1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল বাংলাদেশ

এ কে এম আতিকুর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির যে ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিলেন তা অনুসরণ করেই বাংলাদেশ দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আসছে। ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়’, ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ এবং ‘কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা’ হচ্ছে সেই পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক স্তম্ভ। বাংলাদেশ তার বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর এ কারণেই বিশ্বসমাজে, পূর্ব-পশ্চিম বা ডান-বাম সব দেশে বাংলাদেশ আজ এতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, গ্রহণীয় হয়ে উঠেছে।

বিগত কয়েক মাসে বাংলাদেশে যেমন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি প্রতিনিধিদলের সফর হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও বেশ কয়েকটি বিদেশ সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সফরে আসা বিদেশিদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল রয়েছে। বাংলাদেশ থেকেও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া অন্যান্য মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধিদল বিদেশ সফরে গেছে। এসব সফরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ছাড়াও বহুপক্ষীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সফরও ছিল।

এই মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ইন্দোনেশিয়ায় আসিয়ানের এক সভায় অংশ নেন। জুন মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্মেলন, দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে আগস্টে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলন ছাড়াও সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যোগ দেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো ছাড়াও বাংলাদেশ, আফ্রিকান ইউনিয়নের সভাপতি, কমোরস, মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। না বললেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই আমন্ত্রিত হয়।

আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক সমাজে বাংলাদেশের গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রমাণ করে।

সাম্প্রতিক সময়ে অফিশিয়াল লেভেলে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধি এসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ ছাড়া বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘসহ আরো কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসেছে। দেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব সফর অনুষ্ঠিত হওয়ায় অনেকেই বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করে যাচ্ছেন। এমনকি একসময় এসব সফর নিয়ে বিএনপি খুবই উল্লসিত হয়েছিল, যদিও এখন কিছুটা অনুধাবন করতে পেরে অন্যভাবে সান্ত্বনা খুঁজে বেড়াচ্ছে।

আমাদের একটা কথা মনে রাখা আবশ্যক যে দুটি রাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী হয় অংশীদারি এবং উভয় পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ করে উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে। পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতার মাধ্যমে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা ও বিশ্বাসের জন্ম নেয়। এসব আছে বলেই যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক উত্তরোত্তর শক্তিশালী হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেউ অপব্যাখ্যা দিয়ে বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে দুই দেশের সম্পর্কে কোনো ফাটল ধরাতে সক্ষম হবে বলে মনে হয় না। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে উভয় পক্ষকেই সজাগ থাকতে হবে।

করোনা মহামারির ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে ধস নেমেছিল তা থেকে উত্তরণের জন্য যখন বিশ্ববাসী সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছিল, সেই সময় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এক বড় বিপর্যয় ডেকে আনে। এই যুদ্ধ শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বের আপামর জনগণকেই ভোগান্তিতে ফেলেনি, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সমীকরণের সৃষ্টি করেছে। এমনকি দিল্লিতে সদ্যঃসমাপ্ত জি২০ শীর্ষ সম্মেলন ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করলেও ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তির বিষয়ে বিশ্ববাসীকে তেমন কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেনি। চলমান এই সংকটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশকেও যেতে হচ্ছে। এই সংকট খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে বলে মনে হয় না। আসলে বিশ্বরাজনৈতিক অবস্থা নির্ভর করছে মূলত চীন, ভারত, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান অস্থির সম্পর্ক এবং অন্যান্য দেশে তাদের প্রভাব বিস্তারের কৌশলের ওপর। চীন-ভারত, চীন-যুক্তরাষ্ট্র, চীন-রাশিয়া, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র, ভারত-রাশিয়া, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চলমান ও ভবিষ্যৎ অবস্থান শুধু আমাদের অঞ্চলের দেশগুলোর বৈদেশিক সম্পর্কের ওপরই প্রভাব ফেলছে এবং ফেলবে না, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। আসলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের মনোভাবই বিশ্বকে সংকটে ফেলার জন্য যথেষ্ট।

অন্যদিকে আমরা যদি ইন্দো-প্যাসিফিক, বিশেষ করে ভারত মহাসাগরকে ঘিরে চলমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করি, তাহলে বাংলাদেশকে উদ্বিগ্ন হতেই হয়। এ ক্ষেত্রে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপই গ্রহণ করুক না কেন, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তাদের সঙ্গে নেওয়ার প্রয়োজন পড়বেই। আর বাংলাদেশ কোনোভাবেই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিঘ্নিত হতে দেবে না। এ প্রশ্নে বাংলাদেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের সব শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে, সমর্থন করবে। তবে আধিপত্যবাদের ধরন আগের অবয়বে না থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা যে প্রচ্ছন্নভাবে এখনো চলমান, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই সেসব বিবেচনায় নিয়েই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কোনো পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই বাংলাদেশ দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস করি। উল্লেখ্য, ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফরকালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইন্দো-প্যাসিফিকে ফ্রান্সের অংশীদারদের সার্বভৌমত্ব ও কৌশলগত স্বকীয় অবস্থানের ওপর জোর দেন।

প্রতিবেশী দেশগুলোসহ রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। কোনো দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের তেমন জটিল কোনো সমস্যা নেই। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে বলেই যেসব সমস্যা আছে তা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রতিবেশী মিয়ানমারের ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিকের টেকসই ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ সব দেশের সহযোগিতা কামনা করে আসছে। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য চীন ও ভারত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে বাংলাদেশ মনে করে। সম্প্রতি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেন। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব সমস্যা রয়েছে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার পক্ষেই উভয় দেশ। আসলে আন্তরিক হলে জটিল সমস্যাও সহজে সমাধান করা যায়।

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও ২০২৪ সালে যেসব দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তাদের মধ্যে রয়েছে আলজেরিয়া, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। আর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিরাজিত উদ্বেগ বিশ্বকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সে রকমটি হলে যুদ্ধে সম্পৃক্ত দেশগুলো ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলকে নিজেদের উদ্ভূত সমস্যার সম্মিলিত ঝুঁকিকে মোকাবেলা করতে হবে। কোনো দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন বহির্বিশ্বে তার সম্পর্ককেও পরিবর্তন ঘটাতে পারে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

রাজনীতির পথ তা অভ্যন্তরীণ হোক বা আন্তর্জাতিক, কখনোই মসৃণ হয় না, আর সোজা পথেও চলে না। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই সেই পথ নির্ধারণ করতে হয়, চলার উপযুক্ত করতে হয়। আর এই কাজটি অবশ্যই সহজ নয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিদ্যমান বিশ্বরাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার অবস্থানকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে তার পররাষ্ট্রনীতির অনুসরণে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আবহে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বহুমুখী এবং দৃঢ়তর করবে এ প্রত্যাশাই করি।

 লেখক: এ কে এম আতিকুর রহমান – সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব।

সূত্র: কালের কন্ঠ


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ