1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড : মার্কিন সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত

আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৯৯৬টি (মতান্তরে ১১২৬টি)। ৯৬% হত্যাকাণ্ড ঘটেছে পুলিশের গুলিতে। নিহতদের ২৭% আফ্রিকান আমেরিকান, যদিও তারা মোট জনসংখ্যার ১৩%। মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুসারে ৯৮.৮% ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি। কিন্তু গণতন্ত্রের ঠিকাদার যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে – ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৬০০টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য! প্রতিবেদনে র‍্যাব ও যে ছয়জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে তাদের দায়িত্ব পালনের মেয়াদ উল্লেখ রয়েছে ২০১৫ সাল থেকে। যেকোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে এ সিদ্ধান্ত অন্যায্য, এক তরফা এবং পক্ষপাতদুষ্ট।

২৫শে মার্চ, ১৯৭১ এর কালো রাতে এদেশে বর্বরোচিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, নয় মাসে ত্রিশ লক্ষ শহীদ প্রাণ দিয়েছিলেন; কিন্তু বিশ্বের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র তখন কোনো অধিকারের ব্যত্যয় দেখতে পায় নি। বরং স্বাধীনতার সংগ্রামকে নস্যাৎ করতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার চক্রান্ত করা হয়েছিল। ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট যখন নৃশংসতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো, কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলো; তখন কেউ মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলে নি।

২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সহস্রাধিক। রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে ২১শে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা এবং শাহ এএমএস কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টার সহ অগণিত রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল; কিন্তু তখনও গণতন্ত্রের কোনো সংকট খুঁজে পায় নি যুক্তরাষ্ট্র। এখন পাচ্ছে? কিন্তু কেন?

বাংলাদেশে ২০০৯ পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের শিকাররা কেউ ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিলেন না। হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিরা প্রায় সকলেই মাদক ব্যবসা বা সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। নারায়নগঞ্জের সেভেন মার্ডারের মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে নি তা নয়, কিন্তু এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। শহীদুল আলম বা নুরুদের মতো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতরা যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলি থেকে রেহাই পায় না। কিন্তু বাংলাদেশে উস্কানি দিয়ে ও গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত অনেককে আইনের আওতায়ও আনা হয় নি। অভিযোগ ওঠার পর দলের সর্বোচ্চ স্তরের নেতাদেরও ছাড় দেয়া হয় নি। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ যে আক্রমণাত্বক আচরণ করে সেই তুলনায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক বেশি সহনশীল। অর্থাৎ এমন কোনো ক্ষেত্র বা পরিস্থিতি বিরাজ করছে না যে কারণে মিয়ানমারের মতো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম আসতে পারে! এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতরা নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে দেখতে পারেন, যদি তা থাকে!

আমরা যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাই – যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ যারা ১৮ শতাব্দী থেকে আর্থিকভাবে ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়েছে। অন্যান্য পরাশক্তি দেশগুলো নিজেদের ভূখণ্ডে এবং/অথবা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। আমরা পৃথিবীবাসী কোনো শক্তি বা পরাশক্তির দালালি করেছি। “দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়” – এই নীতিতে ব্যক্তি/দলীয় স্বার্থে পুতুল হয়ে বৃহত্তর স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছি। পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় সহযোগী হয়েছে, কিন্তু নিজ ভূখণ্ডকে যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করে নি অথবা ব্যবহার করতে দেয় নি। তৃতীয় পক্ষের প্রভাবে নিজেদের ভূখণ্ডে কোনো ধরণের অস্থিরতা বা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সুযোগ দেয় নি। তাই তাদের অগ্রগতি ছিল নিশ্চিত একটি যাত্রা। যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায় অস্ত্র বিক্রি করে তাদের অর্থনীতি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। আর আমরা ক্ষমতা দখলের জন্য আত্মসমর্পণ করেছি, নিজেদের মাতৃভূমি ও ক্ষমতার বলয় তুলে দিয়েছি সাম্রাজ্যবাদের হাতে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের কথিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে হাস্যকর অভিযোগ তুলেছে, তা নিজেদের বিকিয়ে দেয়া দালাল গোষ্ঠীর চক্রান্তের ফলাফল। বিশ্বের কাছে নিজের জন্মভূমিকে হেয়-প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্রই দালালদের কাছে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা।

প্রতিযোগীবিহীন যে যুক্তরাষ্ট্র আমাদেরকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দীক্ষা দিতে চায়, সেই স্বপ্নের দেশে যে গণতন্ত্রের সংকট রয়েছে তা বাইডেনও এ সম্মেলনে অস্বীকার করতে পারেন নি। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পরিসংখ্যান উল্লেখ করেছি। আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। ৩০০ বছরের গণতন্ত্র, মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও অবাধ স্বাধীনতার দেশে এখনো রয়েছে রেসিজম। এখনও বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে তারা সফল হতে পারে নি। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন লক্ষাধিক বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। ১০ বছরের শিশুর সঙ্গে প্রাপ্ত বয়স্কের বিবাহের অসংখ্য নজির রয়েছে। ৫০টি রাজ্যের ৪৫টিতে বাল্যবিবাহ হয় এবং অনেক রাজ্যে বিবাহের সর্বনিম্ন কোনো বয়সও নির্ধারণ করা হয় নি। যৌন হয়রানি ও নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান উল্লেখ করা বোধকরি নিষ্প্রয়োজন।

নিষেধাজ্ঞার ফলাফল কি?

গত বছর ভারতকে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তুলনা করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাই এসবের কোনো ফলাফল নেই। যে দলের আন্দোলন করার সাহস ও ক্ষমতা নেই, তাদের পুঁজি শুধুই ষড়যন্ত্র। মুশফিক, কনক বা খলিলরা তাদের পূর্বসূরিদের মতো শুধু ষড়যন্ত্রই করতে পারবে, ফলাফল হবে ৭১-এর মতোই। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান দূত আর. মিলার একজন দক্ষ কূটনীতিক। তিনি যেখানেই কর্মরত ছিলেন সেখানেই ক্ষমতার পটপরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছেন, পারেন নি শুধু বাংলাদেশে। ইতোমধ্যে তার দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই বিদায়কালে মীর্জাফরদের সান্ত্বনা দিয়ে গেলেন হয়তো!

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ধন্যবাদ দিতে চাই, কিন্তু সরকারকে ধন্যবাদ দিতে পারবো না।” যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিহিংসামূলক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জাতির পিতার সে কথাই প্রযোজ্য। এর মাধ্যমে মূলত বাইডেন প্রশাসনের অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এনে মিয়ানমারে সংঘটিত রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞকে অর্থহীন করে ফেলা হয়েছে।

পক্ষ ও প্রতিপক্ষ থাকলে কেউ নায়ক হয়, কেউ খলনায়ক। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি দেশের প্রতি প্রভুসুলভ আচরণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে খলনায়কও বলা যায় না, এটি তাদের কাপুরুষতা। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত একটি বিষয় প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না – এটি ১৯৭৫ নয় এবং বাংলাদেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, বাংলাদেশের বাজেটও দান-খয়রাত-ঋণ নির্ভর নয়। আমরা এখন অনেক খাতেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে যদি পারস্পরিক স্বার্থ মুখ্য হয়, তাহলে মেরুদণ্ডহীন দলের ভাঁড়দের কথায় কান দিয়ে হাস্যকর ও ছেলেমানুষি সিদ্ধান্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরত থাকা উচিত।

লেখক: আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল – সাবেক ছাত্রনেতা, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ