1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কেঁচো সার ব্যবহারে ফলন বাড়ে ২৫ ভাগ!

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সরকারি সহায়তা পেলে দেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। এই সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন বাড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এই সার উৎপাদনে সরকারি ভর্তুকি পাওয়া গেলে সার ও ফসলের উৎপাদন বাড়বে। কমবে দাম। কেমিক্যাল সারের আমদানি নির্ভরতা কমবে। চাপ কমবে ডলারে। কৃষি মন্ত্রণালয়, ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

উদ্ভিদ ও প্রাণিজ বিভিন্ন প্রকার জৈববস্তুকে কিছু বিশেষ প্রজাতির কেঁচোর সাহায্যে কম সময়ে জমিতে প্রয়োগের উপযোগী উন্নতমানের জৈবসারে রূপান্তর করাকে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার বলে। দেশের বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্মি কম্পোস্ট বিষয়ে গবেষণা চলছে বলে জানা গেছে। উন্নত মানের ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করতে কেঁচোর দুটি প্রজাতি ইউড্রিলাস ইউজেনি ও আইসেনিয়া ফিটিডা-কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে ইউড্রিলাস ফিটিডার ব্যবহার বেশি। ইউড্রিলাস ইউজেনি কেঁচোর সহনশীলতা বেশি। বিভিন্ন জৈব কীটনাশক যেমন- নিম খোল, মহুয়া খোল, গ্লাইরিসিডিয়া, ইউপাটোরিয়ামের প্রতি অনেক বেশি সহনশীলতা দেখায়। বিভিন্ন ধরনের মাটির সঙ্গে কেঁচোর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয় বলে স্থানীয় মাটিতে কেঁচোর সাহায্যেই জৈবসার তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাইরে থেকে কেঁচো নিয়ে আসার কোনও প্রয়োজন নেই। বড় গর্ত, ট্যাংক বা কংক্রিটের বৃত্তাকার পাত্র-রিং অথবা যে কোনও বড় পাত্রে কেঁচোর প্রজনন ঘটিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন করা যায়।

গবেষণায় জানা গেছে, কৃষিতে কেঁচোসার বা ভার্মি কম্পোস্টের গুরুত্ব অনেক। বিজ্ঞানী চালর্স ডারউইন সর্বপ্রথম কেঁচোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সবাইকে অবগত করিয়েছেন। কেঁচো ভূমির অন্ত্র এবং পৃথিবীর বুকে উর্বর মাটি তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে, যার ওপর ফসল উৎপাদন করা যায়। এ অতি সাধারণ, ক্ষুদ্র প্রাণীটি পচনশীল জৈবপদার্থ থেকে সোনা ফলাতে পারে, কেঁচোসার বা ভার্মি কম্পোস্টে রূপান্তরিত করে। আহার পর্বের পর যে পাচ্য পদার্থ মলরূপে নির্গমন হয় তাকে কাস্ট বলে। এ কাস্টের ভেতর জীবাণু সংখ্যা এবং তার কার্যকলাপ বাড়ার কারণে মাটির উর্বরতা বাড়ে। দেখা গেছে, পারিপার্শ্বিক মাটির তুলনায় কাস্টের মধ্যে জীবাণু সংখ্যা প্রায় হাজার গুণ বেশি। এ কাস্টের ওপরে বিভিন্ন প্রকার উৎসেচক উৎপাদনকারী ব্যাক্টেরিয়া জীবাণু বেশি থাকায় মাটির উর্বরতাও বাড়ে। কাস্টের কারণে মাটি থেকে গাছে ৬ শতাংশ নাইট্রোজেন এবং ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ ফসফরাস যোগ হতে দেখা গেছে। এছাড়াও অন্যান্য উদ্ভিদ খাদ্য উপাদান ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম গাছ বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে পারে। কেঁচোর উপস্থিতিতে জৈবপদার্থের কার্বন ও নাইট্রোজেন অনুপাত প্রায় ২০ বাই ১ এর কাছাকাছি হয়। এ অনুপাতে গাছ সহজেই কম্পোস্ট থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ভার্মি কম্পোস্ট সারে গাছের অত্যাবশ্যকীয় ১৬টি খাদ্য উপাদানের ১০টিই বিদ্যমান। গবেষণায় দেখা গেছে, আদর্শ ভার্মি কম্পোস্টে জৈব পদার্থ ২৮ দশমিক ৩২ ভাগ, নাইট্রোজেন ১ দশমিক ৫৭ ভাগ, ফসফরাস ১ দশমিক ২৬ ভাগ, পটাসিয়াম ২ দশমিক ৬০ ভাগ, ক্যালসিয়াম ২ ভাগ, ম্যাগনেসিয়াম শূন্য দশমিক ৬৬ ভাগ, সালফার শূন্য দশমিক ৭৪ ভাগ, বোরন শূন্য দশমিক শূন্য ৬ ভাগ, আয়রন ৯৭৫ পিপিএম, ম্যাঙ্গানিজ ৭১২ পিপিএম, জিঙ্ক ৪০০ পিপিএম এবং কপার ২০ পিপিএম রয়েছে।

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, মূলত রিং পদ্ধতিতে কেঁচোকম্পোস্ট সার উৎপাদন করা হয়। প্রতিটি রিংয়ের উচ্চতা ৩০ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) এবং ব্যাস ৭৬ দশমিক ২ সেন্টিমিটার (৩০ ইঞ্চি)। প্রতিটি রিংয়ে ৬০ থেকে ৭০ কেজি গোবরে আধা কেজি কেঁচো দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় একটি রিংয়ের ওপর আরেকটি রিং বসিয়ে দেওয়া হয়। এতে গোবর ও কেঁচো দ্বিগুণ হারে লাগে। প্রতি রিংয়ে রিং বাবদ ২০০ টাকা, গোবর বাবদ ১২০ টাকা এবং কেঁচো বাবদ ২৫০ টাকা খরচ হয়। স্থাপনের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মাথায় বিক্রয়ের উপযোগী কেঁচো সার তৈরি হয়। প্রতিটি রিং থেকে ৩০ থেকে ৩৫ কোজি সার পাওয়া যায়।

প্রতি কেজি কেঁচো সার ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ফলে এক মাসে একটি রিং থেকে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং প্রায় আধা কেজি কেঁচো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এভাবে ১৭টি রিং থেকে মাসে সাড়ে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা এবং বছর ঘুরে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। ২৫ শতক আলুর জমিতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি প্রতি শতকে ৩ কেজি হারে কেঁচো সার ব্যবহার করতে হয়। এক শতক জমিতে ১২০ কেজি ফলন হয়। যিনি কেঁচো সার ব্যবহার করেন, তার প্রতিবেশী কৃষকেরা ফলন পান ১০০ কেজির কাছাকাছি। শুধু তাই নয়, কেঁচো সার ব্যবহার করা জমিতে রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব কম হয়।

ব্যবহারের মাত্রা ও ফলনের প্রভাব

ভার্মি কম্পোস্ট সব প্রকার ফসলে যে কোনও সময়ে ব্যবহার করা যায়। সবজি এবং কৃষি জমিতে ৩ থেকে ৪ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টরে ও ফল গাছে গাছ প্রতি ৫ থেকে ১০ কেজি হারে ব্যবহার করা হয়। ফুল বাগানের ক্ষেত্রে ব্যবহারের পরিমাণ ৫০০ থেকে সাড়ে ৭০০ কেজি এক হেক্টর জমিতে। মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কেঁচো সার ব্যবহারে মাঠ ফসলে ফলন শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেড়েছে। সবজিতে ফলন বৃদ্ধিসহ গুণগতমান ও স্বাদ বাড়ে। এমনকি ফল না ধরা অনেক পুরনো ফল গাছে নতুন করে ফল ধরাসহ ফলদ বৃক্ষে দুইগুণ পর্যন্ত ফলন বেড়েছে।

জমির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা বজায় রাখার জন্য জৈব সার ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন এ ব্যাপারে। তাই ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও তার ব্যবহার এক মূল্যবান ভূমিকা পালন করতে চলেছে আগামী দিনগুলোতে- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার জাগো কোচো সার উৎপাদক খামারের স্বত্বাধিকারী বদরুল হায়দার বেপারী জানিয়েছেন, সরকারের কাছে আমরা এই খাতে ভর্তুকি দাবি করছি। আমরা ৫ টাকা ভর্তুকি পেলে সারের দামও ৫ টাকা কমবে। তবে আমরা এই মুহূর্তেও সরকারি কিছু সহায়তা পাচ্ছি। সরকারের দেওয়া বর্তমান সহায়তার মাত্রা আরও কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এটি হলে দেশে কেমিক্যাল সারের ওপর নির্ভরতা কমবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। আমদানি করা সারের ওপর থেকে নির্ভরতা কমবে। অপরদিকে আমাদের কৃষি হবে নিরাপদ। ভালো পুষ্টি পাবো।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কৃষি তথ্য সার্ভিস কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত ভার্মি কস্পোস্টের ওপর সিনেমা শো আয়োজন করছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ