1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত হতে পারে ওষুধ শিল্প

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃপ্ত প্রত্যয় ও কঠোর পরিশ্রমে অগ্রগতির পথে বাংলাদেশ দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছিলেন, শত ষড়যন্ত্র ও বাধা মোকাবিলা করে আজ তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন তখন সারাদেশে চিকিৎসাব্যবস্থা ছিল বিপর্যস্ত। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির কথা ভেবে বঙ্গবন্ধু কোনো বিলম্ব না করে দেশের বৃহত্তর গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা জাতীয়করণ করেন।

সর্বজনীন সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধের দিকেও নজর দিয়েছিলেন। এজন্য তিনি প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন, যার লক্ষ্য ছিল ক্ষতিকর, অপ্রয়োজনীয় ও বেশি দামি ওষুধ আমদানি বন্ধ এবং ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা। ক্ষতিকর অনেক ওষুধও তিনি বাতিল করেছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি ওষুধের উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে ওষুধ প্রশাসন পরিদফতর গঠন করেন।

বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর মামলা করার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি ওষুধের পেটেন্ট আইন না মানার ঘোষণা দেন। এভাবে তিনি ওষুধ আমদানি নিয়ন্ত্রণে ১৯৭৩ সালে একটি নীতিমালা তৈরি করেছিলেন, যাকে বাংলাদেশের প্রথম ওষুধনীতি বলা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, পরবর্তীকালে ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়নের সময় বিশেষজ্ঞ কমিটি বঙ্গবন্ধুর এসব নীতিমালাকেই ভিত্তি হিসেবে অনুসরণ করেছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পাকিস্তানি আমলের নৈরাজ্য আবার ফিরে আসে। তার থেকে উত্তরণে দুই দশক লেগে যায়। ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো সর্বজনবান্ধব নীতি ও প্রকল্প বাদ দিয়ে দেয়।

ওষুধনীতিরও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ও মূল্যসংক্রান্ত নিয়মের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো হয় ১৯৯৪ সালে বিএনপির শাসনামলে। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এলে স্বাস্থ্য খাত আবার জনবান্ধব হতে থাকে। স্বাস্থ্যকে গণমুখী ও জনবান্ধব করার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৯৮ সালে দরিদ্র মানুষের প্রতি লক্ষ্য রেখে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে একত্র করার ফলে সেবা পাওয়া আরও সহজ হয়। ওষুধের মানসম্মত উৎপাদন ও দেশকে ওষুধে স্বনির্ভর করার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে যে ওষুধ প্রশাসন পরিদফতর গঠন করেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তা অধিদপ্তর করেন।

এছাড়া শেখ হাসিনা সরকার এই অধিদপ্তরটি যাতে তার মান উন্নত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ন্যাশনাল রেগুলেটরি এজেন্সি (এনআরএ)’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্সপেকশন কনভেনশন স্কিমের (পিকস্) স্বীকৃতি পেতে পারে তার জন্য সহযোগিতা দেওয়া শুরু করে।

দেশে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। সেই কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য শিল্প পার্ক স্থাপনের জন্য ওষুধখাতের ক্রমাগত দাবির মুখে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সেই সরকার জমি খোঁজার নামে অনাবশ্যক সময়ক্ষেপণ করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ সালে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার তেতৈতলা গ্রামে এজন্য ২০০ একর জমি চূড়ান্ত করে। ২০১৬ সালে এ জমি উন্নয়নের কাজ সমাপ্ত হয়। এই বিশাল এলাকায় ২৭টি শিল্প ইউনিটকে ৪২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পরিবেশ দূষণের প্রশ্নে ট্যানারি শিল্পের মতো অবস্থা যাতে না হয়, সেজন্য এখন এর বাধ্যতামূলক কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকার এরইমধ্যে এপিআই পার্কে উৎপাদিত কাঁচামাল রফতানিতে ২০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ বা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ওষুধের মান সরকারিভাবে পরীক্ষার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি ওষুধ পরীক্ষাগার রয়েছে, যা কিছুদিন আগে পর্যন্ত উপযুক্তভাবে কার্যকর ছিল না। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে প্রচুর যন্ত্রপাতি অন্তর্ভুক্ত করে এগুলোর আধুনিকায়ন ও উন্নত করা হয়েছে। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এই পরীক্ষাগারগুলো অধিক মাত্রায় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো আমাদের দেশে এমন কিছু কোম্পানি আছে, যারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএসপি গাইডলাইন না মেনে ওষুধ উৎপাদন করছে। এমনকি অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তিগত সুবিধায় তৈরি করতে হয় এমন সব অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিক্যানসার ড্রাগ এবং হরমোন হেলাফেলা করে তৈরি করে যাচ্ছে। নিম্নমানের এসব ওষুধ ব্যবহারের কারণে অসহায় রোগীদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়, ক্যানসারের চিকিৎসার বদলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হিসেবে নতুন নতুন ক্যানসার সৃষ্টি হচ্ছে।

দেশ থেকে নকল-ভেজাল-নিম্নমানের ওষুধ নির্মূলে বর্তমান সরকারের আন্তরিক দৃঢ়তায় করণীয়গুলো চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য ও ওষুধখাতের যথাযথ উন্নয়নে নানাবিধ চেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে নানান ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের চূড়ান্ত নির্দেশে সরকার নিম্নমান, নকল ও ভেজাল ওষুধ নির্মূলে ৬২টি কোম্পানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। সরকারের গৃহীত এসব ইতিবাচক উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম। ফলে দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশের ওষুধখাতের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হয়েছে।

ওষুধখাতে এ সরকারের আমলে আরেকটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো দেশে মডেল ফার্মেসির প্রচলন। এসব ওষুধের দোকানে বিদেশের মতো গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা কাজ করছেন। নকল, ভেজাল, নিম্নমানের, মেয়াদোত্তীর্ণ, চোরাচালানকৃত ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন ওষুধ নিয়ন্ত্রণে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা নিরলস পরিশ্রম করছেন। ফলে রোগীরা ওষুধের ক্ষতি ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছেন।

ওষুধের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য এসব ফার্মেসিতে ওষুধ ঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কেউ নিয়ম না মানলে সেই দোকানদারের মালিককে শাস্তি প্রদানেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এটি যে জনগণের জন্য কী বিশাল উপকার তা ভুক্তভোগী রোগীরা উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত সারাদেশে ৩৪০টি মডেল ফার্মেসি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন লাখ লাখ। সরকার সে লক্ষ্যে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।

গার্মেন্টস শিল্পের পর দেশের ওষুধ শিল্পে বিপ্লব ঘটেছে। দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের তৈরি ওষুধ। আমেরিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে বাংলাদেশের ওষুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ ১৬৬টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে উন্নত, উন্নয়নশীল, স্বল্পোন্নত সব ধরনের দেশ।

এদের মধ্যে এমন দেশও আছে যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতা করেছিল, স্বাধীনতা লাভের পর বছরের পর বছর সর্বক্ষেত্রে অসহযোগিতা করছিল, আমাদের স্বীকৃতি পর্যন্ত দিচ্ছিল না, কিংবা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে আমাদের তাচ্ছিল্য করত। আজ তারাই আমাদের তৈরি ওষুধ খাচ্ছে, আমাদের দেশ থেকে ওষুধ আমদানি করছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ওষুধের এই রফতানি অনেক গুণ বাড়িয়ে সেই অপমানের যোগ্য প্রত্যুত্তর দিতে বাংলাদেশ এখন প্রস্তুত।

এভাবে একসময় বর্তমানের বাংলাদেশের প্রধান ওষুধ খাত গার্মেন্টসকে ছাড়িয়ে দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত হয়ে উঠতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে ওষুধখাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এছাড়া ‘সরকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১১-২০৩০ বাস্তবায়নে কাজ করছে। বর্তমান সরকার দেশে গবেষণা পরিচালনা, কোভিড-১৯ ও অন্যান্য ভ্যাকসিন উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি সহায়তায় গোপালগঞ্জে একটি ভ্যাকসিন উৎপাদন কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে।

সর্বোপরি, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘ওষুধবর্ষ ২০১৮’ এবং ওষুধ শিল্পের উৎপাদিত পণ্যকে বিশ্ব বাজারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কাঁচামালসহ ওষুধকে ২০১৮ সালের জন্য ‘প্রোডাক্ট অফ দি ইয়ার’ ঘোষণা করেছিলেন। ফলে এই খাত আরও প্রেরণা পায়, উদ্দীপিত হয়। পাশাপাশি দেশের মানুষকে ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং দেশীয় ওষুধ শিল্পকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সরকার সম্প্রতি ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ প্রণয়ন করেছে। এছাড়া পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় কম দামে জীবন রক্ষাকারী ওষুধগুলো তৈরি করতে ওষুধের পেটেন্ট আমাদের দেশের ওপর ২০৩২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে না, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন।

লেখক: ড. শিমুল হালদার – সহযোগী অধ্যাপক, ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগ,ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ