1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন পাশ্চাত্যের জন্য একটি বার্তা

এ কে এম আতিকুর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে তিনি ২২ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন।

আমরা জানি যে বর্তমান ব্রিকস ২০০৬ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন—এই চারটি দেশ নিয়ে ব্রিক নামে গঠিত হয়েছিল। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তির ফলে এটি ব্রিকস নাম ধারণ করে।

পরবর্তী সময়ে সৌদি আরব, ইরান, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, মিসর, বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, সিরিয়াসহ ২২টি দেশ সদস্য হওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জানায়। কিন্তু এত দিনে সংগঠনটির কোনো সম্প্রসারণ ঘটেনি। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা এ বছরের জুন মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বৈঠকে যোগ দেওয়ার ফাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এই গ্রুপে যোগ দিতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানান। ওই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ১৯ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসে যোগদানের জন্য আবেদন করে।

সম্ভবত জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনটি ছিল ব্রিকসের এত বড় পরিসরে আয়োজিত প্রথম শীর্ষ সম্মেলন, যেখানে প্রায় ৭০ জন বিশ্বনেতা একত্র হয়েছিলেন। উপস্থিত নেতারা তাঁদের বক্তব্যে বিশ্বরাজনীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বসম্প্রদায়ের মোকাবেলা করা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব, বাণিজ্য, মুদ্রা পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ ইত্যাদির মতো বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগে (ব্রিকস—আফ্রিকা আউটরিচ ও ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ) ব্রিকসের ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন। তিনি ব্রিকসকে বিশ্বের একটি বহুমুখী বাতিঘর হিসেবে দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া তথাকথিত পছন্দ ও বিভাজনকে ‘না’ বলা উচিত।

সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা-পাল্টানিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে এবং সব ধরনের হুমকি, উসকানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।” তিনি অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে এসে বিশ্বে জনগণের প্রয়োজনীয় পণ্যের প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বিশ্বশান্তি, ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সবাইকে একসঙ্গে অবশ্যই আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও প্রযুক্তির জন্য প্রত্যেকের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং জলবায়ু, ন্যায়বিচার, অভিবাসীদের অধিকার, ডিজিটাল ইক্যুইটি ও ঋণ স্থায়িত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

এ বছর শীর্ষ সম্মেলনের আগে আগে ব্র্রিকস সম্প্রসারণের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত ছিল।

অনেকেই বলেছিলেন যে এই শীর্ষ সম্মেলন ব্রিকস সম্প্রসারণের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আবার কেউ কেউ বলেছিলেন এবার কোনো নতুন সদস্য নেওয়া হবে না। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন যে সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া এখনো চলছে, নতুন সদস্য হওয়ার মানদণ্ড ও পদ্ধতি সম্পর্কে পাঁচ সদস্যের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে। উল্লেখ্য, বেইজিংয়ে গত বছরের শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণায় ব্রিকসের সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার বিষয়টি সদস্যদের মধ্যে আলোচনা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। যাহোক, ২৪ আগস্ট সকালেই নেতাদের মধ্যে বিদ্যমান মতপার্থক্য দূর করে ব্রিকসকে সম্প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান ও সৌদি আরবের মতো ছয়টি দেশকে সম্প্রসারণের প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে ব্রিকসে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে ব্রিকসের বর্তমান চেয়ার প্রেসিডেন্ট রামাফোসা বলেছেন, ‘এই সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায়ে আমাদের ঐকমত্য হয়েছে এবং অন্য পর্যায়গুলোও আসতে থাকবে।’ যাহোক, বাংলাদেশসহ অবশিষ্ট দেশগুলো, যারা সদস্য পদের জন্য আবেদন করেছে, তাদের পরবর্তী  পর্যায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর বাংলাদেশের হতাশ হওয়ার কিছুই নেই, পরবর্তী পর্যায়ে বাংলাদেশ যাতে সদস্য পদ লাভে সমর্থ হয়, সে লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

অবশ্যই ব্রিকসকে এমন একটি সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়, যা পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন যে এই ব্লকে এতসংখ্যক দেশের যোগদানের অর্থ এই নয় যে এই দেশগুলো চীনের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করে ফেলবে বা পশ্চিমের সঙ্গে সহযোগিতার দরজা বন্ধ করে দেবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে এখানে আন্ত ব্রিকস রাজনীতি রয়েছে, যেমন চীন-রাশিয়া বোঝাপড়া বা ভারত-ব্রাজিলের অবস্থান বা চীন ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা, যা ব্রিকসে চীনা প্রভাবের অনুমানকে বাস্তবায়িত হতে দেবে না। তবে ব্রিকস বর্তমানে উত্তর আমেরিকার আধিপত্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তির একটি নতুন বলয় হতে পারে। এটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য তাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণের লক্ষ্যে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে পারে।

যদিও বলা হয় যে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সূত্রপাতের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিকসের গুরুত্ব পুনরুত্থিত হয়েছিল। কারণ বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তাদের নিজস্ব মুদ্রার আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। তবে স্বতন্ত্র মুদ্রাব্যবস্থা চালু করা খুবই জটিল হবে সদস্য দেশগুলোর ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রা থাকার কারণে। এ বিষয়ে সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে ব্রিকস সদস্য দেশগুলো তাদের নিজস্ব মুদ্রায়, যাতে লেনদেন করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যাহোক, এ ব্যাপারে এই শীর্ষ সম্মেলনে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। হয়তো মার্কিন ডলারের তুলনায় অন্যান্য মুদ্রা পরিস্থিতির তীব্রতা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সম্মেলনের ফাঁকে গত ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলেন। শেখ হাসিনা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার গুরুত্ব, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, চীনা ঋণ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। চীনা প্রেসিডেন্ট চীন ও বাংলাদেশকে উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়ার এবং তাদের অর্থনৈতিক পরিপূরকতায় পূর্ণাঙ্গ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তিনি অবকাঠামো, তথ্য-প্রযুক্তি, নতুন জ্বালানি, কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দুই পক্ষকেই এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এ ছাড়া ২৪ আগস্ট শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ব্রাজিল, মোজাম্বিক, তানজানিয়া ও ইরানের প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে। সেসব বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের সব বিষয়, বিশেষ করে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়, যা ওই দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী ও প্রসারিত করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তিনি ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা ভানা রুসেফের সঙ্গেও বৈঠক করেন। তিনি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এনডিবি থেকে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। আমরা জানি যে ব্রিকস এবং অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতিতে অবকাঠামো ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য সম্পদ সংস্থানে ২০১৫ সালে ব্রিকস তার নিজস্ব ঋণ সংস্থা, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক স্থাপন করেছিল। ২০২১ সালে বাংলাদেশ ওই ব্যাংকের সদস্য হয়।

এই সফরের সময় শেখ হাসিনা ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ব্যাবসায়িক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আফ্রিকান ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ওই দিন তিনি আফ্রিকার দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে আয়োজিত সভায়ও যোগ দেন, যেখানে তিনি তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন এবং দেশের স্বার্থে কাজ করার পরামর্শ দেন।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিকসের কলেবর বৃদ্ধির প্রসঙ্গ বাদ দিলেও এত বিপুলসংখ্যক বিশ্বনেতার অংশগ্রহণ বিশ্বকে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোকে আগামী বিশ্ব সমীকরণের গতি-প্রকৃতি উপলব্ধি করতে একটি বার্তা অবশ্যই দেবে।

 লেখক: এ কে এম আতিকুর রহমান – সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব।

সূত্র: কালের কণ্ঠ


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ