পাটের বিকল্প আঁশ হিসেবে পরিচিত কেনাফ চাষে আশার আলো দেখছেন খুলনার উপকূলীয় এলাকার কৃষক। চলতি বছর জেলার কয়রা উপজেলায় লবণ সহিষ্ণু জাত হিসেবে পরীক্ষামূলক এ ফসল চাষে মিলেছে সফলতা। জলাবদ্ধতা দূর করতে পারলে আরও সফলতার আশা কৃষি অধিদফতরের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজ তৈরির উপাদান কেনাফ চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করে বড় জায়গায় চাষ করতে পারলে এর অর্থনৈতিক গুরুত্বও বেড়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের গবেষণায় দেখা যায়, অনুর্বর ও লবণাক্ত জমিতে অল্প পরিচর্যা ও স্বল্প খরচে ১১০-১২০ দিনে কেনাফ পরিপূর্ণ হয়, বেঁচে থাকে বন্যার পানিতেও। এ গবেষণার অংশ হিসেবে চলতি বছর কয়রার আমাদি ইউনিয়নে চারটি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে কেনাফ চাষ করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুস সালামের কেনাফ চাষ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না। কৃষি অধিদফতরের সহায়তায় প্রথমবারের মতো এটি চাষ করে বেশ সন্তুষ্ট তিনি।
আব্দুস সালাম বলেন, ‘লবণাক্ততার কারণে আমাদের উপকূলীয় এ অঞ্চলে তেমন একটা ফসল হয় না। তবে কৃষি অফিস থেকে আমাদের বীজ দিয়ে জানানো হয়, এটি চাষ করতে পারলে লাভবান হওয়া যাবে। আমরা তাদের পরিকল্পনা ও দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতিতে কেনাফ চাষ করেছি। স্বল্প পানিতে এটি বেশ ভালোই বড় হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এর ফসল আমরা ঘরে তুলতে পারব।’
তবে জলাবদ্ধতার কারণে কয়েকটি স্থানে কেনাফ সেভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। স্থানীয় আরেক কৃষক বলেন, ‘নদীর পাশ থেকে পানি প্রবেশ করে দীর্ঘদিন জমে থাকায় আমার জমিতে কেনাফের ফলন ভালো হয়নি। অনেক ফসল মারা গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আমাদের সহায়তা করেছে; কিন্তু জলাবদ্ধতা দূর করার ব্যবস্থা নিতে পারলে কেনাফেও ভালো ফল পেতাম।’
এদিকে, কেনাফ চাষে সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও আশাবাদী হয়ে উঠছেন। আমাদি ইউনিয়নের নারায়ণ চন্দ্র বলেন, ‘লবণ পানির কারণে আমরা ফসল ফলাতে পারছি না। এখানে কোন গাছই ঠিকভাবে বেড়ে ওঠে না। তবে যেহেতু অন্যরা কেনাফ চাষে ভালো কিছু করছে, আমিও আগামী বছর আমার মাঠে কেনাফের চাষ করতে চাই। কেনাফ অল্প দিনেই বড় হয়। এর বাজারেও ভালো দাম পাওয়া যায়।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, লবণ সহিঞ্চু এলাকায় কেনাফ চাষ স্থানীয় কৃষি অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।
কেনাফের নানাবিধ গুণ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি দ্রুত বর্ধনশীল একটি ফসল। এর খড়ি দিয়ে কাগজ তৈরি হয়, এর বীজ থেকে ৭-১৩ শতাংশ ঔষধি গুণসম্পন্ন তেল পাওয়া যায়। ফলে এটিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করলে উপকূলীয় এলাকায় সাফল্য মিলতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ এ থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে। তবে এজন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করতে হবে এবং নিয়মিত বীজ সরবরাহ করাসহ অন্যান্য সেবা দিতে হবে।