1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মেনেনডেজ কাণ্ড ও কিছু প্রশ্ন

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

যখন বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য সরকার, বিরোধীদলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ নিয়ে হইচই চলছে ঠিক তখনই হঠাৎ যেন বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো সামনে এলো একটি নাম। বব মেনেনডেজ। যিনি একজন মার্কিন সিনেটর। তাকে সিনেটর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। তাও ঘুষ কেলেঙ্কারিতে। কী সাংঘাতিক!

মোড়লদের প্রভাবিত করার জন্য কী নিপুণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তিনি নানা সময়ে স্যাংশনের দাবি তুলেছেন এবং বাস্তবায়ন করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। রবিবারের ঘটনার পরই গণমাধ্যমের খবরেই বেরিয়ে এলো এই সেই সিনেটর, যিনি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান -র‍্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে স্যাংশন চেয়েছিলেন। এবং তার কথার ভিত্তিতে সেটি বাস্তবায়নের ঘোষণাও এসেছিল। মেনেনডেজ নিউ জার্সির ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর।

সেই ব্যক্তি এবার নিজে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গেলেন। শুরু হয়েছে তোলপাড়। গণমাধ্যমের অনুসন্ধান বলছে, মেনেনডেজের বিরুদ্ধে এটাই প্রথম অভিযোগ নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার অভিযোগের মুখে পড়েছেন। প্রশ্ন হলো, তবে কী বড় ধরনের যত দাবি নিয়ে সিনেটরদের একাট্টা করেছেন, সেসবই লবিস্টদের মাধ্যমে তিনি করেছেন?

কোন পদ্ধতিতে তার কাছ পর্যন্ত সুবিধাভোগীরা পৌঁছেছে এবং পরবর্তীতে তিনি তাদের কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে পেরেছেন–সেসব সংযোগগুলোও উদঘাটিত হবে শিগগির।

২০২১ সালে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অর্থ দফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের এই দিনে মার্কিন অর্থ দফতরের ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস (ওএফএসি) বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে– যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ওই ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হতে শুরু করে।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার জন্য তাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। বাংলাদেশের সেটিই ছিল প্রথম এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা কংগ্রেসম্যান বব মেনেনডেজ এবার নিজেই ফাঁদে। ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেনডেজ পদত্যাগ করেছেন। বব ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তবে কী র‌্যাবের বিষয়েও কোনও গোষ্ঠীর কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে ওই দাবি তুলেছিলেন মেনেনডেজ?

তা না হলে, বাংলাদেশের মতো দেশে র‌্যাব কী করছে সেটা নিয়ে তার বিস্তারিত জানা ও করণীয় নির্ধারণের কারণ কী?

দেখে নেওয়া যাক লবিস্ট কীভাবে কী কাজ করে? যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রণেতাদের কাছে তথ্য তুলে ধরার জন্য একজন লবিস্ট কাজ করে থাকেন। লবিস্টরা কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি কোনও দেশের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রভাব বিস্তার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের তথ্য দিয়ে থাকে। এছাড়াও সাধারণ মানুষের মাঝে প্রভাব বিস্তারের জন্যও তথ্য তুলে ধরা এই লবিস্টদের কাজ। তাদের তৃতীয় পক্ষ নিয়োগ দেয়। এবং কাজের লোকটিকে খুঁজে বের করে তার সঙ্গে লেনদেনের বোঝাপড়া রফা করে লবিস্টরা।

তেমনই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কৌঁসুলিদের অভিযোগ, মেনেনডেজ ও তার স্ত্রী নাদিন আর্সলানিয়ান মিসর সরকারের সহায়তা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কয়েক হাজার ডলার ঘুষ নিয়েছিলেন।

৩৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৮ থেকে ২০২২ মধ্যে, নিউ জার্সির সিনিয়র সিনেটর এবং সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর মেনেনডেজ এবং তার স্ত্রী নাদিন মেনেনডেজ তিন মার্কিন ব্যবসায়ী ওয়ায়েল হানা, জোসে উরিবে ও ফ্রেড ডাইবেসের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সিনেটর মেনেনডেজ ও তার স্ত্রী কয়েক লাখ ডলার ঘুষ নিয়ে এই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা এবং মিসর সরকারকে লাভবান করতে তার ক্ষমতা ও প্রভাব ব্যবহার করেছেন। অভিযোগ করা হয়, হানা, উরিবে ও ডাইবেস নগদ অর্থ, স্বর্ণ, বাড়ির ঋণ পরিশোধ, নাদিন মেনেনডেজের একটি লোক দেখানো চাকরি, মার্সিডিজ বেঞ্জ এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র সিনেটর এবং তার স্ত্রীকে দিয়েছেন।

নিউ ইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ড্যামিয়েন উইলিয়ামস গণমাধ্যমকে জানান, এফবিআইর তদন্তে মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান নিউ জার্সির সিনেটর রবার্ট মেনেনডেজ এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ ডলার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও এই দম্পতি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মেনেনডেজের বিরুদ্ধে এর আগেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেটা ২০১৫ সালের কথা। সেবারও সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল তাকে। ওই সময় ফ্লোরিডার এক চক্ষু চিকিৎসকের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বব মেনেনডেজের বিরুদ্ধে। নিউ জার্সিতে দাফতরিক সুবিধার বিনিময়ে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যক্তিগত ফ্লাইট, প্রচারাভিযানে ‘কন্ট্রিবিউশন’ এবং অন্যান্য ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। কিন্তু ২০১৭ সালে অভিযোগটির বিচার জুরির অভাবে অনিষ্পন্ন থেকে যায়।

এদিকে সেই ২০১৭ সালেই র‍্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের কাজ শুরু হয়। এবং উত্থাপন করেন এই বিতর্কিত সিনেটর ম্যানেনডেজ। সেসময় তার কৃতকর্ম প্রশ্নবিদ্ধ না হলেও এখন এসে কিছু হিসাব নতুন করে দেখা দেয়। এবং তার সম্পৃক্ততার ইঙ্গিতও বহন করে। সেসময় র‍্যাব এবং এর সাত জন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যখন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেই সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বিরোধীদল বিএনপির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশবিরোধী তথ্য তুলে ধরার অভিযোগ করা হয়। তারা মনে করেন, র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকা রয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সেসময় দাবি করেছিলেন, বিএনপি ২০১৭ থেকে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্টের পেছনে সাড়ে ৩৭ লাখ ডলার খরচ করেছে, যা বর্তমান মূল্যে ৩২ কোটি টাকার মতো। ফলে বিএনপির নিয়োগকৃত লবিস্টের মাধ্যমে ম্যানেনডেজ স্যাংশনের দাবি জানানোর জন্য উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন কিনা সেই প্রশ্ন নতুন করে সামনে আসছে। যখন একের পর একে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছেন তিনি, তখন এই প্রশ্নকে অবান্তর বলার কোনও সুযোগ আছে কি?

লেখক: উদিসা ইসলাম – বিশেষ প্রতিনিধি ও কলামিস্ট।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ