্তু সেটা আর সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না!

লেখক : কবির য়াহমদ – সাংবাদিক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ