1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কৃষিভিত্তিক পর্যটন ও প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতি

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩

বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পারিবারিক স্বনির্ভরতার হাতিয়ার কৃষি ধীরে-ধীরে একটি অনন্য শিল্পে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি এখন দেশের চাহিদা পূরণ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে এসে নোঙর ফেলতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প একটি উদীয়মান সম্ভাবনাময় শিল্প। পর্যটন শিল্পকে পর্যটন নগরী থেকে বের করে যদি বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক এলাকাগুলোয় সম্প্রসারণ করা যায়, তাহলে কৃষি শিল্প পর্যটন শিল্পের হাত ধরে এগিয়ে যেতে সহায়তা পাবে। পর্যটনের উন্নয়নে কৃষিকে সম্পৃক্ত করা এখন শুধু সময় উপযোগী উদ্যোগের দাবি রাখে। কারণ একদিকে যেমন পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ জড়িত; তেমনই দেশের কৃষিজ পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণে পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর মাধ্যমে শুধু পর্যটন কেন্দ্র বা কৃষি ক্ষেত্র সম্প্রসারণ নয়, এটি কৃষিতে জনসাধারণের বিনিয়োগ ও আগ্রহ বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবেও রূপ নিতে পারে। কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও দেশের কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রেও কৃষিভিত্তিক পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশে কৃষিভিত্তিক পর্যটন একটি নতুন ধারণা মনে হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বহুল ব্যবহার শুরু হয়েছে আরও আগে। বিভিন্ন দেশে পর্যটনের সম্প্রসারণে পাশাপাশি কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের পদক্ষেপ চোখে পড়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইউক্রেন, ব্রাজিল, চীন, রাশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পর্তুগাল, নেপাল, জ্যামাইকা, উগান্ডা, আয়ারল্যান্ড, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো উল্লেখযোগ্য। যেমন প্রাচীন মিশরে নীল নদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা কৃষি সভ্যতা এখন বৈশ্বিক পর্যটনের এক অনন্য নিদর্শন। বাংলাদেশের যশোর, বান্দরবানের লামা, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু কৃষি ও পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। কৃষি ও পর্যটন শিল্পের মধ্যে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো একটি শিল্পের ব্যবসায়িক মন্দাভাব থাকলে অন্য শিল্পটি সহায়তা করতে পারে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন নগরীতে বসবাসকারী মানুষ ভ্রমণ ও গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দ একসঙ্গে উপভোগ করার সুবিধা শুধু কৃষিভিত্তিক পর্যটনেই রয়েছে। পর্যটকরা অন্তত ভ্রমণকালীন তাজা এবং জৈব প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত খাদ্য গ্রহণের সুযোগ নিতে পারেন।

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের যে কোনো মৌসুমেই সবুজ আর সজীবতা অসীম। প্রকৃতির সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংমিশ্রণ ও নিবিড়ভাবে মানব মনের সখ্য গড়ে তুলতে কৃষি পর্যটন হতে পারে অন্যতম মাধ্যম। কৃষিভিত্তিক পর্যটন হলো অবকাশ যাপনের এমন এক মাধ্যম, যেখানে খামারগুলোতে আতিথেয়তার পাশাপাশি পণ্য প্রদর্শনীরও আয়োজন করা যেতে পারে। অবকাশকালীন কর্মকাণ্ডের মধ্য থেকে কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান আহরণ, ফল ও সবজি চাষ, ফল ও সবজি ক্রয়, মধু আহরণ এবং স্থানীয় আঞ্চলিক বিভিন্ন পণ্য অথবা হস্তশিল্প সামগ্রীর তৈরি শৈলী দেখা ও কেনার সুযোগ তৈরি হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইন বৈশ্বিক কৃষি পর্যটনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে। ফ্রান্সের প্যারিস থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লাকুলুয়ে দো সারজি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে এক খামার। সেখানে বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি, ফল-মূল, ফুল ও ফসল উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত সব ফসল শহরে বিক্রি করেন স্থানীয় অভিবাসীরা। শহর থেকে অনেক পর্যটকও এখানে আসেন। খামারটি মূলত কৃষিভিত্তিক পর্যটনের ধারণা মাথায় রেখে গড়ে তোলা হয়। এখানে পর্যটকরা ভ্রমণ করেন ইচ্ছামতো, নিজের পছন্দের ফলটি খেতে পারেন, আবার প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রয় করতে পারেন। কৃষি যে কতটা মুগ্ধকর হতে পারে, সে খামারে গিয়ে উপলব্ধি করা যায়। সেখানে আরও রয়েছে রেস্তোরাঁ, বাজার, দোকানপাট ইত্যাদি। খামারটিতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের সহজলভ্য ভ্রমণের সুযোগ এবং প্রকৃতির খোলা দরজা, যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা কৃষি সম্পর্কে জানতে পারে এবং কৃষির জ্ঞানে নিজেদের সমৃদ্ধ করে পর্যটন ও কৃষির সমন্বয়ে এক অভিনব অর্থনৈতিক উন্নয়নের আবির্ভাব ঘটাতে পারে। যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এরূপ কৃষি পর্যটন আমাদের বাংলাদেশেও গড়ে তোলা সম্ভব। এমন কৃষি পর্যটন ক্ষেত্র পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়ও বটে। কারণ প্রতিটি মানুষ প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতেই পরিকল্পিত নগরায়ণের সঙ্গেও কৃষিকে সম্পৃক্ত করে নেয়। ছাদবাগান, পোষাপাখি ও কবুতর পালন এবং চৌবাচ্চায় মাছ চাষ এর অনন্য উদাহরণ।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ এবং শ্রমশক্তির ৬০ শতাংশ কৃষিকে বুকে ধারণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। দেশের জিডিপির প্রায় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ আসে কৃষিক্ষেত্র থেকে। প্রায় ২ কোটি কৃষক খাদ্য সরবরাহের জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী গ্রামগুলোয় বসবাস করছেন। কিন্তু আমাদের জিডিপিতে কৃষির অবস্থা বর্তমানে তেমন আশানুরূপ নয়। তাই বিদ্যমান কৃষিতে অতিরিক্ত উপার্জনমূলক কার্যক্রম যুক্ত করতে পারলে অবশ্যই জিডিপিতে কৃষির অবদান বাড়বে। এক্ষেত্রে কৃষি পর্যটন হতে পারে এমন জাতীয় কার্যক্রমের একটি বিশেষ ক্ষেত্র। আবার বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব পর্যটন বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, যেটা হতাশাজনকও বটে। পর্যটন যেখানে ১০৯টি শিল্পকে সরাসরি প্রভাবিত করে, চালিত রাখে এবং প্রসারিত করে।

একজন পর্যটকের আগমনে সেবা খাতে প্রত্যক্ষভাবে ১১ জন ও পরোক্ষভাবে ৩৩ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ সুযোগকে আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। ফলে পিছিয়ে থাকছে আমাদের দেশের পর্যটন, পিছিয়ে থাকছে আমাদের দেশ। যে পর্যটন শিল্প আমাদের দেশের জাতীয় আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারতো, কিন্তু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উপায় হিসেবে পর্যটন শিল্পকে আমরা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছি বার বার। এর অন্যতম কারণ রাজনৈতিক সদিচ্ছা, পরিকল্পনা ও প্রতিজ্ঞা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের অভাব।

কৃষিভিত্তিক পর্যটনে ব্যক্তিপর্যায়েও আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি। এটা বেকারত্ব দূরীকরণের অন্যতম পন্থা হতে পারে। পর্যটনের সঙ্গে কৃষিকে সম্পৃক্ত করলে একদিকে যেমন পর্যটকেরা ভ্রমণ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন, সেইসঙ্গে কৃষিজ পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণে কৃষি পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কৃষি পর্যটন হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম একটি চমৎকার আয়ের উৎস। কারণ আমাদের আছে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু, আছে উর্বর ভূমি, রয়েছে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সামর্থ। এরই মধ্যে আমাদের দেশে অপরিকল্পিতভাবে কিছু কৃষি পর্যটন গড়ে উঠেছে, যেমন রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগান, দিনাজপুরের লিচু বাগান, স্বরূপকাঠির পেয়ারা বাগান, যশোরের ফুলের বাগান, নরসিংদীর লটকন বাগান, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের হাওরসহ এমন আরও অসংখ্য কৃষি পর্যটন। দেশীয় পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য জায়গাগুলো এরই মধ্যে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রগুলো আরও প্রসারিত ও সমৃদ্ধ করা সম্ভব।

সব শ্রেণিপেশা ও সব বয়সী মানুষের মধ্যেই গ্রাম ও প্রকৃতির প্রতি আলাদা আকর্ষণ থাকে। তাছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে কৃষির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনের স্পৃহা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইট-পাথরের শহর ছেড়ে, যান্ত্রিকতার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সবাই এখন শিকড়মুখী হতে চান। পুকুরে সাঁতার কাটতে, নিজ হাতে মাছ ধরতে এবং নিজ হাতে ফল-ফলাদি আহরণ করারও অন্যরকম আনন্দ রয়েছে। কৃষি পর্যটন এমন ক্ষেত্র, যেটি শান্ত, নিরিবিলি আর সবুজে আচ্ছাদিত একটি জায়গা, যেখানে মানুষ দূষণমুক্ত হাওয়ায় তৃপ্তি সহকারে প্রশান্তি অনুভব করতে পারে। মানুষের জৈব প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত ও বিষমুক্ত কৃষিপণ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কৃষি পর্যটনের বদৌলতে আমরা এমন সুযোগ পেতে পারি। এতে একদিকে যেমন ভোক্তার কাছে কৃষক তার পণ্য বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন, অন্যদিকে ভোক্তাও বিষমুক্ত পণ্য ক্রয় করে জীবনমানের উন্নতি করতে পারেন। সম্প্রতি কৃষি উদ্যোক্তাদের হাতে বা কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের ফলে অনেকে বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ করছেন। তারা অনেকে খামার করছেন নিজেদের বিনোদনের জন্য। নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে এগুলো তারা গড়ে তুলছেন। কিন্তু তারা যদি খামারগুলোয় নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি পর্যটকের জন্য পরিকল্পনা করেন, তাহলে এটি আমাদের দেশের জন্য অন্যতম একটি আয়ের উৎস হবে। এমন উদ্যোগ আমাদের যানজট ও দূষিত কোলাহল থেকে বের হওয়ারও একটি জায়গা হতে পারে। যেসব পরিবার মনে করে যে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাইরে বেড়াতে যাবে, সতেজ শাক-সবজি ও ফল কিনবে, তাদের প্রজন্মকে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত করবে, কৃষিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করবে—তাদের জন্য কৃষিভিত্তিক পর্যটন হবে অন্যতম ক্ষেত্র। এছাড়া আমাদের দেশের কৃষি উদ্যোক্তা ও সরকারি কৃষিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোরও বিপুল বিস্তৃত আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। তারাও এমন পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে পারেন কৃষি পর্যটন খামার। বাণিজ্যিক দিক থেকেও এমন উদ্যোগ অবশ্যই লাভজনক হবে। কৃষি পর্যটন যে প্রতিপাদ্যটির সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট, তা আর বলার বাকি রাখে না। আমরা যদি এ সম্ভবনাময় সুযোগকে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে কৃষি ও কৃষকের অবস্থার যেমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতে পারে, তেমনই পর্যটন শিল্পের গতিও ত্বরান্বিত হবে বহুগুণে।

বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। আমাদের আবহমানকালের গ্রামবাংলা, সংস্কৃতি ও উৎসব অনেক রঙিন এবং অনেক আমোদ-প্রমোদে পরিপূর্ণ। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষিভিত্তিক পর্যটন হতে পারে একটি অন্যতম মাধ্যম, যা সভ্যতার শুধু বিকাশই ঘটাবে না বরং আরও শক্তিশালী করবে। এর ব্যাপক চর্চা হবে আমাদের উদ্যোক্তা মহলে, পর্যটন নির্ভর এলাকায় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে। আমাদের দেশের এই অভাবনীয় সম্পদকে সুপরিকল্পিত কর্ম-কৌশল ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে উপভোগ্য ও সহজতর করতে কৃষিভিত্তিক পর্যটন শিল্পের আরও বিকাশ, প্রসার প্রয়োজন। অমিত সম্ভাবনাময় এ ধরনের পর্যটন শিল্পের আকর্ষণ বিশ্বজনীন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে। এতে অন্য দেশের মতো বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্পে পরিণত করে এ পর্যটন সেবা খাত। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে। কৃষিভিত্তিক পর্যটনকে সাধারণ মানুষের বিনোদনের মূল উৎসে পরিণত করতে প্রকল্পে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আয়োজন ও অভিনব ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন আয়োজন সংযোজন করায় বিনোদনের পাশাপাশি এ প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে নির্ভেজাল উপায়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণ সম্ভব। দেশের শহরাঞ্চলে বসবাসকৃত নাগরিককে বাংলার গ্রাম ও কৃষির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে অপরিসীম ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন- পর্যটকরা নিজেদের সবজি ক্ষেত থেকে তুলে নিয়ে নিজেরা রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা, গাছের চারা রোপণ, ধান লাগানো বিভিন্ন অনুষ্ঠানও এ ক্ষেত্রে যোগ করা যায়।

কৃষিকে আরও বিস্তৃত করার মাধ্যমে একটি কৃষি সাংস্কৃতিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করা, উন্নত জাতের বীজ ও প্রযুক্তি সংগ্রহ ও এর যথাযথ প্রয়োগ, কৃষি বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে বিনিয়োগ লাভজনক ও হালাল করা, কৃষিভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ সহজ করা, উৎপাদিত পণ্য দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যে সহজ ও সুন্দর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে জৈবিক সারের ব্যবহার বৃদ্ধির ব্যাপারে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সচেতনতা তৈরি করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক পর্যটন ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

এমন উৎপাদনমুখী উদ্যোগের সঙ্গে পর্যটকদের নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোও নিশ্চিত করতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে—রাত্রি যাপনের জন্য নাগালের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ বাসস্থান, রেস্তোরাঁ, স্পা, সুইমিং পুল, ইন্টারনেট সুবিধা, এটিএম বুথ, ট্রাইবাল শপ, লন্ড্রি ও ক্লিনিং, প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ২৪ ঘণ্টা রিসিপশন, কনফারেন্স রুম, আইসক্রিম পার্লার ইত্যাদি। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো—পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় বিশেষ পর্যবেক্ষণের সুব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি। কৃষি ও পর্যটন—উভয় শিল্পকে সমন্বয় করে পরস্পর সহযোগিতায় আরও বেশি প্রসার সম্ভব হবে। যার ফলে বিনোদন ও মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে উচ্চতর থেকে একটি বৃহত্তম অর্থনীতির রাষ্ট্রে রূপান্তর হওয়ার পথ আরও সুগম হবে।

লেখক: মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার – লেখক ও কলামিস্ট।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ