1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রনীতি ও কিছু কথা

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৩

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বলতে গেলে দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটু পেছনে তাকাতে হয়। খুব পেছনে গেলে কলেবর বেড়ে যাবে। শুরু করছি বঙ্গবন্ধু থেকেই। বঙ্গবন্ধু শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন। একজন দার্শনিক এবং অসামান্য বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। গ্রীক হেরোডেটাস এর কথা পড়েছি। পড়েছি রোমান সিসেরো। আর ব্রিটিশ গিবন। আর সাক্ষাৎ হলো নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু তাঁদের কাতারেরই একজন। তিনি কিছু প্রশ্নবানে আমাকে জর্জরিত করেছিলেন। আচ্ছা, একটু বলতো কংগ্রেস অব ভিয়েনা সম্মন্ধে। বিসমার্ক নিয়েও কিছু বলো (ওহ বঙ্গবন্ধু আমাকে তুই বলে ডাকতেন)। বললাম, Great question of the time will not be resolved by speeches and majority decisions– those were the great mistakes of 1848 and 1849 – by Iron and Blood? বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ক্রুয়েল আনস্টেটসম্যানলাইক’। আমি বললাম, স্যার হাম্বুরাবী তো আরও কঠিন ছিলো। তার বিচার ছিলো, ‘অ্যান আই ফর অ্যান আই অ্যান্ড আ টুথ ফর আ টুথ’। আচ্ছা, আমি তো ইতালির কাছেই। বলতো একটু রেনেসাঁ সম্বন্ধে। আমি বললাম, স্যার অনেক সময় লাগবে। ভাবি খবর পাঠিয়েছেন। আপনাকে গিয়ে বিশ্রাম করতে হবে। তিনি বললেন, ‘ও আচ্ছা’ বঙ্গবন্ধুর বিশ্রাম ম্যান্ডাটরি।

এর ভেতর শেখ হাসিনা এসেও তাড়া দিলেন। খেতে হবে। এখানে কথা উঠলো রোলেক্স ঘড়ির দাওয়াত বঙ্গবন্ধুর সম্মানে। এখানে একটু ব্যবসায়িক আঙ্গিক ছিলো। ভাবি ও শেখ হাসিনা দু’জনেই বলে উঠলেন, ‘যাওয়া ঠিক হবে না’। এতে সমালোচনা হবে। আমার দিকে তাকালেন বঙ্গবন্ধু। আমিও একমত। ঠিক হবে না। তথাস্থ। এই না যাবার সিদ্ধান্ত একটি বড় দিক নির্দেশনা দেয় এবং শেখ হাসিনার যুগপথ ‘না বলা’ তাঁর একটা আদর্শ বা চিন্তাশীল মনের আভাসও পাওয়া যায়। শেখ হাসিনার ‘না’ বলাটা একটা ফোরশ্যাডোইং আগাম সংকেত পাওয়া যায় তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের। কে জানতো? যখন লন্ডনে জার্মান বোমারু বিমানের মুহুর্মুহু হামলা হচ্ছে, তখন ইন্দিরা গান্ধী ও ফিরোজ গান্ধী জাহাজে ভারত ফিরছিলেন। ডারবানে নামলেন। ভারতীয়দের অবস্থা দেখে ইন্দিরা রাগে ফেটে পড়লেন। বললেন, ‘Indira likened South Africa’s oppression of the Black population to Hitler’s persecution of the Jews. As Christine Toller had observed in London three years earlier, Indira was indeed unafraid of the wind. শেখ হাসিনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তখন থেকেই দেখেছিলোাম। ইন্দিরার মতে ‘Hasina was unafraid of the wind’।

১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় কামাল হোসেন বেলগ্রেডে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু পাঠিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের বিষয়ে আমি জানতাম বেলগ্রেডে কী এজেন্ডা ছিলো। আমি তো ৮ দিন আগেই অক্সফোর্ড থেকে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই ছিলোাম। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দু’জনই কামাল হোসেনকে অনুরোধ করলেন জার্মানিতে আসতে এই ভয়ঙ্কর মুহূর্তে। তিনি তো পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বললেন, তার একটা পূর্ব নির্ধারিত মিটিং আছে। পাঠক আপনাকে বুঝতে হবে কামাল হোসেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। হাসিনা-রেহানার আকুতি। এই সময় শেখ হাসিনার বয়স মাত্র ২৩ বছর। তাঁরা মাতৃহারা-পিতৃহারা অনাথ। একটি মানুষ কতো নিষ্ঠুর, কতো নির্দয় হতে পারে। বর্বরতার পরাকাষ্ঠ। আবার এই মুহূর্তই এক ইতিহাস সৃষ্টি করলো। শেখ হাসিনা একটি নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি হলেন। তাঁর অজান্তেই। সেই রাত, সেই রাতই সৃষ্টি করলো আজকের শেখ হাসিনা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী।

ক্যাথেরীন ফ্রাঙ্কের বইতে আছে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে শেখ হাসিনার ক্ষমতার শীর্ষে উত্থান বেশ সামঞ্জস্য। শেখ হাসিনা ক্ষমতা পাওয়ার সঙ্গে অনেক মিল খুজে পাওয়া যায়, ‘Nothing was less inevitable in modern Indian politics than Indira GandhiÕs rise to power. Yet as often happens in history, once it happened nothing was more decisive.’ It was ‘Bangladesh history’s most crucial accident! (Last sentence adapted) জার্নি অব মেজাইর রুপকথা নয়, এ তো সত্যিই। পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত থেকে তিনজন পন্ডিত আপনার জন্ম তারিখে আশ্চর্য রকমের উপহার নিয়ে হাজির। জানা যায়, সুদূর পূর্ব থেকে তিন রাজপুত্র এসেছিলো আপনার জন্য অপূর্ব অপার্থিব উপহার নিয়ে। তাঁদের নাম ম্যালচিয়র, গ্যাসপার এবং ব্যালথাজার। পূর্বদেশের রাজা দ্যা ফার্স্ট অফারড গোল্ড, অ্যামব্লেম অব লয়াল্টিজ, দ্যা সেকন্ড, ফ্রাঙ্কিনসেন্স, অ্যা টোকেন অব ডিগনিটি অ্যান্ড থার্ড মিরহ, ক্যারিড বাই ব্যালথাজার, ‘দ্যা লর্ড অব ট্রেজারস’।

আমি তো ভুল দেখিনি। আপনার লিডারশিপ কোয়ালিটি আমি লক্ষ্য করেছি জেনেভাতে। বিভিন্ন ঘটনায়। সময়ের ডাকেই আপনি এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর পাশে। দীর্ঘ একুশ বছর। ১৫ আগস্টের পর। ক্ষুধার্ত নেকড়ের দল একুশটি বছর সবকিছু কামড়ে হিছড়ে ছিন্নভিন্ন করছিলো। সামরিক বা আধাসামরিক শাসন। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার চেতনাকে ওরা ভয় পেত। ওরা ভয় পেত ৩০ লক্ষ শহীদের লাল রক্তকে। তাই তড়িঘড়ি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবকিছু হুমড়ে মুছড়ে ফেলার চেষ্টায় ছিলো। যুদ্ধাপরাধীরা দেশকে পাকিস্তানের একটি উপনিবেশ করার তৎপরতা শুরু করল। পাঠ্যপুস্তক বদলালো, পোশাক বদলালো, খাল খননে নতুন কিছু দেখানোর চেষ্টা করলো। ইতালির বিখ্যাত দার্শনিক লেখক অ্যান্টোনিও গ্রামসির ভাষায় ‘The old is dzing and the new cannot be born; in this interregnum there arises a great diversity of morbid symptoms’।

বাংলাদেশে অবশ্য এটি অনেক সময়। আমরাতো গড়তে চাচ্ছি। যা ধ্বংস হয়েছে। গ্যাব্রিয়েল গারসিয়া মারকুয়েজ এর ভাষায়, ‘Generals, Love never dies. Allende and Neruda live. One minute of darkness will not make us blind’। গ্রীক ফিলোসফার প্লেটো বললেন, ‘যে মানুষ গুহার ভিতর বাস করে, গুহা থেকে যখন বাইরের পৃথিবীর আলো দেখে, সে আলো দেখে সে ভয় পায়।’ বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই আলো। তাঁর আলোকে ষড়যন্ত্রকারীরা ভয় করত। ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ওরা নিজেদের লক্ষ্যে পোঁছাতে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিল। নরেন্দ্র মোদি যথার্থই বলেছেন, ‘নিজের পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হারাল, তারপরেও শেখ হাসিনা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে যুক্তির মাধ্যমে দেশে এসে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশকে গড়তে প্রতিজ্ঞা করে কাজ করে যাচ্ছেন।’

বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে চীন-ভারত, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া, চীন-জাপান এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব আর লুকোছাপার বিষয় নয়। বাংলাদেশ এই পাঁচ প্রভাবশালী দেশের সঙ্গে সংহত অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে কৌশলগত সামরিক সহযোগিতারও সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ একটি স্ট্র্যাটেজিক প্লেয়ার হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। এটি যেমন আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ যেমন, বিমস্টেক, বিসিআইএম, বিআরআই, বিবিআইএন এর ক্ষেত্রে সত্য, তেমনিভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। উল্লেখযোগ্যভাবে চীন-ভারত-যুক্তরাষ্ট্রসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসঙ্গ সাধারণ পরিষদ, ন্যামসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় করণীয় বিষয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত করেছেন।

অবাক লাগে আজকে যদি কোন ফেডারেলিস্ট বা তাদের কোন অনুসারী আমেরিকায় থাকতেন তারা কি বলতেন? বিশ্বব্যাংক থেকে একটি প্রতিনিধি দল আসল। তারা আপনাকে বললো অমুক অমুক লোককে সরিয়ে দিতে হবে। তাহলে তারা টাকা দেবে। তারা নাকি দুর্নীতি করেছে। আপনি বললেন, আপনারা প্রমাণ করুন। আমি সরিয়ে দেব। তারা অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু আপনি ঠাণ্ডা মাথায় অবিচল ছিলেন এবং বললেন, আমি বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়ণে পদ্মা সেতু করবো। সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু পৃথিবীর বুকে আজ আমাদের গর্ব। পদ্মা সেতু তৈরিতে বিশ্বব্যাংকের পক্ষপাতদুষ্ট নীতির প্রতি নতি স্বীকার না করে বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্বতন্ত্র স্ট্র্যাটেজিক প্লেয়ার হিসেবে সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ করেছে। আপনার আঞ্চলিক নীতি, আপনার পররাষ্ট্রনীতি পরাশক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সঠিক নীতি এ সবই আপনাকে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে পৃথিবীতে। সঙ্গে আপনি বাংলাদেশকে দিয়েছেন একটি মর্যাদার স্থান। আপনাকে নিয়ে গর্ব করে বাঙালি জাতি। বাঙালি জাতির উন্নতির অগ্রনায়ক আপনি।

লেখক : রাষ্টদূত ওয়ালিউর রহমান – বীর মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট ও গবেষক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ