1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আয়কর রিটার্ন : জমা দিন নির্দ্বিধায়-নির্ভয়ে

মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২

বাংলাদেশের নাগরিকের আয়কর ভীতি কাটছে না! কারণ বলতে গেলে অনেক। এক কথায় উত্তর দেওয়া ভার। অনেক অভিযোগ সংযোজন-বিয়োজন করলে দেখা যায় সচেতনতার অভাবই ভীতির মূল কারণ। অনেকে আমার সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। একমত না হওয়ার পেছনে যেমন যুক্তি আছে, তেমনি আমার মতেরও ব্যাখ্যা আছে। দুই পক্ষের মধ্যে একটি যৌক্তিক তর্ক তুলে ধরা যাক। এক পক্ষ পাঠক/করদাতা, অন্যপক্ষ আমি লেখক।

প্রথম পক্ষ করদাতার যুক্তি হলো– আয়কর অফিসে গেলেই মক্কেল এসেছে ভেবে অনেক আইন-কানুনের ভয় দেখানো হয়। স্যার নেই, কাল আসেন, আপনার রিটার্ন ভুল আছে, সঠিক হয়নি, আপনার আয় এত কম দেখিয়েছেন, স্যারের কাছে গেলে ধরবে, আপনার ইটিআইএন খুলেছেন অনেক আগে, রিটার্ন জমা দেন নাই– অনেক টাকা জরিমানা হবে এই কথাগুলো কমন। যেন রাজনীতির মাঠের কিছু মুখস্ত বুলির মতো। এগুলো না বললে কর অফিসের লোকজনের পেটের ভাত হজম হয় না। পিয়ন থেকে সুপারভাইজার বা দুই একজন ডিসিটি পর্যায়ের কর্মকর্তা এই আচরণ করেন। এছাড়া কোনোরকম রিটার্ন জমার প্রাপ্তি স্বীকার নিয়ে আসলেও ভয় কাটছে না। কিছুদিন পর পর ফোন করে দেখা করতে বলা, কখনও কখনও চিঠি দিয়ে বিশাল জরিমানার ভয় দেখানো ইত্যাদি অভিযোগ আছে কর-কর্তাদের বিরুদ্ধে।

করদাতাদের অভিযোগের নানা কারণ বলতে বলতে একজন করদাতা বললেন, কর অফিসের লোকদের সাথে পেরে ওঠা কঠিন! তারা সিন্দুক থেকে আইন বের করে হলেও হয়রানি করার কৌশল আবিষ্কার করে নেয়। যেমনটি যুগ যুগ থেকে করা হতো। ব্রিটিশ শাসন আমলে, স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষে, এমনকি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তান আর্মি ‘পিটুনি কর’র আইন ব্যবস্থা চালু করেছিল। এই পিটুনি করের ব্যবস্থাটি ছিল এই রকম– ‘কোনও বিধি নিষেধ আছে এমন ঘটনা ঘটার ৫০০ গজের মধ্যে থাকলে সবাইকে বেধড়ক পিটুনি তো খেতে হবে এবং পিটুনি খাওয়ার জন্য কর দিতে হবে। শুধু তাই নয় পিটুনি দেওয়ার সময় যদি লাঠি ভেঙে যায় তবে লাঠির জন্যও জরিমানা দিতে হবে!’

কী অবাক করার মতো কর পদ্ধতি! কিন্তু স্বস্তির খবর হলো, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছরেও এনবিআর ‘পিটুনি কর’র কোনও এসআরও দেয়নি। তবে মাঝে মাঝে তালায় জং লাগানো সিন্দুক থেকে কিছু আইনের উদাহরণ দিয়ে ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে করারোপ করার উদাহরণ রয়েছে এনবিআর এর বিরুদ্ধে।

বিপরীতে করদাতাকে ভাবা দরকার, কর কেন দেবো, কীভাবে দেবো, কত টাকা দেবো, এর জন্য বিধি-বিধান কী ইত্যাদি জেনে নেওয়া নাগরিক হিসেবে আমার কর্তব্য। এভাবে না ভেবে আমরা হাঁটি উল্টো পথে। ভাবি, দেখি কিছুটা কম দেওয়া যায় কিনা; বা কর কর্মকর্তাকে বলি, ভাই দেখেন না একটু কম দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। আপনাদের হাতে তো অনেক ফাঁক-ফোকর আছে একটু ব্যবস্থা করেন না। অথবা ধমকের সুরে বলেন, আরে ভাই স্যারের সাথে কথা বলে কমিয়ে দেন, এত টাকা দিতে পারবো না।

অথচ একবারও ভাবেন না এই কথাগুলো বলার কারণে আপনার দুর্বলতার বিষয়টি প্রকাশ করা হচ্ছে করকর্তার কাছে। তখনই এই সুযোগে কিছু দুষ্টু লোক নানা কৌশলে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে। করদাতাকে কিছুটা ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করে এবং নিজেদের পকেট ভারী করার সুযোগটা কাজে লাগায়। এখানেই একজন করদাতার বড় ব্যর্থতা।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, করদাতা যদি সঠিকভাবে তার ফাইল জমা দেন তাহলে কোনও অবস্থায় করদাতাকে হয়রানি করা দূরে থাকুক বরং কেউ হয়রানি করার সুযোগ করলে উল্টো তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় বা হয়েছে। আমার জানা মতে, এমন বহু উদাহরণ আছে- একজন করদাতাকে যথেষ্ট সম্মানের সাথে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছিল আয়কর অফিস থেকে। সমস্যা হলো আমাদের ভালো খবরগুলো প্রকাশ পায় না। কিন্তু মন্দ নিউজগুলি দ্রুত বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে আয়কর অফিসের হয়রানির খবর বেশি বেশি শোনা যায়।

আপনি একজন করদাতা। আপনার যথেষ্ট অধিকার আছে সেবা নেওয়ার। আপনি বুঝতে অসুবিধা হতে পারে, আপনার রিটার্ন ভুল হতে পারে, মনে রাখবেন আপনাকে সহযোগিতা করার জন্যই কর অফিসে যথেষ্ট লোকবল নিয়োজিত রয়েছে।

এখন সেবাটা আদায় করার দায়িত্ব আপনার। আপনি যদি সেবা আদায় করার আগে তাকে ‘নমো নমো’ করতে থাকেন, তাহলে আপনার দুর্বলতার সুযোগটা সে নেবে। অতএব সচেতন হোন এবং নিজের অধিকার নিজে প্রতিষ্ঠা করুন। তাহলে বুঝতে পারবেন ভুলটা আয়কর অফিসের নাকি নিজের।

পরিশিষ্ট: আয়কর আদায়ে কর-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি এখনও বিদ্যমান। এটা অনেকটা চেষ্টা করা হচ্ছে কাটিয়ে ওঠার জন্য। কিন্তু সময় আরও লাগবে। এজন্য করদাতাকে যেমন এগিয়ে আসতে হবে, সরকারকেও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে; একই সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে নাগরিক সেবা প্রদানের মানসিকতা কর-কর্মকর্তাদের মাঝে আসতে হবে। এই ত্রিমুখী ভূমিকাই পারবে রাজস্ব আদায়ে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে।

লেখক : মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন – আয়কর আইনজীবী


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ