1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আশায় আশায় দিন চলে যায়

আলী হাবিব : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩

দেশের রাজনীতির ময়দানে আরো একটি হতাশাজনক মাস পার করল বিএনপি। গত ঈদের আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল এক দফার আন্দোলনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে তারা। প্রথমে ১২ জুলাইয়ের পর ২৯ জুলাই দুটি সমাবেশের আগে যে হাঁকডাক শোনা যাচ্ছিল তাতে মনে হচ্ছিল, ‘তখতে-তাউস’ তাদের অপেক্ষায়। সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কিন্তু দেখা গেল শেষ পর্যন্ত সবটাই সেই ‘বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া’। যতটা গর্জন ছিল, বর্ষণ ঠিক তার বিপরীত। বৃষ্টিবিহীন রোদেলা শ্রাবণে প্রাপ্তিযোগ শুধুই খরা। রাজনীতির মাঠ না ভিজলে যে ফসল ফলবে না, এটাই তো স্বাভাবিক!

না, গেল মাসটি একেবারেই খালি হাতে ফেরায়নি বিএনপিকে; বরং একটি খবর বিএনপিকে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

এ নিয়ে কানাডার আদালতে অন্তত পাঁচটি মামলার রায়ে বিএনপির সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ে ওই দেশটির কর্মকর্তাদের চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ পেল। শুধু কানাডা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের মামলাগুলোর নথিতেও বিএনপির সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে।

প্রকাশিত খবর থেকে আমরা যা জানতে পারছি, তা এ রকম—গত ১৫ জুন টরন্টোর আদালতের এক রায়ে দেখা যায়, বিএনপির এক কর্মী কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে কানাডার ফেডারেল কোর্ট তা নাকচ করে দেন। রায়ে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার জন্য আবেদনকারী বিএনপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

বিএনপি বল প্রয়োগ ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকারকে উত্খাতের চেষ্টা করছে। সন্ত্রাসী দলের সদস্য হওয়ায় ওই ব্যক্তি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা নাকচ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল রিভিউটি দায়ের করেছিলেন। সেটিও খারিজ হয়ে গেছে। রায়ে বলা হয়েছে, আবেদনকারী ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির সদস্য ছিলেন বলে দাবি করেছেন। কানাডার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ মনে করে, বিএনপি বলপ্রয়োগ ও নাশকতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেষ্টা করেছে এমনটি বিশ্বাস করার কারণ আছে।

রায়ের সারমর্ম হলো, দল হিসেবে বিএনপি সন্ত্রাসে জড়িত। ওই দলের একজন সদস্য নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য।

ঈদুল ফিতরের পর বিএনপি সর্বাত্মক আন্দোলনে যাবে এমন কথা অনেক আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। আসলে বোধ হয় সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় ছিল বিএনপি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে না গেলেও পথ তৈরি করে দিয়ে যাবেন—এমন একটি আশা সুপ্ত অবস্থায় ছিল তাদের মনে। বিএনপির আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণও ছিল। এক. যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন তার দুই দফা বৈশ্বিক গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সংঘাতমুক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। দুই. গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। কিন্তু সাঁইজির সেই গানের কলি সত্যি হলো বিএনপির জন্য, ‘আশা পূর্ণ হলো না/আমার মনের বাসনা।’ উল্টো বিএনপি ‘…পড়ে গেছে বিধির বামে/ভুল হলো মূল সাধনে!’ আজরা জেয়া বাংলাদেশ সফর শেষে বলে গেলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিকে স্বীকৃতি দিতে’ তাঁর এখানে আসা। ‘যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ককে আরো নিবিড় করতে চায়।… নির্বাচন কখন হবে তা বাংলাদেশই ঠিক করবে।’ এ ক্ষেত্রে তাদের অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠকটি সোয়া এক ঘণ্টার মতো চলে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পিটার হাস। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়। আমাদের আগ্রহ শুধু সহিংসতামুক্ত, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন।’ বৈঠকের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে এ বৈঠক, বাংলাদেশে সব দলের সঙ্গে যে সিরিজ বৈঠক করেছি, তারই অংশ। আমি অন্য রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, সুধীসমাজ, পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছি, এটা আমি করেছি আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হিসেবে। প্রতিটি মিটিংয়ে আমি একই বার্তার পুনরাবৃত্তি করেছি। এটা আমেরিকার পলিসি—আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সমর্থন করি। কারো দ্বারা কোনো সহিংসতা চাই না।’

পিটার হাস বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে প্রত্যেকের ভূমিকা পালন করার আছে। সরকারের ভূমিকা আছে, গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে, বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক দল, সুধীসমাজ, নিরাপত্তা বাহিনী—অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রত্যেকেরই ভূমিকা পালন করার আছে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে কি না জানতে চাইলে পিটার হাস বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি, যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের পরবর্তী সরকার বেছে নেবে।’ বিএনপির আশার ‘আগুনে পানি’ ঢেলে দিতে পিটার হাসের এই বক্তব্যই যথেষ্ট।

গত বুধবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি বৈঠক করছিল ২৫টি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে। বিএনপি জানিয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেছে তারা। বিএনপি বলছে, যত ধরনের ঘটনা ঘটবে তা ‘সবাইকে’ জানানো হবে।

বাংলাদেশে নাগরিক সমাজের একটি অংশ মনে করে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়া দরকার। এই অংশটি মনে করে, আন্তর্জাতিক শক্তি যদি বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করে, তাহলে দেশে আরো একবার একটি সংবিধানবহির্ভূত চেপে বসা (তত্ত্বাবধায়ক, কেয়ারটেকার, নির্বাচনকালীন—যা-ই বলা হোক না কেন) সরকার কায়েম করা সম্ভব হবে। এই অংশটি হামেশাই প্রচার করে বেড়ায় যে ভারতের অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে। ‘ভারত আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে বলেই এ দেশের মানুষ ভারতবিরোধী’—এটাও নাগরিক সমাজের এই অংশের প্রচারণা। তাদের আরেকটি প্রচার হচ্ছে, ভারতের উচিত বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। তাতে নাকি এ দেশে ভারতের জনপ্রিয়তা বাড়বে! গত সপ্তাহে এ বিষয়ে ভারত তার অবস্থানও পরিষ্কার করে দিয়েছে। জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে চায় সেভাবেই বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হতে হবে।’ দেশটির আশা, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিকল্পনামাফিক ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। গত বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কিভাবে নির্বাচন হবে তা বাংলাদেশই ঠিক করবে।’

প্রশ্ন হচ্ছে, গত এক মাসের কর্মসূচি থেকে কী পেল বিএনপি? গণমাধ্যমের খবর বলছে, সরকারের পদত্যাগের এক দফার টানা কর্মসূচির পরিকল্পনা থেকে কার্যত সরে এসেছে বিএনপি। কর্মসূচি পর্যালোচনা করে আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবছে দলটি। দলের শীর্ষ নেতারা কর্মসূচিতে সাংগঠনিক দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতার ছাপ দেখতে পেয়েছেন। শক্ত কর্মসূচি পালনে দল কতটুকু প্রস্তুত, সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে। আর তাই ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচিতে বিরতিতে যাচ্ছে বিএনপি।

তাহলে শেষ পর্যন্ত দাঁড়াল কী? জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমান কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। কানাডার আদালতে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা হচ্ছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কিভাবে নির্বাচন হবে তা বাংলাদেশই ঠিক করবে।’ ভারত জানিয়ে দিয়েছে, ‘বাংলাদেশে কিভাবে নির্বাচন হবে তা বাংলাদেশই ঠিক করবে।’ অন্যদিকে সাংগঠনিক দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতায় ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচিতে বিরতিতে যাচ্ছে বিএনপি। শরিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো।

সমমনা রাজনৈতিক শরিকরা সমালোচনায় মুখর। বিএনপি বরাবর বিদেশিদের ওপর ভরসা করতে চেয়েছে। বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বড় ইস্যুতে পরিণত করতে বছরের পর বছর একজন রাজনৈতিক কর্মীকে দিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে মার্কিন প্রশাসনের কাছে নালিশভরা প্রশ্ন করিয়েছে। সেসব প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের জবাব বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আশা সঞ্চার করেছে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রও এমন কিছু করতে পারছে না, যাতে বিএনপি সরাসরি ক্ষমতায় বসে যায়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবারের সমাবেশে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কী বলল তা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।

‘যখন যাহারে জড়ায়ে ধরেছি, সেই চলে গেছে ছাড়ি’—বিএনপির অবস্থা এখন অনেকটা সে রকম। বাংলা চলচ্চিত্রের সেই বিখ্যাত গানের মতো ‘আশায় আশায় দিন যে গেল’ বিএনপির ‘আশা পূরণ হলো না।’ রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য বিএনপির এখন একটি পথই খোলা। সেটি হচ্ছে নির্বাচনে আসতে হবে।

কিন্তু বিএনপি কি নির্বাচনে আসবে? আসবে। কিভাবে? ‘আরেকবার সাধিলে খাইব’—এই সূত্র ধরে!

লেখক: আলী হাবিব – সাংবাদিক, ছড়াকার।

সূত্র: কালের কন্ঠ


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ