1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রোহিঙ্গা সমস্যা : সর্বনাশ যখন ঘরের দুয়ারে

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১

অজয় দাশগুপ্ত

এটি এখন নিশ্চিত, রোহিঙ্গারা সহজে যাবে না। তাদের যাওয়ার কোনো সঠিক সময় ঠিক হয়নি। কবে হবে, তাও জানেন না কেউ। কিন্তু এ কথা নিশ্চয়ই জানেন, কী হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে? সুখকর কিছু নয়। সবকিছু বেসামাল আর যা-তা অবস্থায় এখন। খবর বলছে, বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মসজিদ ও মাদ্রাসায় সাম্প্রতিক হামলায় ৬ জন নিহত হওয়ার পর ক্যাম্পে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

হামলার জন্য স্থানীয় রোহিঙ্গারা আরসাকে দায়ী করছেন। তবে আরসা হামলার দায় অস্বীকার করেছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হলেও সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক কাজ করছে। ক্যাম্পের বাইরে একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যক্রমে স্থানীয় অধিবাসীদেরও মধ্যেও ভয়-আতঙ্ক বাড়ছে। হামলার সময় তারা শুধু এই মসজিদ-মাদ্রাসায় আক্রমণ করেই থেমে থাকেনি, আশপাশের প্রতিটি বাড়ির সামনেও পাহারা বসায়- যাতে কেউ প্রতিরোধ করতে না পারে। আশপাশের রোহিঙ্গাদের দাবি, কয়েকশ রোহিঙ্গা ওই হামলায় অংশ নিয়েছিল। রোহিঙ্গারা জানায়, এখনো তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কথা বলতেও ভয়-আতঙ্ক কাজ করছে সবার মধ্যে। ঘটনার পর সার্বক্ষণিক পুলিশের পাহারা বসেছে, চলছে দিনে-রাতে টহল। কিন্তু ক্যাম্পের পরিস্থিতি থমথমে বলেই মনে হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ পরিস্থিতি কি সত্যিই অকল্পনীয় কিছু? বাংলাদেশের জনসংখ্যা এমনিতেই অসহনীয়। ঘনবসতির এ দেশে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ এই শরণার্থীর দল। তারা যে হিংস্র ও সংস্কৃতিহীন- এটি জানার পরও আমরা তাদের যে জামাই আদর দিয়েছি, সেটিই এখন কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দৈনিক আমাদের সময়ের রিপোর্ট জানায়, তারা এখন বেপরোয়া। আধিপত্য বজায় রাখার নামে তারা আমদানি করছে সন্ত্রাস। আমরা যেসব তথ্য ও প্রমাণ পাচ্ছি, এতে এটি স্পষ্ট- তাদের গডফাদাররা সক্রিয়। তারা যুক্ত হয়েছে দেশীয় নেটওয়ার্কের সঙ্গে।

বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়েছে- এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। এটিও সত্য, সমাজ ততটা এগোয়নি। কিছুদিন ধরে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাস আর সাম্প্রদায়িকতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সমাজের পচন কোথায়। এটিও জানিয়ে গেছে, বন্ধ্যা রাজনীতি সন্ত্রাস বা উগ্রতা দমন করতে ব্যর্থ। আরেকটি বিষয় খেয়াল করবেন, এসব ঘটনায় জড়িতদের বয়সসীমা কেমন? সবার বয়স ছিল ২০ বছরের ভেতর, ৩০ বছরের নিচে। এমনকি ১৮-১৯ বছর বয়সের ছেলেরাও ছিল দলে। এখন ভাবুন, তাদের সঙ্গে যদি রোহিঙ্গাদের উগ্রবাদীরা যোগ হয়, তা হলে কী হবে সমাজের?

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে আমি যা দেখি, এর নাম একটিই- একটি ভবিষ্যৎহীন ও নির্দেশনাহীন জাতিগোষ্ঠীর উ™£ান্ত জীবন। তা নিজ দেশে অবহেলিত ও প্রত্যাখ্যাত এবং এখন বাংলাদেশের সর্বনাশ করতে উদ্যত। তারা যে আমাদের কত লোকসান করবে আর সমাজকে কোথায় নিয়ে যাবে- এ জিজ্ঞাসা যৌক্তিক। বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাই- কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া, রামু- এসব এলাকা কি দেশের বাইরে, দেশের অংশ? যদি সেটি মাথায় থাকে, তা হলে কী করে সরকার এসব দমন না করে লোক দেখানো কিছু উদ্যোগ নিয়ে খুশি? কেন শক্ত হাতে দমন করা হচ্ছে না?

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সব সতর্কবাণী মিথ্যা করে তারা আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে। বুঝতে হবে কেন? অন্যায় আচরণে পারদর্শী এই উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দেওয়াই উচিত ছিল না। কিন্তু দেশের শীর্ষপর্যায় থেকে বলা হয়েছিল দরকার হলে জাতি একবেলা খেয়ে, আরেক বেলা না খেয়ে তাদের খাওয়াবে। এখন কী দেখছি অমরা? নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশচুম্বী। শুধু আকাশচুম্বী বললেও ঠিক হবে না। বলা দরকার, ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাধারণ মানুষের যেখানে নাভিশ্বাস উঠছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের খাওয়াবে কে? হয়তো ধারণা ছিল- অঢেল অনুদান, আন্তর্জাতিক সাহায্য আর জনগণের সহায়তায় সবকিছু সম্ভব হবে। কিন্তু সরকারের অজানা ছিল না, আমাদের সমাজের বাস্তবতা কী? এখানে যে যত পায়, সে তত চায়। এ চাওয়া যে কোনো উৎস থেকে হলেই চলে। শরণার্থীদের জন্য এলো, না অন্য কোনো কারণে এলো- সেটি ব্যাপার নয়, বিষয় হলো টাকা। রোহিঙ্গাদের বেলায় সেটি ঘটছে আর যুক্ত হয়েছে মাদক। এ পর্যন্ত যতবার এ নিয়ে লিখেছি, ততবার বলেছি- সব থেকে ভয়ঙ্কর এই মাদক।

আজকে তারুণ্যের অধঃপতন সবার জানা। এর ওপর যদি রোহিঙ্গাদের তারুণ্য এসে যোগ হয়, তা হলে পরিস্থিতি যা হওয়ার- সেটিই হয়েছে। এখন এটি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মজার বিষয়, সরকার এখন বলছে- তাদের ব্যাপারে, বিশেষত তাদের ফেরত পাঠাতে কঠোর হতে হবে। কিন্তু ইটস টু লেট। চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য মেরুকরণ সম্পর্ক এবং মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক অবস্থান- এটি পরিষ্কার করে দিচ্ছে, সহজে তাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না। সরকার মুখে যা-ই বলুক, মূলত তাদের কথা আন্তর্জাতিক মহলে কোনো প্রভাব ফেলেনি। আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি, তারা দেখতে পাচ্ছি- এ নিয়ে কোনো কথাবার্তা নেই কোনো মহলে। ফলে রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক ও জোর প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।

সামাজিক ভিডিও মাধ্যমে এখন যেসব ঘটনা ভাইরাল হচ্ছে, এতে এটি স্পষ্ট- রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া। গলা কেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করানোর অপচেষ্টাকে সরকারি মহল বলছে ভুয়া, অপপ্রচার। কিন্তু মূল ঘটনা আমরা কেউই জানি না। বাহ্যিক ঘটনা থেকে এটি পরিষ্কার, তারা চাইলেই মহিবুল্লাহকে হত্যা করতে পারে। আমাদের দেশের যেসব ভূমি, সন্তান বা মানুষজন ওইসব এলাকায় থাকে- তাদের জন্য এখন দুশ্চিন্তার বাইরে আর কিছুই নেই। কীভাবে বড় হচ্ছে সেখানকার নবীন বাংলাদেশি প্রজন্ম। পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে আপনি আঁচ পাবেন না? আপনার ঘরে আগুনের হলকা এসে লাগবে না? সেভাবেই আমাদের তারুণ্যের এক অংশ এখন মাদক আর সন্ত্রাসের নতুন মন্ত্র শিখছে, শিখছে নানা কায়দা। এই ভয়াবহতার জন্য দায়ী রোহিঙ্গা সমাজ।

মোদ্দা কথায় রোহিঙ্গা এখন বিষফোঁড়া। এই বিষফোঁড়া আমরাই বড় করেছি। টেনে এনেছে ওপরের মহল ও মিডিয়ার বাড়াবাড়ি। তারা ভাসানচরে যাবে না, মিয়নমারেও যাবে না। এর মানে, তারা আমাদের মূল ভূখ-ে থেকে আমাদের তরুণ-তরুণীদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করতে সচেষ্ট। আমরাও এক সময় শরণার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু সবাই চাইতাম দেশে ফিরে আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে। আর তারা চায় থেকে যেতে। যখন আমরা ফিরেছি হুঁশে, তখন অনেক বিলম্ব ঘটে গেছে। সামনে অকূল আঁধার, অজানা আশঙ্কা আর বিপন্ন ভবিষ্যৎ। মানবতার নামে দেশ ও সমাজের সবকিছু বিনষ্ট করতে উদ্যত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কঠিন সিদ্বান্ত এখন সময়ের চাহিদা। তাদের কারণে দেশ ও সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করা কারও জন্য কখনো মঙ্গলের হবে না।

অজয় দাশগুপ্ত : সিডনি


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ