1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সাকা-হুকার বাড়িকে ‘রাজাকারের বাড়ি’ ঘোষণা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২

যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সাকা চৌধুরীর চট্টগ্রাম মহানগরীর গুডস হিলের বাড়িকে রাজাকারের বাড়ি এবং রাজাকার হিল ঘোষণা করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে গুডস হিল ঘেরাওকালে বাইরে রাজাকার হিল নামে ব্যানার তোলা হয়। পাশাপাশি বাড়ির বাইরের দেওয়ালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতন কেন্দ্র রাজাকারের বাড়ি লিখে দেওয়া হয়। এসময় আয়োজিত সমাবেশে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তসহ ৫ দফা দাবি জানায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতারা।

পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা কমিটির উদ্যোগে শনিবার সকাল ১০টা থেকে নগরীর জামালখানে ‘গুডস হিল’র’ মূলপ্রবেশ পথ অবরুদ্ধ করে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও কুখ্যাত রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রকাশ সাকা চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক সাহেদ মুরাদ সাকুর সভাপতিত্বে ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও চবির শিক্ষক ড. ওমর ফারুক রাসেল ও জেলা কমিটির সদস্য সচিব কামরুল হুদা পাভেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সরওয়ার আলাম চৌধুরী মনি।

দাবিগুলো হলো- যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের রাজনীতি ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সব সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা, মুক্তিযুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্যাতনের জন্য রাজাকার-আলবদর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গড়ে তোলা সব ‘টর্চার ক্যাম্প’কে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা, জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সব যুদ্ধাপরাধীর তালিকা করে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সাকাপুত্র হুম্মাম কাদেরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের বাড়ির দেয়ালে ‘রাজাকারের বাড়ি’ লিখে দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। সেই বাড়িটি যে পাহাড়ে, সেই গুডস হিলকে ‘রাজাকার হিল’ লিখে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে ব্যানার। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিকামী নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে নিয়ে হত্যা-নির্যাতনের জন্য গড়ে তোলা সেই ‘টর্চার ক্যাম্প’ গুডস্ হিলকে বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া সাকা চৌধুরীকে ‘শহিদ’ উল্লেখ করে তার ছেলে বিএনপি নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরীর (হুকা চৌধুরী) বক্তব্যের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ-সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। সমাবেশ চলাকালেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা গুডস্ হিলের প্রবেশপথের দেয়ালে লিখে দেন— ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতন কেন্দ্র, রাজাকারের বাড়ি’। একই সঙ্গে গাছে টানিয়ে দেওয়া হয়, ‘রাজাকার হিল’ লেখা ব্যানার। সমাবেশ মঞ্চের একপাশে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর প্রতিকৃতি রেখে সেখানে ধিক্কার জানিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য লেখা হয়।

হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে প্রায় চারঘণ্টা ধরে চলা সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীর সন্তান হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের সন্তানদের রাজনীতিতে দেখতে চাই না, রাজাকারের সন্তানদের নির্বাচনে দেখতে চাই না। রাজাকারের বাড়িঘর, সম্পত্তি অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত করা হোক। এজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে আমরা সরকারকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। আগেভাগে বলে দিচ্ছি, সরকার যদি আমাদের দাবি প্রতি কর্ণপাত না করে তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবো।

সমাবেশে সাকা চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অন্যতম সাক্ষী গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার বলেন, ‘একাত্তরে কুখ্যাত রাজাকার ফজলুল কাদের চৌধুরী আর তার কুলাঙ্গার ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়িতে যখন তাণ্ডব চালাচ্ছিল, সেখানকার মানুষ যখন অকথ্য নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল, তখন আমি এ শহরে চন্দনপুরায় গলির মুখে সালাহউদ্দিনের গাড়িতে আক্রমণ করেছিলাম। আমাদের কাছে খবর ছিল, সালাহউদ্দিন কাদের ড্রাইভিং সিটে থাকবেন। সেজন্য ড্রাইভিং সিট লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছিলাম। কিন্তু সে ওই সিটে ছিল না, তবে আহত হয়েছিল। গাড়িচালক মারা গিয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখানে এসেছি। সেদিন যেমন সালাহউদ্দিন কাদেরকে কেউ প্রতিরোধ করতে পারছিল না, আমিসহ কয়েকজন এ শহরে আক্রমণ করেছিলাম, তেমনিভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর কেউ সাক্ষ্য দিচ্ছিল না, আমি গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। নিজের জীবনের নিরাপত্তা, পরিবারের নিরাপত্তা তুচ্ছ করে সাক্ষ্য দিয়েছি।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রাজাকারের ছেলে হুম্মাম কাদের যে বক্তব্য দিয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, এটা ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য বলে আমি মনে করি। তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা আছি, আমাদের বয়স হয়ে গেছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আমাদের সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে।’

মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘হুম্মাম কাদের যুদ্ধাপরাধীর সন্তান। চট্টগ্রামের মাটি সূর্যসেন, প্রীতিলতা, এম এ আজিজ, জহুর আহমেদ চৌধুরী, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মাটি। চট্টগ্রামের মাটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাটি। রাজাকারের ছেলে হুম্মাম যুদ্ধাপরাধীদের শহীদ বলার, জামায়াতের স্লোগান দেওয়ার ধৃষ্টতা কোথায় পেয়েছে? শেখ হাসিনা যুদ্ধারপাধীদের বিচারের কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান আছে। যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীও অনেক বড় বড় কথা বলতো-কিন্তু আইনে তার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নইম উদ্দিন নইম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ কে এম এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর মামলার অন্যতম সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. মশিউর রহমান চৌধুরী।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন— বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল হক চৌধুরী সৈয়দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর উদ্দিন, মো. শাহবুদ্দিন আহমেদ, জামশেদুল আলম চৌধুরী, মোজাহেরুল ইসলাম, শায়দুল আজম শাকিল, জসিম উদ্দিন বাবুল, অধ্যাপিকা শিলা দাসগুপ্ত, মাহবুবুল হক সুমন, এম আর আজিম, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন, কাউন্সিলর শাহিনা আকতার রোজী, তরিকত ফেডারেশনের কাজী মোরশেদ কাদেরী, শরফুদ্দিন চৌধুরী রাজু, রাজিবুল হক সুমন, মেজবাহ উদ্দিন মোরশেদ, হাবিবুর রহমান তারেক প্রমুখ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ