চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ে পাল্টে যাবে দেশের অর্থনীতি। তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুর পোর্ট যেমন পুরো দেশটাকে পাল্টে দিয়েছে, তেমনি আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশে যত সমস্যা আছে সব সমস্যার সমাধান করা যাবে। ফরেন কারেন্সি, রিজার্ভ এবং জিডিপি’র ঊর্ধ্বগতি সবই এই বন্দরের আয়ের মাধ্যমে করা যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে, ব্যবহার বাড়ছে, আয়ও বাড়ছে।’
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
একসময় চট্টগ্রাম বন্দর অনেক ছোট ছিল, ‘সদরঘাট এলাকা কিংবা কর্ণফুলীর ভেতর এটি সীমাবদ্ধ ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের পরিধি এখন অনেকগুণ বেড়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়ি পর্যন্ত বন্দর বিস্তৃত হয়েছে। পাশাপাশি পতেঙ্গায় বাস্তবায়িত হচ্ছে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বে-টার্মিনাল। এরপর বন্দরের পরিধি আরও বেড়ে যাবে। বলা যায় ১০ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দর যে অবস্থানে ছিল বর্তমানে তার চেয়ে অনেকগুণ বেড়েছে। আগে যেখানে ম্যানুয়ালি কাজ হতো, এখন সেখানে ডিজিটালি কাজ হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বা স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য যে স্মার্ট বন্দর হওয়া দরকার, সেই স্মার্ট বন্দরের পথে অনেক দূর এগিয়েছে।‘
‘একসময় চট্টগ্রাম বন্দরে অল্প কিছু কার্গো এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিং হত। এখন সক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বে হাজার হাজার বন্দর আছে, এরমধ্যে প্রথম ১০০টি বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রামের অবস্থান এখন ৬৭তম। ২০০৯ সালে যা ছিল ৯৮তম।’
চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের মোট বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ এবং কন্টেইনারজাত পণ্যের ৯৮ শতাংশ পরিবাহিত হয়ে থাকে। ‘দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগ সামাল দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। ১৮৮৭ সালে পোর্ট কমিশনার, ১৯৬০ সালে পোর্ট ট্রাস্ট আর স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে এই বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নামে যাত্রা করে এখন বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রধান গেটওয়ে হিসেবে কাজ করছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ পণ্য পরিবাহিত হয় এই বন্দর দিয়ে। জুন মাসে ৫০ শতাংশ রফতানি বেড়েছে। যার ৮৪ শতাংশ ছিল তৈরি পোশাক।’
‘বর্তমানে কনটেইনার জাহাজ বহির্নোঙরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে। ক্ষেত্রবিশেষে অন-অ্যারাইভেল বার্থিং প্রদান করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪টি। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৩ টন। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ২৫৩টি। ক্রমবর্ধমান হ্যান্ডলিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।’
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, কর্ণফুলী চ্যানেলের নাব্য বাড়াতে ২০১৮ সালে সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত ৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২৫০ মিটার প্রশস্ত এলাকা ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের আওতায় ৫১ লাখ ঘনমিটার পলি ও বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে চ্যানেলের নাব্য বেড়েছে, জাহাজ চলাচল আরও গতি পেয়েছে।