1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তি ও জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে

আর কে চৌধুরী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩

জনশক্তি রপ্তানি আমাদের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। বর্তমান সময়ে দক্ষতার বিকল্প নেই। দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে, তাতে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাতটি আরো শক্তিশালী হবে। অর্থনীতিতে ও সমাজে রেমিট্যান্স ভালো ভূমিকা রাখে। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির লক্ষ্যে সরকার কিছু কাজও করছে।

আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বাস্তবতায় বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। তাই ভালো ও বেশি আয়ের পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম।

দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সঠিক প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বিভিন্ন জেলায় ৩০টি টিটিসি নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। ২০১০ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালে।

কিন্তু দুই দফা সংশোধনী প্রস্তাবের মাধ্যমে ২০১৯ সালে শেষ হয় প্রকল্পটি। প্রকল্প শেষ হওয়ার চার বছরের মাথায় এসে সরকারের প্রকল্প মনিটরিংয়ের প্রতিষ্ঠান আইএমইডি বলছে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটাতে পারছে না। প্রশিক্ষকের অভাব, আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ না হওয়ায় দক্ষ কর্মী তৈরি করতে পারছে না তারা। আইএমইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে টিটিসিগুলোর কিছু অনিয়মও।

কারিগরি শিক্ষা গুরুত্ব পায় যখন সরকার আলাদাভাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড গঠন করে এবং এ শিক্ষার জন্য নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়।

নব্বইয়ের দশকের শেষের দিক থেকে এ শিক্ষা বিশেষ গুরুত্ব পায় এবং ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলে। মেয়েদের কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও আকৃষ্ট করতে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। জেলা ও উপজেলায় ক্রমান্বয়ে স্থাপন করা হয় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, যেখানে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক যুগের চাহিদা ও প্রয়োজনকে সামনে রেখে প্রযুক্তিগত শিক্ষা দেওয়া হয়। এ সময় থেকে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করেছে। এগুলোর কাজ এগিয়ে চলছে। এখানকার চাহিদা মেটানোর জন্যও কারিগরি শিক্ষা ও প্রাথমিক পর্যায়ে কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। যুগোপযোগী শিক্ষা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় সম্পদ ও স্থানীয় মানবসম্পদ ব্যবহারের এক সুযোগ তৈরি হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা কাছাকাছি কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাজ করতে পারবে। বিদেশে শ্রমশক্তির চাহিদা পূরণ করতে পারবে। আঞ্চলিক, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদার প্রেক্ষাপটে কারিগরি শিক্ষার ধরনের মধ্যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। দেশের বাইরের চাহিদার প্রতিও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

আমাদের বিশাল জনশক্তি বাইরের বাজার ধরতে না পারলে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। কাজেই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে টিটিসিগুলোর প্রশিক্ষণ আধুনিক করা হোক। নিয়োগ দেওয়া হোক প্রশিক্ষক।

চাকরি থেকে ব্যবসার ক্ষেতে সব জায়গায় রোবোটিকসের মতো প্রযুক্তি জায়গা করে নিচ্ছে। তৈরি পোশাক শিল্পে এ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে দ্রম্নতগতিতে। তৈরি পোশাক শিল্প বৃহৎভাবে স্বয়ংক্রিয়করণের দিকে ধাবিত হলে এর ব্যাপক প্রভাব দেশের অর্থনীতি, উন্নয়ন, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই দেখা যাবে। প্রথম সম্ভাব্য প্রভাব হলো চাকরি হারানো। তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের একটি বড় উৎস এবং অটোমেশনের দিকে এর স্থানান্তর হলে বর্তমান শিল্পে নিযুক্ত বিশালসংখ্যক শ্রমিক চাকরি হারাতে পারেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাবে চাকরি হারাবেন ২৫ লাখ তৈরি পোশাক কর্মী।

এটি দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি স্বতন্ত্র শ্রমিকদের জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চাকরি হারানো কর্মীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এ কথা সত্য, অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটের ব্যবহারের দিকে পরিবর্তন তৈরি পোশাক খাতে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে; যার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে। জ্ঞানভিত্তিক এ শিল্পবিপ্লবে প্রাকৃতিক সম্পদের চেয়ে দক্ষ মানবসম্পদই হবে বেশি মূল্যবান। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে বিপুল পরিমাণ মানুষ চাকরি হারালেও এর বিপরীতে সৃষ্টি হবে নতুন ধারার নানা কর্মক্ষেত্র। এক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বাংলাদেশের যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা অনুযায়ী, আগামী দুই দশকের মধ্যে মানবজাতির ৪৭ শতাংশ কাজ স্বয়ংক্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে শ্রমনির্ভর এবং অপেক্ষাকৃত কম দক্ষতানির্ভর চাকরি বিলুপ্ত হলেও উচ্চদক্ষতানির্ভর যে নতুন কর্মবাজার সৃষ্টি হবে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুত করে তোলার এখনই সেরা সময়। দক্ষ জনশক্তি প্রস্তুত করা সম্ভব হলে জনমিতিক লভ্যাংশকে কাজে লাগিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল ভোগ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশ থেকে বেশি উপযুক্ত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে আজকের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান শুধু মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক ও সার্বিক জীবনমানের উত্তরণ ঘটিয়েছে। জাপানের প্রাকৃতিক সম্পদ অত্যন্ত নগণ্য এবং আবাদযোগ্য কৃষিজমির পরিমাণ মাত্র ১৫ শতাংশ। জাপান তার সব প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছে জনসংখ্যাকে সুদক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করার মাধ্যমে। জাপানের এ উদাহরণ আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। সুবিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষেও উন্নত অর্থনীতির একটি দেশে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয়।

লেখক: আর কে চৌধুরী – মুক্তিযোদ্ধা সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ