1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ডব্লিউএফপি’র আবেদন ও বাংলাদেশে খাদ্য সতর্কতা

আবু তাহের খান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২

‘সামনে মরা কার্তিক: অভাব মোকাবিলার প্রস্তুতি আছেতো’ শিরোনামে অত্র লেখকের একটি লেখা গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে সময় টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়।

মাসখানেক আগের ঐ লেখায় কার্তিকের এ মরা সময়ে বাংলাদেশের দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলোতে খাদ্যপ্রাপ্তি নিয়ে যেসব আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করা হয়েছিল, মাসখানেকের ব্যবধানে আজ সেটাই অনেকটা বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করতে চলেছে। সেসব আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জনগণকে খাদ্য উৎপাদনে অধিকতর উদ্যমী ও এর ব্যবহারে যথেষ্ট সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিতে শুরু করেছেন।

এদিকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) দক্ষিণ মাদাগাস্কার ও সোমালিয়াসহ পৃথিবীর যেসব দেশে (যার অধিকাংশই আফ্রিকা মহাদেশের আওতাধীন) ইতোমধ্যে খাদ্যাভাবজনিত দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেসব দেশের মানুষকে ক্ষুধার হাত থেকে বাঁচাবার জন্য জরুরি মানবিক সহায়তায় আবেদন জানিয়েছে। অন্যদিকে পৃথিবীর অন্যান্য বহুদেশেও ক্রমান্বয়ে খাদ্যসংকট তৈরি হতে পারে বলে তারা তাদের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছে, যে তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে।

অবশ্য ২৩ সেপ্টেম্বরের ওই লেখাটি যদি খুব দ্রুতও ছাপা হতো, তাহলেও এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির তেমন কোনো ইতরবিশেষ হতো বলে মনে হয় না। কারণ গণমাধ্যমের এ জাতীয় প্রস্তাব ও আশঙ্কাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকেরা থোড়াই কেয়ার করেন। বরং এ জাতীয় বক্তব্যকে তারা তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিতেই অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু এখনকার বাস্তব পরিস্থিতি যখন প্রবন্ধে ব্যক্ত সতর্কতাকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে, তখন তারা কী বলবেন জানি না এবং তা জানাটা জরুরিও নয়। তবে যেটা জরুরি তা হচ্ছে, বাংলাদেশকে যাতে ডব্লিউএইচওর আশঙ্কিত খাদ্যসংকটে পড়তে না হয় সেজন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সে লক্ষ্যে সরকারের খাদ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য কতিপয় প্রস্তাব নিচে তুলে ধরা হলো।

এক. আসন্ন বোরো মৌসুমে সম্ভব সর্বোচ্চ পরিমাণ জমিকে আবাদের আওতায় আনার লক্ষ্যে জমি প্রস্তুত, বীজ, সার ও কীটনাশক সংগ্রহকরণ, যথাসময়ে বীজ বপন এবং আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাদি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট চাষিদের এখন থেকেই সচেতন করে তুলতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে এখন থেকেই মাঠে নামা জরুরি বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা জরুরি যে, এ প্রক্রিয়ায় সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি কৃষিউপকরণ সরবরাহের সাথে জড়িত বেসরকারি সংগঠনের সহযোগিতা খুবই জরুরি। আর সে কারণেই এ জাতীয় সংগঠনগুলো যাতে এসব কৃষি উপকরণের কৃত্রিম সরবরাহ সংকট ও অকারণ মূল্যবৃদ্ধি ঘটাতে না পারে সেজন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

দুই. আগামী এক বছরেরজন্য খাদ্যপণ্যের পণ্যওয়ারি মোট চাহিদা ও উৎপাদন ঘাটতি হিসাব করে যেসব পণ্য আমদানি করা জরুরি বলে বিবেচিত হবে, সেসব পণ্য আমদানির জন্য এখন থেকেই দেশওয়ারি ও পণ্যওয়ারি একটি সার্বিক ক্রযপরিকল্পনা প্রণয়ন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর বাণিজ্য উইংয়ের সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি। আর এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবিলম্বে বেসরকারি আমদানিকারকদের সঙ্গে বসে পুরো বিষয়টিকে সার্বিক সমন্বয়ের আওতায় আনতে হবে। অবশ্য বেসরকারি আমদানিকারকদের সাথে বসা মানেই তাদের শুল্ক ছাড় দেয়া নয়, যা এসব বৈঠকে বসে প্রথমেই তারা আবদার করে থাকেন। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, এসব শুল্কছাড় ভোক্তার কোনো উপকারেই আসে না। তাই শুল্ক ছাড় নয়- বরং এলসি খোলা, বন্দরে মালামাল খালাস, বিল পরিশোধ ইত্যাদি কাজগুলো যাতে আমদানিকারকরা সহজে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে পারেন, সেজন্য তাদের সহায়তা করতে হবে। প্রস্তাবিত সভায় আমদানিকারকদের সে আশ্বাস অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে দিতে হবে।

তিন. দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি যেহেতু ভালো নয়, সেহেতু অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য খাদ্যপণ্যের আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। একইভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ ব্যতীত অন্যান্য বিলাসদ্রব্য ও কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত ও প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যদিকে অত্যাবশ্যকীয় কৃষিউপকরণ আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়-নীতির প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং এ বিরত থাকার বিষয়টি জরুরি খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, এ বিরত থাকা সংক্রান্ত সুবিধার সুযোগ নিয়ে এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই যেন বৈদেশিক মুদ্রার কোনোরূপ অপচয় না ঘটে।

চার. আসন্ন আবাদকালীন মৌসুমগুলোতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কৃষকের চাষাধীন ফসলের মাঠ পরিদর্শনের জন্য বাড়তি পরিদর্শন ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, যাতে রোগবালাই বা অন্যকোনোরূপ সমস্যা দেখা দেয়া মাত্রই জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নিরোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। তাছাড়া একই সময়ে ও একই মাঠে কৃষকদের আবাদকালীন বিভিন্ন পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদানের ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাঠকর্মীদেরকে আরও উদ্যোগী ও তৎপর হতে হবে। বাংলাদেশে বোরো ফসলের একটি প্রধান ঝুঁকি এই যে, অনেক সময় ফসল ওঠার আগেই আগাম বন্যা দেখা দেয় এবং তাতে ব্যাপক পরিসরে ফসলহানি ঘটে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কী কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সে ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মী ও কৃষক উভয়কে একসঙ্গে বসে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পাঁচ. বাংলাদেশের কৃষিকাজে আবহাওয়া অধিদফতর যে ব্যাপকভিত্তিক ভূমিকা রাখতে পারতো, সে তুলনায় বর্তমান কার্যক্রম খুবই নগণ্য। বর্তমান সময়ের ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যপরিস্থিতি মোকাবিলায় আবহাওয়া অধিদফতর বর্ধিত ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসলে তা দেশের কৃষিউৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। আশু ব্যবস্থা হিসেবে আগামী এক বছরের খরা, বৃষ্টিপাত ও বন্যার পূর্বাভাস প্রাক্কলন করে তা কৃষকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারের প্রস্তাব করছি। এ ব্যাপারে তারা বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তাও গ্রহণ করতে পারে। মোটকথা চাষাবাদের বিষয়ে কৃষকের জন্য আবহাওয়া অধিদফতরের কাছ থেকে আবহাওয়ার মৌসুমভিত্তিক একটি বর্ষপঞ্জি চাই, যা দেখে কৃষক বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত একটি প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থার আওতায় অগ্রসর হতে পারে।

পরামর্শের তালিকা আরও দীর্ঘ করা যায়। কিন্তু সেটার চেয়েও জরুরি হচ্ছে পরামর্শগুলোকে বাস্তবায়ন করা। এ ব্যাপারে উপরোল্লিখিত দফতরগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কাজে লাগানো যেতে পারে এবং সেটাই হওয়া উচিত মূল কর্মকৌশল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই কাজে লাগানো হচ্ছে না, বরং উল্টো তাদের দুর্বল করে রাখা হয়েছে। সে যাহোক, খাদ্যপরিস্থিতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে যাতে সহসা বড় ধরনের কোনো সংকটে পড়তে না হয়, সে কথা চিন্তায় রেখে উপরে যে প্রস্তাবসমূহ তুলে ধরা হলো, সেসবের কোনোটিও যদি কোনো কাজে তাহলে সেটিই হবে এ লেখার প্রাকারান্তরিক উপযোগ।

লেখক : আবু তাহের খান – পরিচালক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ