1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্নসারথি শেখ হাসিনা

এস. এম. রাকিবুল হাসান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্নসারথি শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ। মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামবাংলার ধুলামাটি আর সাধারণ মানুষের সাথে বেড়ে ওঠেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায় আর সফলতার সাথে শেষ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর দেশমাতৃকার ডাকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে ১৬ বছর ধরে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাকে তার পথ থেকে টলাতে পারেনি। গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ১৯৯৬-২০০১ সালে তার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি তার সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বর্তমানে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং মধ্যম আয়ের আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে নিয়োজিত আছে। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

আকাশচুম্বী চ্যালেঞ্জ আর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অগ্রগতির নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করে সাফল্যের এক যুগ পূর্ণ করেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্য নিরাপত্তা, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বিশ্বের মোড়ল দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। জঙ্গিবাদের কারণে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান সংকটে রয়েছে সেখানে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চুড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট এর সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত, প্রবৃদ্ধি ৮.১ শতাংশ, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার মেটাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়া, ৯৪ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় আনা, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, স্বাক্ষরতার হার ৭৩.৯ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোউত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। দেশের চলমান কয়েকটি মেগা প্রজেক্ট ২০২৩ সালের মধ্যে জনগণের জন্য উন্মুক্ত হলে দেশে আরো দ্রুত উন্নয়নের জোয়ার বইবে এবং জনগণের জীবন যাত্রার মান বাড়বে।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক নানান ইস্যুতে তাঁর বিচক্ষণ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবান্বিত করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে ২০০৯ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো ৯৬ দশমিক এক কোটি ডলার আর ২০২১ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। বঙ্গবন্ধুকন্যার সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপগুলো আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ একদিন তাঁর হাত ধরে উন্নয়নের সব ধাপ অতিক্রম করে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে এক কাতারে শামিল হবে। এশিয়া অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তি বৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডাল-১৯৯৯,এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবিশ্বাস্য ও দুর্দান্ত সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের কারণে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে “এজেন্ট অফ চেঞ্জ” এবং “প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যম্পিয়ন” পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। আইসিটি খাতে সরকারের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এগুলো হ’ল “উইটসএ গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯”, “ডিসিডি এপ্যাক এওয়ার্ড-২০১৯” এবং “গভর্নসাইডার ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৯”। ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্যা ল অফ দ্যা সিতে মিয়ানমারের সাথে এবং ২০১৪ সালে জাতিসংঘের ট্রাইব্যুনালে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ে জয়লাভ সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্য। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দ্বারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের সাথে সীমানা খোলার সরকারের সিদ্ধান্তকে বিশ্ব সম্প্রদায় প্রশংসা করেছে। নিঃস্ব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্ত খোলার সাহসী সিদ্ধান্তের স্বীকৃতি হিসাবে শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘চ্যানেল-৪ নিউজ’ ২০১৭ সালে “মানবতার জননী” হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। এই সাফল্যগুলো বঙ্গবন্ধুকন্যাকে, দেশরত্ন থেকে বিশ্বনেতায় রূপান্তর করেছে।
বিভিন্ন সামাজিক সূচকের লক্ষ্য অর্জনে সরকারের সাফল্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শেখ হাসিনার বুদ্ধিমান নেতৃত্বে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমজিডি) নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অর্জিত হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে সরকার কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে।

মার্চ ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউফ এশিয়ান উইমেন। টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতা জন্য তাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে তাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ পুরস্কার প্রদান করেন। এছাড়া, পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকদের জন্য শেখ হাসিনা একজন অনুকরণীয় নেতৃত্ব। দেশী ও বিদেশী নেতাদের কাছে তিনি অবিচল আস্থার মূর্ত প্রতীক ও ভরসাস্থল। তার একাগ্রতা, দৃঢ়তা ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গা চুক্তি, সমুদ্র বিজয়, নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মহাকাশ বিজয়, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা সমুজ্জ্বল হয়েছে।

শুভ জন্মদিন তিমির হননের অভিযাত্রী, বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আপনার চোখ দিয়েই আজও স্বপ্ন দেখে ১৭ কোটি বাঙালি। আপনার কাছে এই জাতি, এই প্রজন্ম থাকবে চিরঋণী। বাংলাদেশের সূবর্ণ যুগের সূচনা আপনার হাত ধরেই।

লেখক : এস. এম. রাকিবুল হাসান – শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ