1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সামষ্টিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা দুটোই আছে

ড. আতিউর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২
সামষ্টিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা দুটোই আছে

সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে যাঁরা ভাবেন, বলতে গেলে এ বছরের শুরু থেকেই তাঁরা বলে আসছেন যে চলমান বৈশ্বিক সংকটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ধারণাতীত গতিতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়া। মূল্যস্ফীতি ও মন্দা সারা বিশ্বের মানুষের বাঁচার লড়াইকে আরো চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অর্থনীতির এই অবনতির ধারা আরো কত সময় ধরে এবং কেমন তীব্রতার সঙ্গে চলমান থাকবে—তা বলাও মুশকিল। আইএমএফ গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত তাদের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকেও এমনটি বলেছে।

বিশ্বব্যাংক, এডিবিও একই ধারায় মত দিচ্ছে। বাংলাদেশও এই সংকটের প্রভাব বলয়ের বাইরে নয়। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং রেটিং এজেন্সিগুলো তাই আগে যেমনটি প্রাক্কলন করেছিল, এ বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি তেমন হবে না বলে জানাচ্ছে। সর্বশেষ ২৯ নভেম্বরের খবরে জানা গেল মার্কিন রেটিং এজেন্সি ফিচ সলিউশনসও বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগে যেমনটি প্রাক্কলন করা হয়েছিল তার চেয়ে কম হবে। তাদের প্রতিবেদন মতে, এর আগে ২০২১-২২-এ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.২ শতাংশ। আর চলতি ২০২২-২৩ বছরে এই হার ৭.৫ শতাংশ হবে বলে বাজেটে ধারণা করা হয়েছিল। করোনাজনিত স্থবিরতা কাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য-উৎপাদন আবার গতিশীল হতে শুরু করায় আগের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু ফিচ সলিউশনসের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রবৃদ্ধির এই হার চলতি অর্থবছরে ৬.৫ শতাংশ হবে।

অর্থনীতির গতিময়তা যে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে তা টের পেতে বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা রেটিং এজেন্সির প্রতিবেদনের দরকার নেই। সাধারণ মানুষ তাদের কর্মক্ষেত্র আর নিত্যদিনের বাজারঘাটের অভিজ্ঞতা থেকেই এই স্থবিরতার প্রভাব অনুভব করতে শুরু করেছে। ফিচের প্রতিবেদন মূল্যস্ফীতির হার ৯.৫ শতাংশ থেকে কমে ৮.৯ শতাংশ হওয়ার কথা বলছে। কিন্তু এই মূল্যস্ফীতিও অনেকের জন্যই চাপ হয়ে যাচ্ছে। কম আয়ের মানুষের কাছে এই চাপ যে অপেক্ষাকৃত বেশি সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক এ অর্থবছরে মূলস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে তাই ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই সবাইকে সতর্ক ও সংযমী হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। এই বার্তা মাঠ পর্যায়ে যত দ্রুত এবং যত ব্যাপকমাত্রায় দেওয়া যাবে, ততই কার্যকরভাবে সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। আশার কথা, দেশের সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক যুগপৎ কাজ করে এরই মধ্যে সংকট মোকাবেলার কিছু বাস্তব উদ্যোগ নিয়েছে। পুরোপুরি না হলেও এসব উদ্যোগের কিছু সুফল দেখা যাচ্ছে। সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতি-অবস্থানটি বৃহত্তর জনগণের কাছে আরো পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা গেলে জনমনে ভরসা অনেকটাই বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস। মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রবৃদ্ধি কিন্তু মূলত ভোগনির্ভর। ফলে ভোক্তাদের আস্থার জায়গাটিই আমাদের নীতি-বিবেচনার কেন্দ্রীয় জায়গায় রাখা চাই।

ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা-কর্মজীবীসহ সর্বস্তরের জনতার আস্থা ধরে রাখার পাশাপাশি আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে সচেতন থাকা একান্ত জরুরি। এককথায় বলে দেওয়া যায় যে আমদানিজনিত যে মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে, সেটিই আমাদের জন্য এখন প্রধানতম চ্যালেঞ্জ। কথাটি ভুল নয়। তবে কার্যকর সমাধানের পথ খুঁজতে আরেকটু তলিয়ে দেখতেই হবে। আমি আশাবাদী যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে। তবে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। নিশ্চয় আগের তুলনায় নিত্যপণ্য এবং কৃষি ও শিল্পের ইনপুটের দাম তো বাড়বে। বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের সংকটের কারণে এই দাম বৃদ্ধি অনিবার্য। আর দাম বাড়লে ভোগও কমবে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক কারণে প্রবাসী আয় প্রবাহের গতিও কিছুটা তো বাধাগ্রস্ত হবে। সে কারণেই মোবাইল আর্থিকসেবা প্রবাসীদের জন্য খুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক হালে নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। ব্যাংকগুলো নতুন নতুন অ্যাপস চালু করলে প্রবাস আয়ে গতি আনা সম্ভব হবে। তবে প্রবাসীদের দেয় বিনিময় হারকে বাজারদরের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ রাখাও খুবই প্রাসঙ্গিক। ফিচের যে প্রতিবেদন নিয়ে শুরুতে লিখেছি, সেখানে বলা হচ্ছে, আগের বছরের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে প্রায় ১১ শতাংশ কম প্রবাস আয় দেশে এসেছে। ফলে প্রবাসীদের পরিবারগুলোর ভোগেও ভাটা পড়বে। ফলে মোট ভোগের প্রবৃদ্ধিই কমবে (আগের বছর ছিল ৮.৮ শতাংশ, চলতি বছরে হবে ৪.৯ শতাংশ)।

দ্বিতীয় গুরুতর চ্যালেঞ্জটি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত নীতি সুদের হার বৃদ্ধি। বৈশ্বিক বাস্তবতায় প্রায় সব দেশের মুদ্রানীতিই সংকোচনমুখী। প্রায় সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকই খুব দ্রুত সুদের হার বাড়িয়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্যই তাদের এমন করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও রিজার্ভ ক্ষয় ঠেকানোসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে তাদের নীতি সুদহার খানিকটা বাড়িয়েছে। আসছে দিনগুলোতে এই সুদের হার হয়তো আরো বাড়াতে হতে পারে। তবে নীতি সুদহার বাড়ার পর তা ব্যাংক পর্যায়েও যাতে ট্রান্সমিট করা যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগেও একরকম ভাটার টান দেখা দেবে বলে মনে হয়। তাই চাহিদামতো বিনিয়োগ প্রবাহ চালু রাখাটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসছে। তৃতীয় যে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভাবতে হবে তা হলো বৈশ্বিক চাহিদা বা ভোগ কমে আসার আশঙ্কা। বাংলাদেশের মতো অন্য দেশগুলোতেও (যেখানে আমাদের রপ্তানি পণ্য যাচ্ছে) সাধারণভাবে সবাই এবং বিশেষ করে কম আয়ের মানুষেরা মূল্যস্ফীতির কারণে ভোগ কমাতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোজোনে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, তা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে ওই সব দেশ থেকে আমরা আগের তুলনায় কম রপ্তানি আদেশ পাব। এই তিন চ্যালেঞ্জসহ সার্বিক বাস্তবতার বিচারে তাই আমি মনে করি ২০২২-২৩-এ প্রবৃদ্ধি ছয়ের ওপরে রাখতে পারাটিই হবে বড় অর্জন। কারণ প্রবৃদ্ধি নয়, এখন বড় ভাবনার বিষয় অর্থনৈতিক সংকট থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া। ম্যাক্রো অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখাটা সে কারণেও খুবই জরুরি।

বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ২০০৮-০৯-এ মার্কিন হাউসিং বাবলের ফলে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের মুখেও আমাদের অর্থনীতি বিপাকে পড়েনি, বরং আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল রাখা গিয়েছিল। ওই সময় বিশ্ব প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ০.৪ শতাংশ। আর আমাদের হার ছিল ৫.৫ শতাংশ। সরকারের বাজেট এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি—এ দুটির মধ্যে একটি সুচারু ভারসাম্য রক্ষা করে কৃষি, এমএসএমই, রপ্তানি ও প্রবাস আয়ের দিকে ধারাবাহিক নীতি-মনোযোগ নিশ্চিত করা গিয়েছিল বলেই ওই সময় এমন অর্জন সম্ভব হয়েছে। এই ধারা বজায় রাখা গেছে বলেই করোনাকালেও আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অন্য দেশগুলোর চেয়ে ভালো ছিল। ২০২০ সালে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩.৪ শতাংশ। অথচ বিশ্ব প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর অর্ধেকের মতো। সেই আত্মবিশ্বাস থেকে বলা যায়, চলতি সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রেও আমরা সঠিক পথে এগোব। এরই মধ্যে আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেছে। সামনে আমদানি আরো কমতে পারে। তবে অবশ্যই উৎপাদনশীল খাতের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালসহ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি অব্যাহত রেখে বিলাসী ও অনুৎপাদনশীল আমদানির লাগাম টানতে হবে। মুদ্রা বিনিময় হার এবং সুদের হারগুলোকে সময়োপযোগী রাখার নানা চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় দুর্যোগকালে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণের জন্য নীতিনির্ধারকরা এরই মধ্যে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন সেগুলোর কথা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষিঋণের পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়ন কার্যক্রম চালু করেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য ঋণ নিশ্চয়তা কর্মসূচিসহ ২৫ হাজার কোটি টাকার আরেকটি অনুরূপ কর্মসূচি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এগুলোর জোরেই আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারছি যে এ দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি নেই।

‘সব সূচকে বেশির ভাগ দেশের চেয়ে আমরা এগিয়ে। তাই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদের ওপর আস্থা রাখছে। আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে থাকায় সুদের হার বাড়ানো হলেও বিনিয়োগ আসবে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত করতে হবে। রপ্তানি ক্রয়াদেশ একদিকে কমলেও আগে যাঁরা চীন থেকে আমদানি করতেন তাঁদের অনেকে নতুন উৎস খুঁজছেন। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে রপ্তানিও বলবান করা যাবে। তবে কমপ্লায়েন্স ও পরিবেশবান্ধব শিল্প-কারখানার বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। আর নিয়ন্ত্রণের পরও মূল্যস্ফীতির যে কিছুটা চাপ থাকবে, তা থেকে কম আয়ের মানুষদের সুরক্ষা দিতে সরকারের বাজেটে নিশ্চয়ই পর্যাপ্ত বরাদ্দ আসবে। কাজেই বিশ্বসংকটের প্রাথমিক ধকল কাটিয়ে ওঠা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ দেখি না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের অর্থনীতিতে ঋণের কেন্দ্রীভবন, জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ এবং অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার নেতিবাচক প্রভাব যে রয়েছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতার কালে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় বিবেচনায় রাখা হবে তা নিয়ে প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী এবং বিশেষজ্ঞ হাওয়ার্ড মার্ক্স কয়েক দিন আগেই ফিন্যানশিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘স্বল্প মেয়াদে কী হতে যাচ্ছে সে বিবেচনাটি সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। বরং দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থা কী হবে সেটিই মূল বিবেচ্য বিষয়। ’ সেই দীর্ঘমেয়াদি বিবেচনার জায়গা থেকেও বাংলাদেশের অবস্থা তুলনামূলক আশাব্যঞ্জক বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। কারণ আমাদের অর্থনীতির যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত ব্যক্তি খাতের (‘কতিপয়’ বাদে) বিকাশ সহায়ক যে পরিবেশ এ দেশে গত এক যুগেরও বেশি সময়ে তৈরি হয়েছে, তাতে বলা যায় ব্যক্তি খাতের প্রাধান্যে এ দেশের অর্থনীতি শত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও অনন্য উচ্চতায় উঠতে যাচ্ছে। বোস্টন কনসালটেন্সি গ্রুপের (বিসিজি) প্রতিবেদনের বরাতে এমন খবরই পাওয়া যাচ্ছে দৈনিক পত্রিকাগুলোতে। বিসিজি বলছে, গড় মাত্রার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারলেই ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করবে। আর এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে দেশের ব্যক্তিমালিকানাধীন কম্পানিগুলো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব প্রযুক্তিনির্ভর, আশাবাদী নেতৃত্বের পরিচালনায় দেশজ কম্পানিগুলোর অনেকটিই এর মধ্যে বহুজাতিক বড় কম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ কম্পানিই উচ্চাকাঙ্ক্ষী দীর্ঘমেয়াদি ভিশন নিয়ে এগোচ্ছে এবং ৬১ শতাংশেরই আন্তর্জাতিক বাজারে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার কৌশল রয়েছে। এই উদ্যোক্তারা এতটা আত্মবিশ্বাসী হতে পারছেন, কারণ আমাদের রয়েছে অপেক্ষাকৃত তরুণ জনশক্তি (গড় বয়স ২৮ বছর) এবং এখানে মধ্যম ও উচ্চ আয় শ্রেণির বিকাশ হচ্ছে দ্রুত (২০২০ সালের ১৯ মিলিয়ন নাগরিক থেকে ২০২৫ সালে বেড়ে হবে ৩৪ মিলিয়ন)। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে আসবেন। আমাদের নয়া ভোক্তাদের অবদানও এ ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য।

এ কথা স্পষ্ট যে আমাদের আত্মবিশ্বাসী হওয়ার বাস্তব ক্ষেত্র রয়েছে। তাই নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আশাবাদী হতে কোনো বাধা নেই। একই সঙ্গে চলমান সংকটের কারণে যে চ্যালেঞ্জগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর দিকেও নীতি-মনোযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বিদ্যমান এই চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি সংবেদনশীল থেকেই আমাদের আত্মবিশ্বাসী অগ্রযাত্রাকে চলমান রাখতে হবে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে ভরসার সামাজিক পুঁজি তৈরির দিকেই মন দিতে হবে।

লেখক : ড. আতিউর রহমান  – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ