1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সামাজিক ঐক্য এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

মনোয়ারুল হক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০২২

২০২৩ সালে অর্থনৈতিক সংকট গভীরভাবে পৃথিবীকে আঁকড়ে ধরবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমনি একটি পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক সমঝোতা, সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি করেছি আমরা। এই ৫০ বছরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যথেষ্ট হয়েছে বলেই আপাতত বলা যায়। সাত কোটি দেশের মানুষ একসময় খাদ্যের সংকট ছিল; অথচ আজ ১৬ কোটি দেশের মানুষেরও তেমন ব্যাপক কোনো খাদ্য সংকট নাই। অর্থনীতির উন্নয়ন গত ৫০ বছরে যতটা সাধিত হয়েছে রাজনৈতিকভাবে, সমাজ উন্নয়ন ঘটেছে কতটুকু?

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষ হওয়ার অল্প কিছু সময় পরই- এ দেশের সংবিধান রচনা করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে সংবিধান কার্যকর করা হয়। তারপর সেই সংবিধানের আওতায় অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সনের নির্বাচন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের জন্ম হয় এসময়ে, ১৯৭৩ সালের নির্বাচন নিয়ে তারা নানান প্রশ্ন তুলেছিল।

নির্বাচনের পরে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৪ সনে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। আন্তর্জাতিক নানান ষড়যন্ত্রের শিকার হয় বাংলাদেশ। তারপর ১৯৭৫ সনের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনের মাধ্যমে এক নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা শুরু করা হয়। যে চতুর্থ সংশোধনীতে সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার ব্যবস্থা এবং গণমাধ্যমের ওপর একটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা হয়। দেশের গণমাধ্যমকে সীমিত করা হয়। সেই সময়ের এই রাজনৈতিক বিবর্তনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

দেশে সামরিক শাসন শুরু হয়। ফেরত আসে সেই পুরনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার খানিকটা। দেশে রাষ্ট্রপতি সরকার ব্যবস্থা কায়েম থাকে। গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হয়। সংসদ কার্যকর করা হয়। কিন্তু, মূল ক্ষমতা থাকে রাষ্ট্রপতির ওপর। এই ব্যবস্থা চলতে থাকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। বাংলাদেশের জন্মের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সামরিক শাসন শুরু হয় এবং সেই শাসন বলা যায় অব্যাহতভাবে ১৯৯০ সন পর্যন্ত কার্যকর ছিল। মাঝখানে ২-১ বছর রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার অধীনে দেশে বেসামরিক শাসন কায়েম ছিল।

১৯৯০ সনে জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দেশের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার অংশ হিসেবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালে দেশের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন সাহেব সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নিয়োগ হয়েছিলেন এই শর্তে যে, তিনি নির্বাচন সম্পন্ন করার পরে আবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে ফেরত যাবেন।

দেশের সামাজিক ঐক্যবদ্ধতার প্রশ্নে- রাজনৈতিক দলসমূহ সে বিষয়ে একমত হয়ে সংবিধান সংশোধন করে, তাকে সেই দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখনও নির্বাচনের সময় নানান সংবিধানিক প্রশ্ন সামনে এসেছিল, কিন্তু সমাজের ঐক্যবদ্ধতার ফলে সেসব বিষয় নিষ্পত্তি হয়ে একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের সরকার ব্যবস্থা কায়েম করা সম্ভব হয়েছিল। যে রাজনৈতিক সমঝোতার ভেতর থেকে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল- তা খুব বেশিদিন টিকে থাকেনি। ১৯৯৪ সালের মাগুরায় অনুষ্ঠিত একটি উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক সমঝোতা ভেঙে পড়ে। শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক। ১৯৯৫ সালের গোড়া থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামক এক নতুন সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে সেই সময়কার বিরোধীদল, বর্তমানের সরকারি দল আওয়ামী লীগ।

তখন সংসদে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও সরকারদলীয় সকল এমপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কোন সুযোগ নাই বলে মত ব্যক্ত করেন। ১৯৯৫ এর মাঝামাঝি সেই আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছিল। ১৯৯৬ এর গোড়াতে ১৫ই ফেব্রুয়ারি দেশের সকল রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতিতে একটি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি সংসদে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান সংশোধন করে বহাল করেছিল। এরপর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে। এবং তার পাঁচ বছরের সময়কাল শেষ করে তখনকার প্রধানমন্ত্রী সংবিধান অনুসারে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। সংবিধান অনুসারে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন- প্রয়াত প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান। লতিফুর রহমানের ক্ষমতায়নের পরপরই তার বেশ কিছু পদক্ষেপে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লতিফুর রহমান সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসা হয়। নির্বাচনে পুনরায় বিএনপি ক্ষমতায় আসে। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও আবার নতুন করে কোনো সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা সৃষ্টি করা হয় না। এবং বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে, দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়েছিল ২০০৪ একুশে আগস্ট। তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ওপর সেই হামলায় অল্পের তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যান। সেই ঘটনাটাকে একটা অতি-নাটকীয় ঘটনায় রূপান্তরিত করে জজ মিয়া নামক একটি চরিত্রের সৃষ্টি করা হয় তখন। তদানীন্তন পুলিশের অভিযোগ নামায় এই জজ মিয়াকেই গ্রেনেড হামলার মূল অভিযুক্ত হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল। যদিও পরবর্তীকালের সেই ঘটনার প্রকৃত সম্পৃক্ততদের খুঁজে পাওয়া যায়।

একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায় এবং সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে বিরোধী দলের সঙ্গে স্বাভাবিক সমঝোতা ভেঙে পড়ে। এবং আবার নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিচারপতিদের বয়স বৃদ্ধি করার মাধ্যমে পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বানানের প্রচেষ্টায়।

বিচারপতি হাসানকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিচারপতি আজিজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার সময় তাকে নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করা হয় এবং দ্বিতীয়বারের মতন সাংবিধানিক পদে শপথ গ্রহণ করেন। একই ব্যক্তি দুটি সাংবিধানিক পদে শপথ নিয়ে থাকতে পারেন কিনা সে বিতর্ক সামনে আসে। পরিণতিতে শেষপর্যন্ত পর্দার অন্তরালে সামরিক শাসন দেশে কায়েম হয় ।

সেই সামরিক শাসনে ফখরুদ্দিন সাহেবকে প্রধান করে দুই বছর ক্ষমতায় থাকে। দুই বছর পরে তাদের ব্যর্থতার ফসল তারা বুঝতে পারে ক্ষমতা ত্যাগ করে এক নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে।

২০১১ সালে বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে আদালত তত্ত্ববধায়ক সরকার বাতিলের পক্ষে রায় দেয়। তবে প্রয়োজনে আরো দু-একটি নির্বাচন করার যেতে পারে বলে মত দেন। এবং সংবিধানের সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার ফলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধন করা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর বলা যায়, ১৯৯১ সালের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই নির্বাচন এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিল সামাজিকভাবে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের কাছে। কিন্তু এরপরের নির্বাচনগুলো কখনোই দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেনি। ২০০৮ নির্বাচনে তেমন কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি; যদিও বিএনপি সেই নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। এরপরে দেশে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো ২০১৩ ও ২০১৮ সালে; দুটি নির্বাচন নিয়েই দেশের অভ্যন্তরে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ভয়াবহ রাজনৈতিক সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়- তাতে দেশে কয়েকশো মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল।

দেশে আবার একটি নির্বাচন আগত। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ নির্বাচন কি হবে ইতিমধ্যেই সে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কয়েক মাস আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তাতে মনে হয়েছিল যে রাজনৈতিক পথেই বোধহয় হাঁটছে দেশ । সরকার প্রধানের গণমাধ্যমের সাথে কথাতে তাই মনে হয়েছিল। কিন্তু সরকারের সেই আহ্বানকে বর্তমানের কথিত বিরোধী শক্তি বিএনপি প্রত্যাখ্যান করে রাজপথের আন্দোলনের ঘোষণা প্রদান করে। এবং এখন সেই রাজপথের আন্দোলনের পথেই তারা এগুচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশে বেশ কয়েকজন মানুষ নিহত হয়েছে এবং দেশে নানা প্রান্তরে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে।

ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধে বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতা লাভ করেছে। আগামী ২০২৩ সালে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকটের আরও তীব্রতা সৃষ্টি হবে বলে বিশ্বের নানান অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করছেন।

এই মুহূর্তে বিশ্বে অদ্ভুত অর্থনৈতিক সংকট চলছে। ডলারের বিপরীতে প্রায় সকল শক্তিশালী মুদ্রা তাদের মান হারিয়েছে। আবার ইউক্রেন যুদ্ধের মূল প্রতিপক্ষ রাশিয়ার রুবলের মান ডলারের বিপরীতে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া পৃথিবীর খাদ্য সরবরাহের অন্যতম শক্তি। পশ্চিমা দেশগুলো জ্বালানি নির্ভরশীল রাশিয়ার ওপর। ২০২৩ সালে অর্থনৈতিক সংকট গভীরভাবে পৃথিবীকে আঁকড়ে ধরবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমনি একটি পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক সমঝোতা, সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মতন একটি জনবহুল বেকারত্বের দেশ, স্বল্প আয়ের দেশ- যেখানে বিপুল জনসংখ্যা কোনোভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে; সেখানে যদি সামাজিক ঐক্যবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়, সামাজিক এই বিতর্কের মাধ্যমে যদি উৎপাদন ব্যবস্থা আবার সেই ১৯৯৬ কিংবা ২০১৪ সালের মতন আক্রান্ত হয়- তাহলে সাধারণ মানুষের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

লেখক: মনোয়ারুল হক – রাজনৈতিক বিশ্লেষক। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ