1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রজন্মের সামনে রাজনৈতিক শিক্ষা!

এ কে এম শাহনাওয়াজ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

বর্তমান প্রজন্মের দুর্ভাগ্য রাজনীতির জগতে তাদের এখন কোনো রোল মডেল নেই। নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কিশোর-তরুণরা নতুন করে বড় হওয়ার স্বপ্ন বোনে। মাহথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার নতুন প্রজন্মকে পথ দেখান। সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা, ভাসানী, বঙ্গবন্ধু আমাদের চেতনাকে শানিত করতে পেরেছিলেন বলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ না দেখা এই প্রজন্ম এগিয়ে যাওয়ার বড় কোনো স্বপ্ন বোনার প্রেরণা কার কাছ থেকে নেবে?

আদর্শিক রাজনীতি এখন নির্বাসিত। ক্ষমতার প্রশ্নে মোহাচ্ছন্ন রাজনীতিকরা যেভাবে ছুটছেন তাতে কোনো সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় না। দেশবাসীর কল্যাণ চিন্তার কোনো লেশ নেই আমাদের রাজনীতিকদের ক্ষমতার মসনদে পৌঁছার দৌড়ে। তার মধ্যে আমাদের নেতানেত্রীরা যেভাবে নিজেদের উন্মোচিত করছেন নতুন প্রজন্মের সামনে তাতে এই ভবিষ্যতের কান্ডরিরা কী শিক্ষা পাবে তা ভেবে শঙ্কিত হতে হচ্ছে।

উনিশ শতকের মার্কিন লেখক জেমস ফ্রিমেন ক্লার্ক বলেছিলেন ‘একজন রাজনীতিচর্চাকারী পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে চিন্তা করেন, আর রাজনীতিজ্ঞ ব্যক্তি পরবর্তী জাতি সম্পর্কে।’ কথাটি যে কত সত্য তা বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি দেখলে অনুধাবন করা যায়। আমাদের ক্ষমতাপ্রিয় রাজনীতিকরা রাজনীতিচর্চাকারীই রয়ে গেলেন। তাই গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে চড়িয়ে পোশাকি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সবাই ক্ষমতাসীন হতে চান।

বর্তমানে দাঁড়িয়ে তারা চান তাৎক্ষণিক ফসল ঘরে তুলতে। এতে ভবিষ্যতে জাতি বিপন্ন হলেও তাদের কিছু যায় আসে না। এ ধারার রাজনীতিচর্চাকারীদের জালে বন্দি এদেশের সাধারণ মানুষ এখন ভয়ংকর কঠিন সময় পার করছে। জাতীয় নেতানেত্রীদের আচরণ বচন অধিকাংশ সময় আমাদের বিব্রত করে। একজন সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানী বলতে পারবেন আমাদের দেশের দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনীতিকরা তাদের আচরণ দিয়ে কতটা ক্ষতি করছেন প্রজন্মের।

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে নানা বিরুদ্ধ মতামত আমরা শুনতে পাই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইসি গঠন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এধরনের সংলাপে কোনো লাভ হবে না বলে সংলাপে না বসার ব্যাপারে তাদের অভিমত জানিয়ে আসছিল।

আবার একই দিনে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ বিএনপিকে সংলাপে আসার আহবান জানাচ্ছেন তখন বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তারা আমন্ত্রণই পাননি। এমন সব গোলমেলে অবস্থা চলছে এখন।

এখন গণমাধ্যমের অধিক্যে কোনো খবরই অজানা অদেখা থাকে না। এ সত্যটি আমাদের কোনো পক্ষের রাজনীতিকরা মাথায় রাখেন না। তাই জাতীয় নেতানেত্রী হিসেবে তাদের কতটুকু বলা উচিত, আচরণ কেমন থাকা উচিত, সে ব্যাপারে মোটেও সতর্ক থাকেন না তারা। এ কারণে খেলো হয়ে যান মানুষের সামনে। এবার প্রথম কিস্তিতে আওয়ামী লীগ শাসনক্ষমতায় আসার পর বিএনপি বেশ চাপে পড়েছিল।

এরপর স্বয়ং খালেদা জিয়াও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। না হলে তিনবার প্রধানমন্ত্রিত্বে বহাল থাকা এবং একটি অন্যতম বড় দলের প্রধান হয়েও বেগম জিয়া নিজেকে সংযত রাখতে পারলেন না কেন! ২০১৩ সালের কথা স্মরণ করতে চাই। এ বছর ২৯ ডিসেম্বর তিনি নয়া পল্টনের জমায়েতে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু অভূতপূর্ব পুলিশি বেষ্টনি তৈরি করে তাকে বাসায় আটকে দেয়া হলো। বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের সামনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে বসেছিলেন এবং সেখানে যা হয়েছিল তা টিভির কল্যাণে দেশবাসী ও প্রবাসী সবাই অবলোকন করেছিলেন।

আমরা বেগম জিয়ার মনের অবস্থা বুঝি। অগণতান্ত্রিক এবং অমানবিকভাবে তার অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছিল। নিরাপত্তার নামে প্রায় গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। দলীয় নেতাদের কাছ থেকেও অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন তিনি। লাখ লাখ জনতা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র ডাকে ছুটে আসবে বলে নেতাকর্মীরা যে ধারণা দিয়েছিলেন তা ভুল প্রমাণিত হয়। সরকারি প্রতিরোধ হয়তো এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। তারপরও কথা থাকে। ঢাকা শহরে থাকা জামায়াত-বিএনপির কর্মী-সমর্থকরাও যদি পথে নেমে খণ্ড খণ্ডভাবে ছুটে আসত তাহলেও হাজার দশেক জমায়েত হওয়া কঠিন কিছু ছিল না।

এমন একটি আন্দোলনের ডাকে গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা কবুল করেই তো ছুটে আসার কথা। সে বছরেই ঢাকায় অমন একটি জমায়েতের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। একইভাবে সরকার প্রতিরোধ গড়েছিল। তারপরও সময়মতো বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী-সমর্থক জড়ো হয়েছিল নয়া পল্টনে। হাজার প্রতিরোধের পরও হেফাজতিরা জড়ো হতে পেরেছিল শাপলা চত্বরে। এসব কারণে নিজভবনে ২৯ ডিসেম্বর কার্যত অবরুদ্ধ বেগম জিয়া যে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছেন তা একদিক থেকে মানবীয়। তবে একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং তিনবার প্রধানমন্ত্রিত্বের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেত্রীর জন্য বেমানান এবং অশোভনও।

‘গোপালী’ বলা বা গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে দেয়া নিয়ে দেশ-বিদেশে চটুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল তখন। আমি এবিষয় নিয়ে কিছু বলব না। আমি শুধু বলব এটি ছিল সাময়িক উত্তেজনার নিকৃষ্ট প্রকাশ। আমি বিশ্বাস করি এজন্য তিনি নিজেই বিব্রত হয়েছেন। কিন্তু প্রজন্মের শিক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর কয়েকটি উপাদানকে অস্বীকার করা যাবে না। আশা করি আমাকে বিএনপি-সমর্থকরা ক্ষমা করবেন। খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বচন ও ভঙ্গি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এই নেত্রীর আচরণে বিনয় ভাবটি স্পষ্ট হয় না। একবার সম্ভবত ‘চুপ বেয়াদব’ বলে তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন।

সেই ২৯ ডিসেম্বরও (২০১৩) তিনি পুলিশদের বেয়াদব বলেছেন। আমরা সন্তানদের ঘরে সহবত শেখাতে গিয়ে বলি ‘লোক’ বা ‘মহিলা’ না বলে বলতে হয় ‘ভদ্রলোক’ আর ভদ্রমহিলা। অথচ একজন জাতীয় নেত্রী রাষ্ট্রের কর্মচারীকে অত্যন্ত রুঢ়কণ্ঠে বার বার ‘এই মহিলা’ বলছেন। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতা এবং সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে কোনো বিশেষণ ছাড়া বার বার ‘হাসিনা’ বলছিলেন তাতে আমাদের সন্তানরা বিস্ময়ের সঙ্গে আমাদের মুখের দিকে তাকাবে। বেগম খালেদা জিয়া যেভাবে সামন্ত প্রভুর মত করে পুলিশ সদস্যদের কতদিন চাকরি হয়েছে বা ভবিষ্যৎ নিয়ে ধমক দিচ্ছিলেন তা কোনো ধরনের শোভনতার পর্যায়ে পড়ে না।

এসব অতীত না ঘেটে বর্তমানে তাকালেও কি আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারি? প্রতিদিন নিয়ম করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা যেভাবে রাজনৈতিক বাগবিতণ্ডায় ব্যস্ত থাকেন। তা আমাদের প্রজন্মকে নেতিবাচক শিক্ষা দিচ্ছেন বলেই আমরা মনে করি। এমন পরিবেশ আমাদের প্রজন্মের এক অংশকে উগ্র আর ঝগড়াটে রাজনীতির দীক্ষা দিচ্ছে, অন্য অংশকে রাজনীতিবিমুখ করে তুলছে। এর কোনোটাই কাম্য হতে পারে না।

বর্তমান সরকার পরিচালকরাও আবার কম যান কীসে! জনস্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেও সামন্ত প্রভুর আচরণে চাপিয়ে দেয়ার মতো একাধিপত্য আমাদের দেখতে হয়। যখন শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে বলে পিইসি, জেএসসি পরীক্ষা বন্ধের কথা বলছেন শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট মানুষরা, তখন সরকারের উচ্চতর স্থান থেকে বলা হয় এসব পরীক্ষা দিয়ে নাকি শিশুশিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার ভীতি কাটাতে পারবে! অতঃপর কভিড এসে এর দাপট দেখানোর পর এখন ধীরে ধীরে সরকার পক্ষ পিইসি, জেএসসি পরীক্ষা থেকে সরে আসছে বলে মনে হচ্ছে। এভাবে অগণতান্ত্রিক চেতনা থাকায় সরকারপক্ষ যেভাবে ঔদ্ধত্বপূর্ণ দাপট দেখান তাতে প্রজন্মের মধ্যে এক ধরনের ক্ষুব্ধতা তৈরি হতেই পারে।

এসব বাস্তবতায় আমরা দারুণভাবে হতাশা বোধ করছি। রাজনীতিবিদগণই তো যুগ যুগ ধরে দেশ ও রাজনীতি পরিচালনা করেন। প্রজন্মের কাছে রাজনীতিবিদগণই অনুকরণীয় হবেন। রাজনীতিবিদগণ তাদের প্রাজ্ঞ চিন্তা, দেশপ্রেমিকতা, মেধা ও মননে হবেন প্রাতঃস্মরণীয়।

তাদের প্রভার প্রভাবে প্রজন্ম আলোকিত হবে-শানিত হবে। কিন্তু চলমান রাজনীতি থেকে বাস্তবে কী শিখছে আমাদের প্রজন্ম। যাদের আমরা ভবিষ্যতের কান্ডারি বিবেচনা করি তাদের জন্য সুস্থ পথ রচনা করতে রাজনীতিকরা একটিবারও কি আত্মচৈতন্যে ফিরে আসবেন না। অতিমাত্রায় ক্ষমতান্ধতা তাদের সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তা থেকে মাঝে মাঝে সরিয়ে দেয়। আমরা আমাদের রাজনীতিকদের নিয়ে গর্ব করতে চাই। চাই তারা স্বাভাবিক থাকুন। দেশপ্রেমের শক্তি তাদের মার্জিত করুক। তারা অনুকরণীয় হয়ে উঠুন আমাদের প্রজন্মের কাছে।

লেখক: এ কে এম শাহনাওয়াজ, গবেষক-অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ