1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে ১০৪ জন লড়াই করে প্রাণ দিয়েছিলো

হাসান মোর্শেদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩

ঘটনাটি ঘটার পর তৎকালীন প্রিয়দর্শিনী প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে হাসতে হাসতে বলছিলেন, আক্রান্ত শেখ হাসিনাই তাঁর ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। এটা একেবারে ডকুমেন্টেড আলাপ। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্যও মুলত আওয়ামী লীগই দায়ী। ‘শেখ মণির প্ররোচনায় তাজউদ্দীন আহমদকে সরিয়ে দিয়ে খন্দকার মোশতাককে কাছে টেনে নেয়া’ এটাই মূলত : হত্যাকাণ্ডের কারণ। প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়- মোশতাক মন্ত্রিসভায় তো আওয়ামী লীগের নেতারাই, এর চেয়ে অকাট্য প্রমাণ আর কী হতে পারে? এ বছর ১৫ আগস্টেই বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে এমন ইংগিত দিয়েছেন- তাজউদ্দীনকে সরিয়ে দিয়ে মোসাহেব মোশতাক কাছে টেনে নিয়ে ডোমস ডে ঘটানো হয়েছে। পাকিস্তানি লেখক মাসকাওয়াথ আহসান একজনের স্ট্যাটাসে মন্তব্য লিখেছেন- জিয়াউর রহমানকে কিলার বলা যাবেনা, বড়জোর বেনিফিশিয়ারী।

আসল কিলার আওয়ামী লীগ নিজেই। মানে আওয়ামী লীগ খুন হবে, সেই খুনের জন্য কাউকে দায়ী করা যাবেনা। দায়ী আওয়ামী লীগ নিজেই। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র নয়, এর মধ্যে কোনো ভূরাজনীতি নেই, এর মধ্যে ‘৭১ এর ধারাবাহিকতা নেই’, এটি আয়েন্দে সুকর্ণ সহ উপনিবেশবিরোধী জাতীয়তাবাদী নেতাদের হত্যাকাণ্ডের ধারবাহিকতা নয়। বিষয়টি স্রেফ আভ্যন্তরীন ক্ষমতার দ্বন্ধ হিসেবে দেখতে হবে। এরা এরকমই বলতে চান। যেমন ২১ আগস্ট নিয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন। যেমন ৭১ এর নৃশংসতা নিয়ে জামাতীরা বলে। ১৯৭১, ১৯৭৫, ২০০৪- এগুলো খুব বড় করে দেখার কিছু নাই। সমস্যা হলো, এই প্রত্যেকটি ঘটনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম থেকে বিকাশ, অভ্যুদয় থেকে অস্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এই ঘটনাগুলো যেমন অতীত হয়ে বর্তমানকে নির্মাণ করেছে তেমনি ভবিষ্যতকে আকৃতি দেবে। চাইলেই এই তিনটি ঘটনার ছায়া থেকে বাংলাদেশ বের হতে পারবে না।

প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য দিয়ে আলাপটি শেষ করি। বঙ্গবন্ধু যখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তখন আওয়ামী লীগ নেই, এর আগে তিনিই আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় দল বাকশালের প্রধান। বাকশালে আওয়ামী লীগ ছাড়াও ন্যাপ, সিপিবি ছিলো শরীক দল। এমনকি ন্যাপ (ভাসানী)র কমরেড হাজী দানেশ, জাতীয় লীগের আতাউর রহমান খানও ছিলেন বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকে এরা সবাইই নেতা মেনে নিয়েছিলেন। বাকশাল ক্যাবিনেটে মন্ত্রী, উপমন্ত্রী মিলিয়ে ছিলেন ৩০ জন। এর মধ্যে একজন ছিলেন ন্যাপ (মোজাফফর) এর সৈয়দ আলতাফ হোসেন। বাকশালের পলিট ব্যুরোর সদস্য ছিলেন ১৫ জন। ১১৫ জনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ন্যাপ, সিপিবি ছাড়াও ব্যুরোক্রেট, উপাচার্য, সাংবাদিক নেতা ইত্যাদি ছিলেন। মোশতাক মন্ত্রীসভা গঠিত হয় ২৩ জন নিয়ে। এর মধ্যে ২১ জনই বঙ্গবন্ধু ক্যাবিনেটের। এই ২১ জনের মধ্যে তিনজন ঠিক আওয়ামী লীগ নেতা নন- এঁরা সাবেক উপাচার্য।

‘জ্ঞানী’ কোঠায় বঙ্গবন্ধু এঁদের মন্ত্রী করেছিলেন। এই তিন জ্ঞানী উপাচার্যও মোশতাক মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। আদর্শবাদী ন্যাপের সৈয়দ আলতাফও। সেদিন হত্যা করা হয় রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ প্রভাবশালী মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবতকে। কারাগারের ভেতর হত্যা করা হয় আরও তিনজন মন্ত্রী এবং সাবেক অর্থমন্ত্রীকেও। মোশতাক মন্ত্রিসভায় যোগদানে অস্বীকৃতি জানিয়ে কারাবন্দী হন আব্দুস সামাদ আজাদ ও কোরবানী আলী- আরও দুজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। ১৫ সদস্যের বাকশাল পলিটব্যুরোর ৪ জনকে হত্যা করা হয়, ৫ জন মুশতাক মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। ১৫ জনের মধ্যে ছয়জন মোশতাকের সঙ্গে যোগ দেন। মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়াদের মধ্যে অন্তত একজন ফনীভূষণ মজুমদারের বিষয়ে কবি জসিমউদ্দীনের সাক্ষ্য পাওয়া যায়- তাঁকে হাসপাতালের কেবিন থেকে সৈনিক দিয়ে টেনে হিঁচড়ে শপথ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। বাকশালের সেক্রেটারী জিল্লুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক গ্রেপ্তার হন।

গ্রেপ্তার হন তোফায়েল আহমদ। জেলা পর্যায়ের অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী সামরিক নির্যাতনের শিকার হন। হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিজের মতো করে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেন যে কাদের সিদ্দিকী, তিনিও বাকশালের একজন জেলা গভর্নর। বাকশালের অপর শরীকদের অবস্থা কী? ন্যাপের সৈয়দ আলতাফ মোশতাক মন্ত্রিসভায় যোগ দিলেন, মোশতাকের পতনের পর আরামসে আবার ন্যাপে ফিরে গেলেন। ন্যাপ ‘ধর্ম, কর্ম, সমাজতন্ত্র’ শ্লোগানে ডুবলো। শক্তিশালী শরীক কমিউনিস্ট পার্টি অফ বাংলাদেশ [সিপিবি] দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়ে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের খালকাটা কর্মসূচিতে যোগ দিলো। মোশতাক, জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েও তারা কিন্তু ভালো। ওই যে ‘ভালো না’ আওয়ামী লীগ, ‘সুশীল ভদ্রলোক জ্ঞানী না’ আওয়ামী লীগ ওই ভাঙ্গাচুরা, ভয়াবহ সময়েও কিন্তু এঁরা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগ বাঁচাতে পারে নেই। কিন্তু আওয়ামী লিগ নিজেও হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হতে প্রবল বিক্রমে ফিরে এসেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি একদিনের জন্যও বিস্মৃত হতে দেয় নেই।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে লড়াই করে প্রাণ দিয়েছে ১০৪ জন, অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছে অসংখ্য জন, শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে নিজের জীবন দিয়ে মানবঢাল রচনা করেছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এই আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। মুক্তিযুদ্ধ, ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগকে দুর্বল করে নেই। বারবার আওয়ামী লীগ ফিরে এসেছে আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে।

লেখক : হাসান মোর্শেদ – মুক্তিযুদ্ধ গবেষক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ