1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মার্কিন উস্কানি ও বিএনপির সহিংস রাজনীতি

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে এখন পর্যন্তবিভিন্নভাবে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে আসছে। বাংলাদেশকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সবক শিখানো সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভুল নীতির মাধ্যমে বিএনপিকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে প্রতিনিয়ত অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দোহায় দিয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ঘোষণা করেছে ভিসা নীতি। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাম্প্রতিক এমন কূটনৈতিক বহির্ভূত কর্মকান্ডে বাংলাদেশের সচেতন জনগণ হতাশ হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতেরাও নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কথা বলছেন যা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ও বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন দেশের জনগণের জন্য অসম্মানজনক। বিএনপিকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের করা সকল কর্মকান্ড ও আচরণ সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী । বিএনপির প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ ও ভুল নীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিএনপি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অতীতের ন্যায় আগুন সন্ত্রাস ও লাশের রাজনীতি শুরু করেছে।

আমরা দেখছি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির ওপর ভরসা করেই বিএনপির চূড়ান্তআন্দোলনের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিজেদের ‘ভগবান’ বলে দাবি করে তার কাছে নিজেদের রক্ষার জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আবেদন এখন সর্বজনবিদিত।আর গণতন্ত্রের নামে বিএনপির চলমান জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন এবং তাদের ভুল নীতি বিএনপির এই আন্দোলনকে উস্কে দিচ্ছে। বিএনপিকে এমন সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে তাদের অবতার পিটার হাস সবসময়ই বিএনপির প্রতি পক্ষপাতমূলক এবং একপেশে আচরণ করে আসছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ভুল নীতি ও পক্ষপাতমূলক আচরণের ওপর ভর করে সম্প্রতি মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মহাসমাবেশের নামে জ্বালাও-পোড়াও এবং আগুন সন্ত্রাস করার মাধ্যমে সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি কর্মীরা শনিবার রাজধানীতে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তারা বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে দিনভর তান্ডব চালিয়েছে। তাদের হামলায় নিহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্য এবং আহত হয়েছেন ৪১ জন। হামলায় পুলিশ ছাড়াও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন শতাধিক। এ সময় কাকরাইল, পল্টন, রাজারবাগ, বিজয়নগরসহ আশপাশের এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুপুরের পর থেকে শুরু হয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষের মাধ্যমে সেটা শেষ হয় সন্ধ্যায়। বিকেলে এক ঘণ্টার ব্যবধানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ তিনটি বাসে আগুন দেয় বিএনপি সংগঠনের সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা।

শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক পদবীর অধিকারী প্রধান বিচারপতির বাস ভবনেও ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ও জাজেজ কমপ্লেক্সে আগুন দেয় তারা। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ও আইডিইবি ভবনের গাড়িতে আগুন এবং ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ বক্স ভাঙচুর ছাড়াও খিলগাঁও বিশ্বরোড, কাকরাইল, রমনা পার্ক সংলগ্ন এলাকা, মগবাজার, মৌচাক ফ্লাইওভারের ওপরে, কমলাপুর রেল স্টেশন এলাকায় একাধিক বাস, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। আগুন দেয়া হয় শাহজাহানপুরে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতেও। তাদের হামলায় ও মারধরে ২১ জন গণমাধ্যমকর্মীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।গুরুতর আহত বেশ কয়েকজনকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিতে হয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্তপুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের থেমে থেমে সংঘর্ষে পল্টন, কাকরাইল, বিজয় নগর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সমাবেশ শেষ হওয়ার পরও বেশ কয়েক জায়গায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর চালিয়েছে বিএনপি সন্ত্রাসীরা। আওয়ামী লীগের একটি মিছিলেও বিএনপি সন্ত্রাসীরা হামলা করে। শুধু হামলা করেই বিএনপি ক্ষান্তহয়নি, তারা একাধিক বাস, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সমাবেশে তারা লাঠি এনেছিল। আইডিইবি’র তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজকে যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের গান গায়ছে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কিন্তু তাদের নীতি ছিলো একেবারেই অগণতান্ত্রিক এবং প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্তপর্যায়ে (১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত) যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে অবতীর্ণ হয়। স্বৈরাচারী পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ যখন স্বাধীনতা সংগ্রামে নিয়োজিত তখন মার্কিন প্রশাসন কী নীতি গ্রহণ করেছিল এবং তা বাস্তবায়নে কী ভূমিকা পালন করেছিল তা সর্বজনবিদিত। এটি একটি অবিসংবাদিত সত্য যে, আমেরিকার কেন্দ্রীয় প্রশাসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্নেই পাকিস্তানের সপক্ষে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে তার নীতি ঘোষণা করেছিল এবং বর্তমানেও তার ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। তারা গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের জনগণের সমর্থনে কখনো এগিয়ে আসেনি। তারা তখন দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তানের অখণ্ডতার নামে স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা অগণতান্ত্রিক শক্তির সপক্ষে। আর এখন তারা বাংলাদেশের বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের শিকার গণতন্ত্রমনা অসহায় জনগোষ্ঠীর পাশে না দাঁড়িয়ে বরং বিএনপিকে এই ধরনের জ্বালাও-পোড়াও এর অপরাজনীতি চালিয়ে যেতে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি) বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এমন একটি রাজনৈতিক দল যেটা জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্তআঁতাত এবং ষড়যন্ত্রের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ষড়যন্ত্র করে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে উৎপত্তি হয় এই বিএনপি নামক দলটির। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের একজন জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামে একটি রাজনৈতিক এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশকে ছায়া পাকিস্তান বানানোর যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীরা দেখেছিলেন তার এজেন্ডা বাস্তবায়নেই পরবর্তীতে কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি। যেমন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় তেমনি ষড়যন্ত্রকে ভিত্তি করেই বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া এই দলের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন যুগের পর যুগ। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কখনোই এই দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড জনগণের সমর্থন নিয়ে হয়নি এবং তারা জনগণের শক্তি এবং গণতন্ত্রে কখনো বিশ্বাসী নয়। আঁতাত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি অপশক্তির ওপর ভর করে বিএনপি সহিংস হয়ে উঠেছে। আর তাদের সহিংসতার খেসারত দিতে হচ্ছে এদেশের সাধারণ জনগণকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভুল নীতি ও রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের প্ররোচনায় বিএনপি যে সহিংসতা শুরু করেছে তাতে সাধারণ জনগণ পরিণত হচ্ছে লাশে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সম্পদ। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। এদেশের শান্তিকামী এবং গণতন্ত্রমনা জনগণ আগুন সন্ত্রাস আর চাইনা।

আজ বাংলাদেশ ও বাংলার মানুষ আওয়ামিলীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রের পথে, মানবাধিকারের পথে, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। মায়ানমারের সামরিক জান্তাদের নির্যাতনে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে যেখানে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে মানবতার চুড়ান্তদৃষ্টান্তরাখছেন সেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে ভুল নীতি প্রয়োগ করে স্বাধীনতার বিরোধী অপশক্তি, জনগণের সমর্থনহীন এবং জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপিকে সহিংসতার পথে ঠেলে দিয়ে এদেশের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ঘোলাটে করে বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করার মাধ্যমে তারা নতুন কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে। আর তাদের ঐ এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বিএনপি যা কোনোভাবেই এদেশের গণতন্ত্রমনা সচেতন হতে দিবেনা। বাংলাদেশি জনগণ একত্রিত হয়ে অচিরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন অপপ্রচেষ্টা ও বিএনপির সহিংসতার উপযুক্ত জবাব দিবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শক্তিতে উদ্বুদ্ধ বাঙালি সাধারণ জনগণ খুব ভালো করেই জানে কিভাবে সব ধরনের ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার এবং আন্দোলনের নামে সহিংসতার জবাব দিতে হয়।

লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া – ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়; সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটিলিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ