1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সয়াবিন তেলের চাপ কমাতে দেশে দ্বিগুণ সরিষার চাষ

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

গত বছরের চেয়ে এবার কুমিল্লায় দ্বিগুণ জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সয়াবিন তেলের ওপর থেকে চাপ কমাতে জেলায় সরিষার আবাদ বাড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলনের আশা তাদের। ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ সরিষা চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি অফিস।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গোমতিরচরসহ বিভিন্ন স্থানের মাঠঘাট ছেয়ে গেছে সরিষার হলুদ ফুলে। সরিষার ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। সরিষার হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত মাঠ।

সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন শত শত কৃষক

চার বছর আগে বুড়িচংয়ের মোকাম ইউনিয়নের পরিহলপাড়া গ্রামে ১৬০ শতক জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন হুমায়ুন কবির। এরই মধ্যে মাছ চাষে বদলে যায় তার অর্থনৈতিক অবস্থা। তবে এবার মাছ চাষে রাজি নন তিনি। বছরজুড়ে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল থাকায় এবার সরিষা চাষ করেছেন। উদ্দেশ্য একটাই, পরিবারে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটানো ও বিক্রি।

হুমায়ুনের মতো জেলার শত শত কৃষক এ বছর সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ ধানের বদলে সরিষা, কেউ মাছের বদলে সরিষা চাষ করেছেন। ফলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়বে সরিষা আবাদ—এমনটাই প্রত্যাশা চাষিদের।

সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষক আবু আহমেদ ৩০০ শতক জমিতে এবার ধানের বদলে সরিষা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল। তেলের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছি আমরা। পরিবারে তেলের চাহিদা মেটাতে বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আবাদ ভালো হলে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করবো। এই উপজেলায় শত শত কৃষক সরিষা চাষ করেছেন।’

সদর দক্ষিণ উপজেলায় এবার সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটে গেছে বলে দাবি করেছেন সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার। তিনি বলেন, ‘উপজেলায় ১৮৫ হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। মূলত ভোজ্যতেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে কৃষকরা এই বিপ্লব ঘটিয়েছেন। আমরা বহুদিন ধরে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। এবার তারা সাড়া দিয়েছেন। আশা করছি, প্রত্যাশার চেয়ে লাভবান হবেন কৃষকরা।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, গত বছর জেলার ১৭ উপজেলায় আট হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এ বছর তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; অর্থাৎ ১৬ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছর জেলায় সরিষা উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার মেট্রিক টন। এবার লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণের বেশি। এবার সরিষা চাষে যুক্ত হয়েছেন ৩০-৩৫ হাজার কৃষক। যা গত বছরের তুলনায় অর্ধেকের বেশি।

হঠাৎ কেন সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষক

মাছ চাষ ছেড়ে সরিষা আবাদে কেন ঝুঁকেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘শীতকালে মাছ তেমন বড় হয় না। তাই লাভের বদলে লোকসানের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তার সঙ্গে মাছের খাবার, রক্ষণাবেক্ষণ, ওষুধসহ বিভিন্ন খরচ আছে। ধান চাষ করলে জমি চাষ, সমান করা, সেচ দেওয়া, আলাদা করে ধানের চারা লাগানোর খরচ তো আছেই। কিন্তু সরিষা বিনা চাষেই উৎপাদন করা যায়। জমি সমান করা লাগে না, সেচ লাগে না। শুধু রোপণ করে দিলেই হয়। আর তেমন খরচ নেই। খাটা-খাটুনি ছাড়াই সরিষার ভালো ফলন পাওয়া যায়। এর সঙ্গে পরিবারে ভোজ্যতেলের চাহিদা তো আছেই। দেড়-দুই বছর ধরে তেলের দাম বেশি। এসব কারণে সরিষা আবাদে ঝুঁকেছি।’

উপজেলার অধিকাংশ কৃষক সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন জানিয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সরিষার উৎপাদন বেশি হলে মানুষ সরিষার তেল কম দামে পাবে। সয়াবিন তেলের বিকল্প হয়ে উঠবে। চাহিদা কমলে সয়াবিন তেলেরও দাম কমে যাবে। সরিষা আবাদে অনেক সুবিধা আছে। আমার তেল কেনা লাগবে না। সরিষা থেকে খৈল হয়। গরুর খৈল কেনা লাগবে না। ফলে সরিষা চাষে লাভ ছাড়া লোকসান নেই বললেই চলে।’

বছরজুড়ে সয়াবিন তেল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার কৃষক ইব্রাহিম মিয়া। এজন্য ২০ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম বেশি। মূলত পরিবারের খরচের কথা চিন্তা করে এবার সরিষা চাষ করেছি। আশা করছি, এবার তেল কেনা লাগবে না।’

যা বলছে কৃষি অফিস

সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার জন্য এক বছর আগে থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি বলে জানালেন বুড়িচং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বানিন রায়। তিনি বলেন, ‘আমার উপজেলার ইউনিয়নগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেছি। কোন চাষির কি সমস্যা? কি করলে তারা সরিষা চাষে আগ্রহী হবেন? কীভাবে তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে সরিষা চাষে কাজে লাগানো যায়—এসব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করেছি। এবার আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন কৃষকরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন হুমায়ুন কবির। তার ১৬০ শতক মাছ চাষের বেড়িতে এবার সরিষা চাষ করেছেন। উপজেলার ৮০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করেছি। আমরা কৃষকদের পাশে সবসময় আছি। তাই তারাও সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। আশা করছি, ভালো ফলন হবে।’

জেলায় সরিষার আবাদ বাড়াতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ চাষ ও ফলন হবে। তিন মাসের মধ্যে ফসল আসবে। এজন্য যে পরিমাণ সার ও বীজ দরকার আমরা সরকারিভাবে কৃষকদের দিয়েছি। সেইসঙ্গে কৃষকদের সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।’

এবার জেলায় সরিষা আবাদের বিপ্লব হবে উল্লেখ করে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘এতে আমদানিনির্ভর ভোজ্যতেলের পরিবর্তে সরিষার তেল ব্যবহারের দিকে ঝুঁকবেন মানুষজন। দেশের অর্থনীতিতে আসবে সাফল্য।’


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ