1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রক্ত সঞ্চালন বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী

সুব্রত বিশ্বাস : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২২

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে পাকিস্তানী কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখেন দুদিন পর ১০ জানুয়ারি। দীর্ঘ কারাভোগের পর শারীরিকভাবে ছিলেন ক্লান্ত এবং কিছুটা অসুস্থ। তৎকালীন IPGMR-এর পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিলেন। সে কারণে স্বদেশে আসার পরও তিনি বেশ কিছুদিন সভা-সমাবেশ থেকে দূরে ছিলেন। এরপর বঙ্গবন্ধু প্রথম যে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন তা হলো আজ থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন IPGMR-এর A ব্লকের দোতলায় কেন্দ্রীয় রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রটির উদ্বোধনে। বর্তমানে যেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া কেন্দ্রীয় রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রটি অর্থাৎ বর্তমানের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগটি ৫০ বছরে পা দিয়েছে, যা নিয়ে আমরা গর্বিত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে বঙ্গবন্ধু প্রথমে যে কথাটি বললেন তা হলো- ডাক্তার নুরুল ইসলাম সাহেব আমাকে বলেছেন, আপনি কোথাও যাবেন না। কোন প্রোগ্রামে এ্যাটেন্ড করবেন না। তাই কোন প্রোগ্রামে আমি এখনও পর্যন্ত এ্যাটেন্ড করি নাই। তার যখন প্রয়োজন, তিনি মনে করেছেন এখানে আসা দরকার, তিনি আমাকে নিয়ে এসেছেন। ডাক্তারের হুকুম আমাকে মানতেই হয়, আমি অসুস্থ যখন। তবুও আমি খুশি আপনাদের সঙ্গে দেখা হলো। যে রক্ত সংরক্ষণ কেন্দ্র আপনারা খুলেছেন এটা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। গবেষণার দিক দিয়ে এর অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে। দেশের অবস্থা সম্পর্কে আপনারা জানেন। আপনাদের অবস্থা কি? স্বাধীনতা সংগ্রামে বিভিন্ন স্তরের লোকজন জীবন দিয়েছেন। এ পর্যন্ত যে নাম আমরা পেয়েছি তাতে ৫০ জন ডাক্তার শহীদ হয়েছেন (পরবর্তীতে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৪)। এতজন ডাক্তার তৈরি করতে কী লাগে তা আপনারা জানেন।

সারা দুনিয়ার ইতিহাসে দেখা যায়, যুদ্ধক্ষেত্রে ডাক্তারদের হত্যা করা হয় না। ডাক্তারদের অন্য একটা মর্যাদা আছে। দুই দেশের যখন যুদ্ধ হয় তখন ডাক্তারদের যদি গ্রেফতার করা হয় তখন তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয় না, তাদের হত্যা করা হয় না। কিন্তু পাকিস্তানী নরপশুরা এত বড় পশু যে, আমার ডাক্তারদের তারা হত্যা করেছে। আমি অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে বলেছি, যে ডাক্তারের লিস্ট পাওয়া গেছে পিজি হাসপাতালের দরজার কাছে এই ডাক্তারদের নামগুলো ইতিহাসস্বরূপ লেখা থাকুক। প্রত্যেক ডাক্তার যেন দেখে যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের দান কতখানি। তাহলে বোধ হয় দেশের জনগণের প্রতি তাদের দরদ বাড়বে।

আমাদের একটা ইনস্টিটিউটের বিশেষ প্রয়োজন ছিল। আমি নিজে অন্যান্য দেশে দেখেছি। আপনারা সেটা করেছেন। এটা নিয়ে জাতি গৌরববোধ করতে পারে। যদি আরও কিছু প্রয়োজন হয় সরকার নিশ্চয়ই সেদিকে নজর রাখবে। কিন্তু শুধু পয়সা দিয়ে কিছু হয় না, সেটা আপনারা বোঝেন। পয়সার সঙ্গে সঙ্গে যেটা দরকার সেটা হলো মানবতাবোধ। আমরা যেন মানবতাবোধ হারিয়ে ফেলেছি। আমি কুমিল্লায় জনসভায় বলেছিলাম, শেখ মুজিবুর রহমানকে বেটে খাওয়ালেও সোনার বাংলা গড়তে পারবেন না। যদি সোনার মানুষ গড়তে না পারেন। আমি যেন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছি আপনাদের কাছে বলতে গেলে যে, যেদিকেই আমি চাই, সেদিকেই যেন দেখি মানুষ এত নিচু হয় কি করে? মানুষ মানুষের পয়সা খায় কি করে? মানুষ গরিব-দুঃখীর কাছ থেকে কি করে লুট করে? আমি বুঝতে পারি না।

এত রক্ত! ৩০ লাখ লোকের জীবন! এত শহীদ! এত মায়ের আর্তনাদ! এত শিশুর আর্তনাদ! এত বাপ-মার ক্রন্দন! দেয়ালে দেয়ালে রক্তের লেখা। রাস্তায় রাস্তায় রক্তের স্বাক্ষর। আর সেইখানে বসে, তাদেরই টাকায় সরকারী কর্মচারীরা যদি পয়সা খায়, তাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, এই দুঃখ বলবার জায়গা কোথায় আছে, আমাকে বুঝায়ে বলেন। আইন দিয়ে তো এইটা করা যায় না। এজন্য মানুষের হৃদয়ের পরিবর্তন দরকার, মনের পরিবর্তন দরকার, মাতবতাবোধ জাগ্রত হওয়া দরকার। বড় ডাক্তার যারা আছেন, যারা স্পেশালিস্ট আছেন, তারা গ্রামের দিকে কেন যেতে চান না? গ্রামে তো শতকরা ৯৫ জন বাস করেন। তারাই তো সম্পদ দিয়ে আমাদের সবকিছু করেছেন।

নতুন নতুন শহর দেখেন, আপনাদের দোতলা অফিস দেখেন, মেডিক্যালের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট দেখেন, যেখানেই যান সবকিছুই তো এই বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের পয়সায়। তাদের দিকে কেন নজর দেবেন না? সাদা পোশাকের কোন লোক দেখলে আপনারা তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেন। আর গরিব, দুঃখী কোন লোক আসলে চিৎকার করে বাইরে বসতে বলেন কেন? এই মনোভাবের পরিবর্তন আনতে হবে। এটা এখন আমাদের জাতীয় চরিত্র হয়ে গেছে।

নার্সিং যেন আমাদের সমাজের জন্য একটা অসম্মানজনক পেশা! আমি বুঝতে পারি না এ সমাজ কিভাবে বাঁচবে। একটা মেয়ে দেশের খাতিরে নার্সের কাজ করছে, তার সম্মান হবে না। আমি ডাক্তার সাহেবদের সঙ্গে পরামর্শ করেছিলাম যে, আপনারা আমাকে একটা কর্মসূচী দেন যাতে গ্র্যাজুয়েট মেয়েরাও এখানে আসতে পারে। তাদের আসতে হবে সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে। আপনারা ডাক্তার যারা আছেন তাদের অনেকেই তো বিদেশে ঘুরে এসেছেন। বিদেশে যা শিখে এসেছেন তা আমাদের দেশে কেন চালু করেন না। এখানে আসলে আপনারা মনে করেন যে, আপনারা বড় ডাক্তার সাহেব হয়ে গেছেন ও নার্সরা কিছুই না। কিন্তু ওখানে ডাক্তার নার্সের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সমীহ করে কথা বলে। ইজ্জতের সঙ্গে কথা বলে। যে কাজই করুক না কেন সে কাজের জন্য তার সম্মান আছে। এছাড়া তিনি ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার এবং সুইপারদের কাজের কথাও উল্লেখ করেন। তাদেরও মানসম্মান দিয়ে সবার কথা বলা উচিত। কারণ সবাই সেবক। সবার সম্মিলিত কাজ ব্যতীত উন্নত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শুধু নিজেদের পেটের তাগিদে তারা কাজ করে না, সমাজের প্রয়োজনেও তারা কাজ করে।

১৯৭২ সালে ‘A’ ব্লকের ২য় তলার জায়গা নিয়ে ‘কেন্দ্রীয় রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রটি শুরু হয়েছিল, যা নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন মোতাবেক চলছে যুগের চাহিদা মোতাবেক। বিভাগটি জরুরী বিধায় শুরু থেকেই বিভাগটির কার্যক্রম দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা চলমান। বিশ্ব করোনা মহামারীর মধ্যেও বিভাগটির কোন কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। রোগীর প্রতি দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকেই বিভাগের সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।

লেখক : সুব্রত বিশ্বাস – সমন্বয়ক, মিডিয়া টু ভাইস-চ্যান্সেলর এবং কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ