রাস্তার দুই ধারে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দিনাজপুর খানসামা উপজেলায় কৃষক আলতাফ হোসেন। রাস্তার পাশে পতিত জমিতে গড়ে তোলা আলতাফের পেঁপে বাগান এখন অনেককেই আগ্রহী করে তুলেছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, আলতাফ হোসেন একজন স্মার্ট কৃষক, তিনি জানেন কখন কোন ফসল চাষ করতে হবে।
রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে চাকরির পেছনে না ছুটে আলতাফ কৃষি বিভাগের পরামর্শে শুরু করেন ফল ও সবজির আবাদ। সাড়ে তিন মাস আগে বগুড়া থেকে থাইল্যান্ডের গ্রিন লেডি জাতের ৪০০ পেঁপে চারা সংগ্রহ করে বাড়ির পাশের রাস্তার দু’পাশে রোপণ করেন। উপজেলার জমিদার নগর থেকে বরলাম বাজার যাওয়ার পথে কাঁচা রাস্তার দুই ধারে গাছে ঝুলে থাকা সবুজ পেঁপে দেখে প্রাণ জুড়ায় পথচারীদের।
এলাকার স্কুলছাত্র রাব্বু হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়েই স্কুলে যাই। আলতাফ চাচা সারা দিন পেঁপে গাছের পরিচর্যা করেন। এখন প্রতিটি গাছে পেঁপে ধরেছে, দেখতে ভালো লাগে। পেঁপে গাছগুলো তেমন বড় হয়নি, ছোট ছোট গাছে এত পরিমাণ পেঁপে ঝুলে আছে দেখতেই মন ভালো হয়ে যায়।’
ধনঞ্জয় রায় নামে এক পথচারী বলেন, ‘আমি এই পথ দিয়ে হাট-বাজারে যাতায়াত করি। কিন্তু রাস্তাটি পাকা না হওয়াতে রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত জায়গায় জঙ্গল হয়। আলতাফ সাহেব সেই জঙ্গল পরিষ্কার করে এবার পেঁপে চাষ করেছেন। তিনি অনেক পরিশ্রমী কৃষক। তিনি সবসময় তার জমিতে সময় দিয়ে থাকেন। এবার রাস্তার পাশে সুন্দর পেঁপে গাছ লাগিয়ে রাস্তাটিকে আরও সুন্দর করে তুলেছেন তিনি।’
প্রথম ধাপে প্রতি গাছ থেকে ৫-৭ কেজি করে পেঁপে সংগ্রহ করেছেন কৃষক আলতাফ। গাছ লাগাতে তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তার আশা এ পেঁপে বিক্রি করে ভালো টাকা লাভ হবে। আর আলতাফের সাফল্য দেখে অনেকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন পেঁপে চাষে।
কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই বাবার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করি। পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি জন্য কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের টাকা ডোনেশন চাইলে, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আবাদে মনোনিবেশ করি। কৃষি অফিসারের পরামর্শের জন্য গেলে পেঁপে চাষ করার কথা বলেন। পরে আমি রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত জায়গা থেকে জঙ্গল পরিষ্কার করে পরীক্ষামূলক ৪০০ পেঁপে গাছ রোপণ করি। আল্লাহ রহমতে গাছে বেশ পেঁপে ধরেছে। পেঁপে বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছি। আমার সফলতায় এলাকার অনেকে পেঁপে চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পরামর্শে শুরুতেই গ্রিন ল্যাডি পেঁপে চারা লাগিয়েছিলেন তিনি। বর্ষা মৌসুমে অন্যান্য সবজি কম থাকায় পেঁপের চাহিদা বাড়ে। আলতাফ বিষয়টি মাথায় রেখে এ পেঁপে চাষ করেছেন। এরইমধ্যে বাজারে ভালো মূল্যে বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য আলতাফের মতো কৃষকরা পেঁপে চাষে এগিয়ে আসবেন।’