1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য দরকার ধারাবাহিক সরকার

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩

স্বাধীনতার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন দেশে দারিদ্র্র্যের হার ছিলো প্রায় ৫৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। বর্তমান সরকার কর্তৃক দরিদ্র্য ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু, তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি। যেমন আশ্রয়ণপ্রকল্প, ঘরে ওফরা, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মতো কর্মসূচি দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। কৃষক ও কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণের ফলে দেশ দ্রুত খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করেছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে শেখ হাসিনার সরকার বিএনপি-জামায়াত ও তত্ত্ববাবধায়ক সরকারের আর্থিক ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে এবং সেই সময়কার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এক নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি সুপরিচিত নাম। জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চহার অর্জনের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষার হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদেরই শুধু নয়, অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। মাথাপিছু আয় ১২০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করায় বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে মাথাপিছু আয় ছিলো ৫৪৩ মার্কিন ডলার, ২০২১ সালে তা ২৮১৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিলো ৪১.৫ শতাংশ, বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশে এবং অতিদরিদ্র্যের হার ১০.৫ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের হিসাব মতে, ২০১০ সালে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত কর্মজীবী মানুষের হার ছিলো ৭৩.৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ১০.৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে স্থান দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশের প্রমাণ মেলে তার বার্ষিক আর্থিক পরিকল্পনায়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিএনপি সরকারের শেষ বছরে বাজেটের আকার ছিলো মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। শেখ হাসিনা সরকারের ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ১১ গুণ বেড়ে বাঁড়ায় ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয়। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে।

পদ্মা সেতুর মতো দেশের বৃহত্তর ব্রিজ নিজের টাকায় নির্মাণ করে আত্মবিশ্বাস অনেক ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে, পাবনার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জনের জন্য ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ নামে শতবর্ষের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো সম্পৃক্ত করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম কারণ হলো দেশের বর্তমান স্থিতিশীল রাজনীতি। সুদীর্ঘ ১৩ বছর ধরে সব ঝড়ঝঞ্জা মোকাবিলা করে শক্ত হাতে দেশ চালাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তার যোগ্য ও সুকৌশলী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। অস্থিতিশীলতা একটি জাতিকে কতটুকু পিছিয়ে দিতে পারে, তার বর্তমান উদাহরণ হচ্ছে, আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইয়ামেন ও লেবানন। এদেশগুলোর জনজীবন ও উন্নয়ন এখন বাধাগ্রস্থ।

শান্তি ও স্থিতিশীলতায় ভাটা পড়লে উন্নয়ন ব্যাহত হয়। আমাদের দেশেও এর প্রমাণ রয়েছে। ৭৫- এর নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণে বাংলাদেশ ৩০ বছরের জন্য পিছিয়ে পড়ে। বাংলাদেশ যে চারটি মূল স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, সেই দর্শনের অন্যতম একটি হলো গণতন্ত্র, যা ধ্বংস হয়ে যায় ১৫ আগস্টের ভোরে। গণতন্ত্র হয়ে যায় সামরিক গণতন্ত্র। সেই সঙ্গে মানুষের দোরগোড়ায় গুণগত উন্নত সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার যে ‘জেলায় জেলায় জেলা সরকার’ প্রবর্তন করেন, তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কাঙ্ক্ষিত সুফলটা পাওয়া যায়নি। ফলে জনগণের সব ধরনের সেবা পাওয়ার জন্য এখনো মানুষকে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যদিও বর্তমান সরকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সামরিক শাসন একা চলতে পারে না। যখনই তার সঙ্গে প্রহসনের নির্বাচনের মতো গণতন্ত্রের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়, তখন তা এতোই বিপজ্জনক হয় যে, একটা রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

১৯৭৫- এর পর বাংলাদেশের অবস্থাও হয়ে পড়েছিলো সে রকম। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। বহু বাধা পেরিয়ে আজ বর্তমান অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। যে কোনো সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, এমনকি রাষ্ট্রের উন্নয়নের মূল ভিত্তি হলো স্থিতিশীলতা। সেই স্থিতিশীলতা আসে জনগণের মৌলিক শিক্ষা, দেশপ্রেম, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জরুরি চিকিৎসা সেবা এবং ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যমে। শেখ হাসিনার সরকার এর প্রতিটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন সামনে। স্থিতিশীল রাজনীতি একটি দেশকে কেমন করে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো এশিয়ার অন্যতম দেশ মালয়েশিয়া। ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে দেশটি। মালয়েশিয়া এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ, যার জনসংখ্যা ৩২.৭ মিলিয়ন এবং মাথাপিছু আয় ১২,১৫০ মার্কিন ডলার।

২০২০ সালে উন্নত রাষ্ট্র ঘোষণা করার টার্গেট অর্জন করতে সক্ষম না হলেও ২০৩০ সালে উন্নত রাষ্ট্র ঘোষণা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশটি। মাহাথির মোহাম্মদ যেদিন মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন, সেদিন দেশটি ছিলো বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র। তখন মাথাপিছু আয় ছিলো মাত্র ১৩০ ডলার। জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করতো। মুদ্রাস্ফীতির হার ছিলো ২৫ শতাংশ। শিক্ষিতের হার ছিলো ২০ শতাংশ। কিন্তু দীর্ঘ ২২ বছরের শাসন শেষে মাহাথির যেদিন স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়েন, সেদিন দেশটির মাথাপিছু আয় ছিলো ৩ হাজার ৩৩০ ডলার। শিক্ষিতের হার ৯৯ শতাংশ। পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ বছর, নারীদের ৭৬ বছর।

একটি পক্ষ সব দেশেই থাকে, যাদের কাজ হলো শুধু সমালোচনা করা। কিন্তু উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সবসময় সব সমালোচনা গায়ে মাখলে চলবে না। নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক ররখে দৃঢ়ভাবে পথ চলতে হবে, মাহাথিরের দীর্ঘ শাসন মূলত সেই বিষয়টিই দেখিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। স্থিতিশীল রাজনীতির সুফল ভোগকারী আরেকটি দেশ হলো সিঙ্গাপুর। এশিয়ার ‘চার বাঘ’ খ্যাত ছোট দেশগুলোর একটি সিঙ্গাপুর। বাকি তিনটি দেশ হচ্ছে হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান। সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অর্থনীতির র‌্যাংকিংয়ে সিঙ্গাপুর যুক্তরাষ্ট্র ও হংকংকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিজনেস স্কুল আইএমডির র‌্যাংকিং এমনটা জানাচ্ছে। একেকটি দেশ টেকসই প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং নাগরিকদের কল্যাণ কর্মসূচি বৃদ্ধির পরিবেশ কতোটা নিশ্চিত করতে পারছে, তা বিশ্লেষণ করে এই ক্রম সাজানো হয়ে থাকে। রাংকিংয়ের শীর্ষে সিঙ্গাপুরের উঠে আসার পেছনে দেশটির সরকারের স্থিতিশীলতা, উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক অবকাঠামো, দক্ষ শ্রমিকের প্রাপ্যতা, অনুকূল অভিবাসন আইন এবং নতুন নতুন ব্যবসার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ কাজ করেছে। প্রশ্ন হলো, সিঙ্গাপুরের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি অতি ক্ষুদ্র দেশ, যেখানে কাদা আর সমুদ্রের খোলা আকাশ ছাড়া কিছুই ছিলো না, সেদেশ অর্থনৈতিকভাবে এতোটা উচ্চতায় উঠে এলো কীভাবে?

সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় দলটি হলো পিপলস অ্যাকশন পার্টি। ১৯৫৪ সালে একটি ছাত্রসংগঠন থেকে স্বাধীনতাপন্থি এ দলের জন্ম হয়েছিলো। দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইউ সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি টানা তিন দশক সরকার প্রধান ছিলেন। দীর্ঘ তিন দশকের শাসনামলে নিজের প্রচেষ্টা ও যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে এক প্রজন্মেই সিঙ্গাপুরকে তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্বে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এ কারণে তাকে জাতির স্থপতি বলা হয়। স্থিতিশীল শাসন দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মসৃণভাবে এগিয়ে নিতে পেরেছিলো। যেভাবে লি একক হাতে দেশের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন, তা যদি বারবার হাতবদল হতো, তা কখনোই সম্ভব হতো না হয়তো।

লেখক : এবি সিদ্দিক – সাংবাদিক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ