1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপির হরতাল-অবরোধে হুমকিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩

করোনাভাইরাসে শিক্ষার ক্ষতি হয়েছিল ব্যাপক। তখন নানাভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। যেমন- অ্যাসাইনমেন্ট, অটো পাস এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হয়, যা তখনকার বাস্তবতায় যৌক্তিক ছিল। তবে করোনার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মারাত্মক আকারে শিখন ঘাটতি ছিল। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল, যা আমাদের শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেই প্রভাব কাটিয়ে সম্পূর্ণভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলো। স্কুল-কলেজ সম্পূর্ণ সিলেবাসে ও পূর্ণ নম্বরে পাবলিক পরীক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি শিক্ষা খাতে আবার কালোদিন নিয়ে আসছে। যার কারণে আবার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এখন বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। হরতাল-অবরোধের কর্মসূচির প্রভাবে শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীর জীবন এখন হুমকির মুখে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে অনেক শিক্ষার্থী ভয় পাচ্ছে। এমনকি আমার এক ক্লাসে দেখা যায় মোট শিক্ষার্থী ৫০ জন, কিন্তু উপস্থিতির সংখ্যা ৩৫। অর্থাৎ ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী হরতাল বা অবরোধের কারণে ক্লাসে আসছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবহন সুবিধা দিতে পারছে না। কারণ এক একেকটি গাড়ির দাম অনেক। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়ে লোকাল বাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসছেন, যেখানে রয়েছে জীবন হারানোর ঝুঁকি। তাই এ ধরনের হরতাল বা অবরোধ কোনোভাবেই কাম্য নয়। বরং যারা এসব হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি দিচ্ছে তাদের জনসমর্থন কমে যাচ্ছে।

তাদের প্রতি প্রত্যাশা যৌক্তিকভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জনসমর্থন আদায় করার উদ্যোগ নিক। সংবিধান মেনে অবাধ ও সুস্থ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। এভাবে সরকারকে ফেলে দেওয়া যাবে না। সরকারকে ফেলতে হলে জনসমর্থন লাগবে। এজন্য বিরোধী দলগুলোকে এমন কাজ করতে হবে যেখানে সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করে। বিএনপির অবরোধে শিক্ষার্থীদের গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর সকালে জুরাইনের গেণ্ডারিয়া স্টেশন এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নচূড়া নামে একটি বাসে হামলা চালানো হয়। অল্পের জন্য বেঁচে যান বাসে থাকা ১৮-২০ শিক্ষার্থী। সিলেটের একটি স্কুল বাসেও আগুন দেওয়া হয়। এসবের ফলে যদি কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটত তাহলে কতগুলো পরিবারের সর্বনাশ হয়ে যেত। কাজেই এর দায় যারা আজ হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি দিচ্ছে তাদেরকেই নিতে হবে।

রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হলেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কম। অবরোধের কারণে অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য রাস্তায় যাতায়াত নিরাপদ মনে করছেন না। বছরের শেষ সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধও রাখা যায় না। এখন সব স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে, সামনে এসএসসি পরীক্ষা। তাছাড়া এ সময়ে স্কুলের প্রশাসনিক কাজে শিক্ষকদের ব্যস্ত থাকতে হয় এবং নিয়মিত স্কুলে আসতে হয়। ফলে হরতাল বা অবরোধে স্কুল বা কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের আসা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। আন্দোলনের অংশ হিসেবে কয়েক ধাপে অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিরোধী দলগুলো। কিন্তু তাদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সমর্থন তেমন নেই বললেই চলে। এসব করে আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। আমরা সাধারণ নাগরিক নিরাপদে রাস্তায় চলাফেরা করতে চাই। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ এবং শ্রেণিকক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের শিখাতে চান। কিন্তু এসব কর্মসূচি জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে, যার প্রভাব পড়েছে শিক্ষাঙ্গনেও। আবার সরকার থেকে বলা হয়েছে নভেম্বরের মধ্যেই বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন শেষ করতে হবে। যার কারণে বাধ্য হয়ে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। সরকারের নির্দেশনা দেওয়া যথার্থ। সামনে নির্বাচন।

সেজন্য পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থীর ওপর হরতাল এবং অবরোধের প্রভাব পড়েছে। শুধু পরীক্ষা নয়, এই সময়ে সারাদেশের স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের নতুন বই দেওয়ার জন্য কার্যক্রম শুরু হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর এসব ক্রমসূচির কারণে নতুন বই দেওয়ার সংস্কৃতিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে হরতাল-অবরোধের প্রভাব বেশি। পরীক্ষার দিন ঝুঁকি নিয়ে সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়া করছেন অভিভাবকরা। তাই বিভাগীয় শহরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো একান্ত জরুরি। রাজনৈতিক অস্থিরতার এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। এটা হতে পারে। তবে বিএনপি মনে করবে তাদের কর্মসূচি সফল। তাই কিভাবে নিরাপত্তা বাড়িয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ স্বাভাবিক রাখা যায় সেই উপায় বের করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুক্র, শনিবার খোলা রেখে সপ্তাহের অন্য যে কোনো দুইদিন বন্ধ রাখা যেতে পারে। একদিন সপ্তাহে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া যেতে পারে।

গত কয়েক বছর রাজনীতি স্থিতিশীল ছিল। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় ফের ২০১৪ সালের মতো সহিংসতা শুরু হলো। এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা খাতসহ পর্যটন খাতও। করোনা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল। সরকারের সঠিক নির্দেশনায় আমরা তা কাটিয়ে উঠতেছিলাম। তবে এখন মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ কিভাবে মোকাবিলা করবে এবং এই বিশাল ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেবে তা ভেবে পাচ্ছি না। তাই সহিংসতার রাজনীতি পরিহার করার জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয় সেজন্য সরকারের আরও বেশি সজাগ এবং নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে জনমনে শঙ্কা বেড়েই চলেছে। যদিও সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে, তারপরও রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে উদ্বেগ রয়েছে সাধারণ জনগণের মধ্যে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে না। তাদের কর্মসূচির কারণে আজ শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। ফলে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের আরও সহনশীল হওয়া প্রয়োজন। দলগুলো একে অপরকে দোষ দিচ্ছে, কিন্তু রোষানলে পড়ছে সাধারণ মানুষ। বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

দেশে সংবিধান আছে, সেই অনুযায়ী সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আসা উচিত। যদি কোনো সমস্যা হয় তখন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যারা নির্বাচনী পর্যবেক্ষক থাকবে তাদের বলবেন। সমাধান হবে। কিন্তু এভাবে হরতাল বা অবরোধের নামে আগুনসন্ত্রাস কোনোভাবেই সাধারণ জনগণ মেনে নেবে না বলে বিশ্বাস করি। দেশকে অস্থিতিশীল না করে নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে আসুন। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলকে বলব, কারও নির্দেশে দেশ ধ্বংসের কর্মসূচি না দিয়ে শিক্ষার্থীদের কথা ভাবুন, দেশের কথা ভাবুন।

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন সেটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। যারা হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে যানবাহন পুড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং মানুষের জীবন নিয়ে তামাশা করছে, খুব শীঘ্রই এসব দুষ্কৃতকারীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যার মাধ্যমে দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে বলে প্রত্যাশা।

লেখক: ড. মো. শফিকুল ইসলাম – সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ