1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মিয়ান আরাফি এবং বিএনপির দলবদ্ধ মিথ্যাচার-পাগলামি

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩

যুক্তরাজ্যের একসময়ের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, রাজনীতি যখন খুবই দূষিত হয়ে পড়ে, তখন দুটি ব্যাপার সেই রাজনীতিতে দেখা দেয়— একটি কালেকটিভ ম্যাডনেস (দলবদ্ধ পাগলামি), অন্যটি কালেকটিভ লাই (দলবদ্ধ মিথ্যাচার)।

বাংলাদেশের অবস্থাটা কি? এমন প্রশ্ন জোরালোভাবে আমাকে নাড়া দেয় বিএনপির নয়া পল্টন অফিসে মিয়ান আরাফি নামের এক ব্যক্তির সাংবাদিকদের সামনে দেওয়া নিজের পরিচয় এবং বক্তব্য প্রচারের পর। সচেতনভাবে ওই ব্যক্তি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলেন,সেখানে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

অফিসও ফাঁকা ছিলো না, কিংবা তিনিও সেখানে হুট করে ঢুকে গিয়ে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বসে যাননি। এই ঘটনার পর আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হয়েছি আসলে এটা কি ম্যাডনেস নাকি কালেকটিভ লাইয়ের অংশ? চার্চিলের ভাষ্য অনুযায়ী আরেকটি বিশেষণের দিকে নজর যায়- তা হচ্ছে খুবই দূষিত হওয়া রাজনীতি। অর্থাৎ বর্তমান রাজনীতি কি খুবই দূষিত হয়ে পড়েছে?

এই ঘটনাটি এমন সময় ঘটলো যখন বিএনপি তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনে মাঠে গলদঘর্ম। এমন একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে তারা কি মনে করেছিলেন ‘বিগ লাই থিওরি’ প্রয়োগে পরিস্থিতিকে আরও চাঙা করে দেওয়া সম্ভব হবে? যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাঝে মাঝেই করেছেন। তারা কি এমন ভেবেছিলেন, ট্রাম্প যেমন ‘বিগ লাই থিওরি’ এপ্লাই করে মাঝে মাঝে জিতেও গেছেন। তারাও তেমনি জিতে যাবেন? বাস্তবতা হচ্ছে, এমনভাবেই সেই থিওরি তারা এপ্লাই করতে গেছেন, যার পরিণতি একটা বাচ্চারও অজানা থাকার কথা নয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করার আশায় তারা এমনই শিশুসুলভ কাজ করে বসলেন।

যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে একসময় এই ঘটনাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে- তারা কিছু জানে না এমন বলে। এটা আসলে ধোপে টিকে না। প্রতারণা বলা যায় কি এই বিষয়টিকে? নাকি মিথ্যাচার? এটা কি অভ্যাস নাকি হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা?

প্রতারণা কিংবা মিথ্যাচার যাই বলা হোক না কেন, এমন ঘটনা যে তাদের পথচলার ইতিহাসে নতুন নয় এটা সবাই জানেন। বিএনপি নামের এই দলটির জন্মও যে তেমনি মিথ্যার আশ্রয়ে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, ক্ষমতা দখলের সময় যে বিষয়টি প্রথমই উপস্থাপন করেন তা হচ্ছে-দেশের প্রয়োজনে তিনি ক্ষমতা দখল করেছেন। এরপর যখনই তিনি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন,তখই দেশ ও দশের কথা জোর দিয়েই উচ্চারণ করেছেন।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলের এমন অসত্য বিষয়ে অসংখ্য তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে এখনও। জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় একটি বিষয় আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। যা তার প্রতিষ্ঠিত দলটি পরবর্তীকালেও প্রচার করে আসছে। তা হচ্ছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করেন এবং তাদের দলটির প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুবাদে তারাও মুক্তিযোদ্ধার দল। অথচ ইতিহাস বলে এই দলটিতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছে। দলের নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধীদের রেখেও তারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধার দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

কিন্তু হাল আমলে বিএনপির মহাসচিবের একটি জ্বলন্ত মিথ্যাচার নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও লেখকদেরও ধাক্কা দিয়েছে। তিনি স্পষ্টতই বলে দিলেন তাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নাকি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এবং মির্জা ফখরুল সাহেবও একই অঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। ফখরুল সাহেবের জ্বলজ্যান্ত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে অবশ্য জোরালো প্রতিবাদ হয়নি। অথচ এটা প্রমাণিত ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে খালেদা জিয়া চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। যেখানে জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করতে করতে ভারতে গমন করেন।

শুধু তাই নয় খালেদা জিয়াকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৎকালীন মেজর জিয়া ৩ বার মুক্তিযোদ্ধাদের দেশে পাঠিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার ৫জনকে প্রাণ হারাতে হয়। শেষবার মুক্তিযোদ্ধার তার সামনাসামনি হওয়ার পর তিনি তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দেন। তিনি কি করে মুক্তিযুদ্ধ করেন, সেই প্রশ্নের সমাধান কিন্তু এখনও হয়নি। মজার ব্যাপার হলো তারাই একসময় বলেন খালেদা জিয়া একাত্তরে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী ছিলেন।

তারা কিন্তু বারবারই এমনটা বলে থাকেন। মনে থাকার কথা একবার বলা হলো খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ থাকায় এবং তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞাকে নিন্দা জানিয়ে মার্কিন ৬ কংগ্রেসম্যান বিবৃতি দিয়েছেন। বেশ কিছু গণমাধ্যমে সেই বিবৃতি প্রচারও হলো। অথচ সেই কংগ্রেসম্যানদের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতিই দেওয়া হয়নি। ন্যক্কারজনক ঘটনা হচ্ছে, তাদের সইগুলোও জাল করা হয়েছিলো। একটু অবাক হওয়ার মতোই বিষয়। কতটা অপরিপক্ক হওয়ার পর এমন বোকামি করতে পারে?

রাজনীতিবিদগণ মিথ্যাচার করেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে, এটা নেতারা কখনো কখনো স্বীকারও করেন। কিন্তু সেটাও এমনভাবে করা হয়, যাতে সহজে ধরা না পড়ে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর রাষ্ট্রকে চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করা হয় কিংবা তাদের যখন ব্ল্যাকমেইলিং করা হয় তখন সেটা যে সহজেই ধরা খাওয়ার কথা, এটা কি তারা বুঝতে পারেননি? সেই তো ধরা খেলেন। দুই কংগ্রেস সদস্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দিলেন খবর প্রচার হওয়ার পর। তারা এই বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে তথ্য দিলেন। তাদের নাম প্রচার হওয়ায় যে বিএনপির প্রতি তাদের মনোভাব সন্তোজনক হবে না এটাই স্বাভাবিক।

আরেকবার বলা হলো, ভারতের প্রভাবশালী নেতা অমিত শাহ ফোন করে খালেদা জিয়াকে তার খবরাখবর নিয়েছেন। বিষয়টি হাস্যকর উপাদান হিসেবে মিডিয়ার খোরাক জোগায় সংবাদটি প্রচার হওয়ার পর পরই। ভারতীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় অমিত শাহ আদৌ ফোনই করেননি, ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করার প্রশ্ন তো পরের ব্যাপার। সম্ভবত এটা ২০১৫ সালের ঘটনা হবে।

‘দ্য প্রিন্স’-এ ম্যাকিয়াভেলি লিখেছিলেন-সামষ্টিক ভাল’র জন্য কোনো কাজ করতে গেলে নৈতিক-অনৈতিক বিবেচনার প্রয়োজন নেই। তারা কি ম্যাকিয়াভেলির সূত্র ধরে এমন মিথ্যাচারগুলো করছে? যদি কার্যকারণ বিশ্লেষণ করা হয় দেখা যাবে, তাদের মিথ্যাচারগুলো কখনো ব্যক্তির দোষ আড়াল করার জন্য কখনো ক্ষুদ্র স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশে করা।

কোথায় পড়েছি মনে করতে পারছি না। প্লেটোও নাকি বলেছিলেন মহৎ ও সৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হলে মিথ্যা বলা যায়। বিশেষ করে দেশ পরিচালকগণ মাঝে মধ্যে দুয়েকটা মিথ্যা বলে যদি দেশ ও দশের ভালো হয় তাহলে তিনি সেটা করলেনই বা। এটা অপরাধ নয়।

প্লেটো সাহেবের বক্তব্য অনুয়ায়ী আলোচিত মিথ্যাচারগুলোর পেছনে কি মহৎ কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছিলো? এই যে মিয়ান আরাফি নামের এক ব্যক্তিকে জো বাইডেনের উপদেষ্টা বানানো হলো, তিনি যে মিথ্যাচারগুলো করলেন, এর পেছনে উদ্দেশ্য কি মহৎ ছিলো? বেচারা ভুয়া উপদেষ্টা আমেরিকার উদ্দেশে উড়াল দিতে গিয়ে পৌঁছে গেলেন কারাগারে। তার ভাগ্য এতই খারাপ যে, যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়ে দিলো-মিয়ান আরাফি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কোনো উপদেষ্টা নন। এবং এটাই স্বাভাবিক।

মিথ্যাচার বিষয়ে ধর্মীয় একটা ব্যাখ্যার কথা আমি প্রথম জানতে পারি বছর দুই আগে। মনে থাকার কথা-তখন হেফাজত নেতা মামুনুল হক সোনারগাঁওয়ে একটি রিসোর্টে নারী কেলেঙ্কারিতে ধরা পড়েন। রিসোর্টের খাতায় তিনি সঙ্গের মহিলাকে তাঁর স্ত্রী বলে পরিচয় দেন। এবং নামও লিখেন নিজের স্ত্রীর নাম। কিন্তু বিধি বাম, ধরা খেয়ে যান। শুধু তাই নয় ধরা খাওয়ার পর তিনি বললেন, সঙ্গের মহিলাকে তিনি বিয়ে করেছেন। মিথ্যা ঢাকতে মিথ্যার আশ্রয় আর কাকে বলে। তখন হুজুরদের বর্ণনা থেকে জানতে পারি-ইসলামে স্বামী যদি স্ত্রীকে খুশি করতে চান তাহলে মিথ্যা বলতে পারেন। তিরমিজি শরিফের হাদিসে তেমন বর্ণনা আছে বলেও শুনতে পাই।

মামুনুল হক নারী কেলেঙ্কারি ঢাকতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন। আরেক নারী কেলেঙ্কারির নায়ক হিসেবে অভিযুক্ত লে.জেনারেল হাসান সারাওয়ার্দী (অব.), মিয়ান আরাফিকে ভুয়া উপদেষ্টা বানিয়ে কাকে খুশি করতে চেয়েছেন সেটা ভাবনার বিষয়।

বিএনপির রাজনীতি কি এতই দূষিত হয়ে পড়েছে? চার্চিলের ভাষায় কি বলতে হবে-এখন তাদের সামনে কালেকটিভ ম্যাডনেস এর বিকল্প নেই?

লেখক : মোস্তফা হোসেইন – সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ