1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ফ্ল্যাটের মালিক হচ্ছে ৩ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নিঃস্ব উপকূলের অসংখ্য পরিবার। সবকিছু হারিয়ে যাদের ঠাঁই হয়েছিল উপকূলের ঝুপড়ি বসতিতে। সেই জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষগুলো ঝুপড়ি থেকে ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত ৬৫টি ভবনে নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হচ্ছে প্রায় তিন হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর পূর্ব-উত্তর তীরে খুরুশকুল এলাকা। সেখানে অধিগ্রহণ করা ২৫৩ দশমিক ৫৯ একর জমিতে উঠছে ১৩৯টি পাঁচতলা ভবনের বিশেষ ‘খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প’। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প।

এই প্রকল্পের দুই বছর আগে প্রথম ধাপে তৈরি ২০টি ভবনে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে ৬০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের। দ্বিতীয় ধাপে আরও ৩ হাজার পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও ৬৫টি ভবন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঁচতলা প্রতিটি ভবনে ৬৫০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট থাকছে ৩২টি। এক্ষেত্রে ১৩৯টি ভবনে ফ্ল্যাট হবে ৪ হাজার ৪৮৪টি। বিনামূল্যেই এইসব ফ্ল্যাটের মালিক হচ্ছেন জলবায়ু উদ্বাস্তুরা। ফ্ল্যাটের জন্য ২০১১ সালে তালিকাভুক্ত করা হয় ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবারকে।

২০২০ সালের ২৩ জুলাই গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রথম ধাপে তৈরি ২০টি পাঁচতলা ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় প্রায় ৬০০ পরিবারের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করা হয়। ওই চাবিতে লেখা ছিল, ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’। ফ্ল্যাটের যারা মালিক হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই জেলে, শুঁটকি শ্রমিক, রিকশা ও ভ্যানচালক, ভিক্ষুকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

এখন পাঁচতলা আরও ৬৫টি ভবন প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামী অক্টোবর মাসের শেষ নাগাদ ভবনগুলোর কাজ শেষ হলে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়া ও সমিতি পাড়ার আরও ৩ হাজার পরিবারের অন্তত ১০ হাজার অতিদরিদ্র মানুষের ঠাঁই হবে।

দক্ষিণ কুতুবদিয়া পাড়ার বৃদ্ধা হাসিনা বেগম বলেন, ‘খাসজমিতে তৈরি ঝুপড়ি ঘরে দেড় যুগ ধরে পড়ে আছি। সঙ্গে তিন মেয়ে ও এক ছেলে। উপকূলের শুঁটকি মহালে কাজ করে চলে সংসার। এখন বিনামূল্যে ফ্ল্যাটবাড়ি পাব, এই আনন্দে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।’

হাসিনা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। প্রধানমন্ত্রী ঝুপড়ি ঘর থেকে আমাদের বিনামূল্যে ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন। আল্লাহ তাকে দীর্ঘজীবী করুন।’

হাসিনা বেগমের বাড়ি ছিল সাগর দ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেক গ্রামে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে তার বসতভিটা সমুদ্রে বিলীন হয়। তখন জলোচ্ছ্বাসে ভেসে মারা গেছেন স্বামী সৈয়দ আলমসহ পরিবারের তিন সদস্য। এরপর মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে তিনি কুতুবদিয়া থেকে চলে আসেন কক্সবাজার শহরে।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, প্রকল্পটি ঘিরে রোপণ করা হয়েছে শত শত গাছের চারা, নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল সড়ক ও দুটি জেটি। একই সঙ্গে রয়েছে মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও।

সেনাবাহিনীর ৩৪ ইসিবি বিগ্রেডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ আজিজুর রউফ বলেন, প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে ২০টি ভবন নির্মিত হয়েছে। ৬০০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। পুনর্বাসিত পরিবারের জীবিকার সুবিধার্থে আধুনিক শুঁটকি মহাল, জীবনমান উন্নয়নের জন্য ৯৫ একর জায়গার ওপর শেখ হাসিনা টাওয়ার স্থাপন ও তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

তিনি জানান, ফ্ল্যাট হস্তান্তর ও রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধার্থে আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া উপকারভোগীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ফাঁড়ি, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও বাফার জোন স্থাপন করা হবে।

কর্নেল মোহাম্মদ আজিজুর রউফ বলেন, ৬৫ টি ভবনের কাজ শেষ হবে অক্টোবরের শেষ নাগাদ। আমরা পুরো প্রকল্পটি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে যাচ্ছি। আশা করি, নভেম্বরের মধ্যে ৩ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার ফ্ল্যাটে উঠতে পারবেন।

এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। এ সময় প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আফজাল হোসেন। এরপর নির্মিত ভবনগুলো পরিদর্শন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য ১৩৯টি পাঁচতলা ভবনের এত বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প নেই। বিনামূল্যে একেকটি ফ্ল্যাটের মালিক হচ্ছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবং ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজার উপকূলের দরিদ্র মানুষ।’

কক্সবাজারের মানুষের প্রতি শেখ হাসিনার দরদ আছে বলেই খুরুশকুলের এই বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পে ১৩৯টি বহুতল ভবনে ৪৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক সচ্ছলতাও নিশ্চিত করা হবে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ