স্কুলের সামনে ডানা মেলে দাঁড়িয়ে আছে একটি বটবৃক্ষ। পাকা স্কুল ভবনের লাগোয়া একটি জরাজীর্ণ মাটির ভবন। নতুন প্রলেপ। নানা রঙের আলপনা। ভেতর সাজিয়ে রাখা হয়েছে কয়েক দশক আগের বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ; যেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে বই, কলম, দোয়াত, ট্রাংক, কুপি, হারিকেন, চিমনি, ঘড়ি, আলমিরা, মগ, পিতল, পাখা, চেরাগদানি, হ্যাজাক লাইট ইত্যাদি।
এমনই এক অভিনব জাদুঘরের দেখা মিললো কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম রামধনপুরে। অর্ধশতবর্ষী মাটির ভবনে গড়ে তোলা এ শিক্ষা জাদুঘরটি বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উদ্বোধন করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিস ঘোষ। স্থানীয়দের দাবি, এটিই দেশের প্রথম কোনো শিক্ষা জাদুঘর।
সূত্রমতে, ১৯৭১ সালে রামধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় বাঁশের বেড়া ও ছনের ছাউনি দিয়ে। মাটির এ ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৯৭৩ সালে। সে থেকে ১৯৯৪ সালে পাকা ভবন নির্মাণের আগ পর্যন্ত পাঠদান হতো এ মাটির ঘরটিতেই। এখানে যারা জ্ঞান অর্জন করেছেন তাদের অনেকেই আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। অনেকেরই নাতি-নাতনি এখন এখানে পড়ালেখা করছে। মাটির ভবনে গড়ে উঠা এ জাদুঘরে উপজেলার ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শিক্ষার নানা উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
জাদুঘরের উদ্যোক্তা সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিস ঘোষ বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় উপজেলার পিছিয়ে পড়া স্কুল খুঁজতে গিয়ে রামধনপুর আসি। এ মুহূর্তে দেশে এ রকম কয়টি মাটির প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন অক্ষত আছে জানি না। প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক ও স্থানীয় ইউপি সদস্যের সমন্বয়ে ৫ সদস্যের সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। সবার সহযোগিতায় এটি সংস্কার করা হয়। সম্ভবত এটি দেশের প্রথম শিক্ষা জাদুঘর। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, পল্লি গ্রামে মাটির ঘর সংরক্ষণ করে শিক্ষা জাদুঘর একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এটি নতুন প্রজন্মকে আগের শিক্ষা উপকরণ সম্পর্কে জানতে সহযোগিতা করবে।
