1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপির অপরাজনীতি এবং অগ্নিসন্ত্রাস

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩

দেশের অচলাবস্থা সৃষ্টির জন্য পূর্ব থেকেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল জনসমর্থনহীন ও জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপির। তারই অংশ হিসেবে দলটি দেশের অভ্যন্তরে জ্বালাও-পোড়াও করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের নামে সারা দেশে আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে এই সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন কর্মসূচী জনসম্পৃক্ত করে তুলতে না পারা এবং আন্দোলনের জন্য নতুন ইস্যু সৃষ্টির ব্যর্থতায় সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে দলটি। বিএনপির সমাবেশ মানেই জ্বালাও-পোড়াও, তাদের আন্দোলন মানেই আগুন সন্ত্রাস এবং তাদের ঘোষিত হরতাল মানেই এদেশের মানুষের ভোগান্তি। জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ যাদের ইতিহাস তারা কোনদিন সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি করতে পারেনা সেটাই আবার আজকে প্রমাণ করল বিএনপি।

সম্প্রতি ২৮ শে অক্টোবর বিএনপির পূর্ব ঘোষিত মহাসমাবেশকে ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে বিএনপির নেতা-কর্মীদের। এই ঘটনায় প্রাণ হারালেন এক পুলিশকর্মী। কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতিতেই আহত হন তিনি। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই সংঘর্ষে পুলিশের আরও ৪১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর কাকরাইলে একটি নির্মাণাধীন ভবনে পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে ওই ভবনে অভিযান চালিয়ে বিএনপির প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

এদিকে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর কাকরাইল ও নয়াপল্টন এলাকায়। সংঘর্ষ চলাকালে রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে বিকেল ৩ টার দিকে আগুন দিয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেটে এবং বাসভবনে সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপির কর্মীরা ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি আইডিইবি ভবনে আগুন দেন। এদিকে মালিবাগে এসবি অফিসের সামনেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

রাজধানীর কাকরাইলে বিএনপির সন্ত্রাসীরা দুটি নীল পিকআপ ভ্যান আটকে ভাঙচুরসহ একই সময়ে কাকরাইল মোড়ে বৈশাখী পরিবহনের একটি বাসে ভাঙচুর করে। মানিকগঞ্জে হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচোর ও ককটেল বিস্ফোরনের ঘটনায় বিএনপি ও যুবদলের তিন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলা চালিয়ে দলীয় কার্যালয় ভাঙচোর করে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে ও বাহিরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মহাসমাবেশের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে এই এক দিনে বিএনপি যে তান্ডবলীলা দেখিয়েছে তার শেষ এখানেই নয়। তাদের এই আগুন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসমাবেশেরস্থল থেকে রোববার (২৯ অক্টোবর) সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ঘোলাটে করে পিছনের দরজা দিয়ে সরকারের ক্ষমতায় আসীন হতে বিএনপি বরাবরের মতো এই তান্ডব লীলা শুরু করে দিয়েছে।

জনসমর্থনহীন এবং জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপির এই আগুন সন্ত্রাস নতুন কিছু না বরং তাদের অতীত ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। দূর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি কর্মকান্ডের মাধ্যমে ২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনসমর্থন হারিয়ে বিএনপির ভরাডুবি হওয়ার পর থেকেই তারা জ্বালাও-পোড়াও, ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের অপরাজনীতি শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা জ্বালাও-পোড়াও নীতির মাধ্যমে জনগণের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে অতীতের ন্যায় পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত এই কারণেই তারা সবসময়ই জ্বালাও-পোড়াও তথা আগুন সন্ত্রাস করার মাধ্যমে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে নষ্ট করতে চাচ্ছে।

অতীতেও আমরা দেখেছি ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী হরতাল অবরোধের ধারাবাহিকতায় আগুন সন্ত্রাসের অবর্ণনীয় কার্যক্রম। এর ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল দেশের আপামর জনসাধারণ। শিশু ও নারীরাও তাদের এ ভয়াবহ কর্মকান্ড থেকে রক্ষা পায়নি। মানুষের মনে আতঙ্ক ও ভয়ের সৃষ্টি হয়েছিল, একটি অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল জনগণ। জনগণ কখনোই ঐ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাইবে না। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, অসংখ্য মানুষ জ্বালাও পোড়াও রাজনীতির শিকার হয়ে নিহত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হাজার হাজার মানুষ, বিনষ্ট হয়েছে অজস্র সম্পদ। এর দায় বিএনপি স্বীকার না করলেও তাদের উপরেই বর্তায়, কেননা নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্থ করতেই বিএনপি বিভিন্ন জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। তবে এখানে অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো রাজনীতিতে যেখানে বিএনপিকে প্রতিনিয়ত বিচক্ষণ ও কৌশলী হয়ে উঠার কথা সেখানে বিএনপি নিজেরাই এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে নিজেদের উপর অভিযোগ দাখিলের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। তাদের এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ইস্যু রাজনীতিতে বিএনপিকে জনগণ থেকে পালাক্রমে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।

অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোটের এমন জ্বালাও পোড়াও নীতির ফলে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণের জীবনে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রথম আলো পত্রিকার এক প্রতিবেদন থেকে অনুধাবন করা যাক। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ২৭৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে রাষ্ট্রের। এমনকি এই ক্ষতির পরিমাণ পরবর্তীতে বেড়ে গড়ে প্রতিনিদ আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

নাশকতার প্রথম ১৬ দিনে ক্ষতির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৪৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা বছরের দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৩ শতাংশ। সন্ত্রাসের কারণে অভ্যন্তরীণ হিসেবেও প্রতিদিন গড়ে কৃষিখাতে ২৮৮ কোটি, পোল্ট্রি শিল্পে ১৮ কোটি ২৮ লাখ, হিমায়িত খাদ্যে ৮ কোটি, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৩০০ কোটি, পর্যটন শিল্পে ২০০ কোটি, আবাসন খাতে ২৫০ কোটি, শপিং কমপ্লেক্সসসহ দোকানপাট খাতে ১৫০ কোটি, প্লাস্টিক পণ্য খাতে ১৭ কোটি ৮৫ লাখ এবং বীমা খাতে ১৫ কোটি টাকা করে ক্ষতি হয়েছে।

অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে ২৬ হাজার কনটেইনার আটকা পড়ে। ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল সরবরাহ ব্যাহত হয়। বিভিন্ন স্থলবন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাস করতে না পারায় প্রতিদিন তাদের অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। একদিনের অবেরাধের কারণে ৬৯৫ কোটি টাকার পোশাক রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়। প্রাত্যহিক ক্ষতির পরিমাণ ১৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শিল্প কারখানাগুলোতেও সক্ষমতার চেয়ে ২৫ শতাংশ কম উৎপাদন হয়। ফলে প্রতিদিন উৎপাদন কম হয়েছে প্রায় ২১৯ কোটি টাকার।

জ্বালাও-পোড়াও পরিস্থিতির কারণে কৃষিনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষেতের শাক-সবজি তোলার পরেও তা ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেনি কৃষকরা। আবার পচনশীল দ্রব্য হওয়ায় সেগুলো সংরক্ষণ করাও সম্ভব হয়নি। ফলে যেসব স্থানে কৃষিজ পণ্য উৎপাদন হয়, সেখানে পানির দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন কৃষকরা। আবার যানবাহনে পরিবহন করা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায়, যেসব স্থানে ফসল ও সবজি কম উৎপাদন হয়, সেসসব স্থানেও কৃষকরা তাদের পণ্য পৌঁছে দিতে পারেননি। ফলে বাজার ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার অভাব বিএনপি-জামায়াত জোট মনে করেছে এবং এখনো করছে, আর ক’দিন অবরোধ করা গেলেই সরকার উল্টে পড়ে যাবে। কিন্তু তারা এটা লক্ষ করেননি যে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস পরিচালনার জন্য এদের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের মানুষের নিকট কমে গিয়ে বাড়ছে জনবিচ্ছিন্নতা। দেশে-বিদেশে তাদের ভাবমূর্তির দিকেও লক্ষ করেনি তারা। দলটিকে কেবল দেখেছে অনড় একটি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে। এ দল যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বারবার ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে সাব্যস্ত হচ্ছে– রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার মোহে সেদিকেও তাকাননি বিএনপি নেতৃত্ব। জামাতকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাসময় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে বিএনপিকে জঙ্গি উত্থানের দায়ে অভিযুক্ত করেছে এবং আরোও করতে পারে, সেটাও তাদের মাথায় কাজ করছেনা।

অতএব এই মুহূর্তে বিএনপি পূর্বের ন্যায় যে জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন শুরু করেছে এবং আরোও করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তা জনগণ কোনোভাবেই চাচ্ছে না। তাদের মনে রাখা উচিত যে জ্বালাও পোড়াও করে দেশ ও জনগণের ক্ষতি করে কখনো জনসমর্থন আদায় করা যায় না। আর বাংলাদেশের মতো এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনসমর্থনবিহীন কোনো দলের পক্ষে কখনো সরকার পরিচালনায় আসা সম্ভব হবে না। এমতাবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের উচিত দেশ ও দেশের মানুষের ক্ষতির কথা চিন্তা করে জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন বন্ধ করে জনসমর্থন আাদায়ে জনগণের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করা। তারপরও যদি তারা বুঝতে না পারে এই মূহুর্তে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম কেমন হওয়া উচিত তাহলে আমি বলব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শনকে অনুসরণ করা। তাতে যদি বিএনপি নিজেদের অস্তিত্ব সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারে। অন্যথায় বিএনপির এমন জ্বালাও-পোড়াও নীতির ফলে অচিরেই বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস থেকে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হবে।

লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া – ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়; সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটিলিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ