1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ভিতের ওপর স্মার্ট বাংলাদেশ

অজিত কুমার সরকার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২

২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছরে দুটি মহান ধারা এক মোহনায় এসে মিলিত হয়েছিল। এমন মহামিলনের অভূতপূর্ব সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী ঘোষণা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের বাস্তবায়নও পূর্ণতা পেয়েছিল। ক্ষণটির বিশেষ তাৎপর্যময় আরো একটি দিক প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্যঃস্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে দূরদর্শী চিন্তা থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণের অসাধারণ যাত্রা শুরু করেছিলেন।

ভেবে অবাক হতে হয় বঙ্গবন্ধু এমন একটা সময়ে এসব কার্যক্রম গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন শুরু করেন যখন দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশ টিকে থাকবে কি না এ নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেন। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অস্টিন রবিনসনের ‘ইকোনমিক প্রসপেক্টস অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থে (১৯৭৩ সালে প্রকাশিত) বাংলাদেশের ভবিষ্যেক ম্যালথাসিয়ান স্ট্যাগনেশনের সঙ্গে তুলনা করে দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যুর পরিণতি বরণের পূর্বাভাস প্রদান এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যায়িত করার কথা প্রায় সবারই জানা। তেমনি এক পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনার মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আর্থ রিসোর্সেস টেকনোলজি স্যাটেলাইট (ইআরটিএস) প্রগ্রাম বাস্তবায়ন, বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রের উদ্বোধন, বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের লক্ষ্যে কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রণয়ন, আইটিইউয়ের সদস্য পদ লাভ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা, রেডিও-টেলিভিশন প্রযুক্তি দেশেই তৈরির নির্দেশসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনি প্রকৃতপক্ষে প্রযুক্তির একটা শক্ত ভিত্তি দাঁড় করেছিলেন। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন করে এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পর সংগত কারণে অনেকের মতোই আমার মনেও কৌতূহল ছিল রূপকল্প ২০২১-এর নির্ধারিত সময় ১৩ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরবর্তী পদক্ষেপ বা কর্মসূচি নিয়ে। অবশ্য এই কৌতূহলের অবসান হতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভায় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর প্রায় আট মাস পর ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের। তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আর সেই সঙ্গে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ’ তিনি স্পষ্টতই স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভের কথাও জানিয়ে দিলেন। এগুলো হচ্ছে, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি। স্মর্তব্য যে ২০০৮ সালে একই দিনে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার করেছিলেন। জাতীয় নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের এই ঘোষণাই যে ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে আগামী নির্বাচনের স্লোগান হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।

প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তা কেমন হবে? আদৌ তা সফল হবে কি না—এ কথাও বলছেন কেউ কেউ? প্রথম প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছি আইসিটি বিভাগের জাইকা এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) সহযোগিতায় প্রণীত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১’ পড়ে। এস্তোনিয়ার ‘ই-আইডি’, ভারতের ‘আধার কার্ড’, কোরিয়ার চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (ফোরআইআর) পলিসি ও উদ্যোগসহ যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বিশ্বের তথ্য-প্রযুক্তিতে অগ্রগামী বিভিন্ন দেশের ভালো অনুশীলনের (বেস্ট প্র্যাকটিস) মডেলগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ স্টাডি করে প্রণীত এই মাস্টারপ্ল্যানের মোদ্দাকথা হলো, আগামী দিনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি) মতো আধুনিক ও নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাণিজ্য, পরিবহন, পরিবেশ, শক্তি ও সম্পদ, অবকাঠামো, অর্থনীতি, বাণিজ্য, গভর্ন্যান্স, আর্থিক লেনদেন, সাপ্লাই চেইন, নিরাপত্তা, এন্টারপ্রেনারশিপ, কমিউনিটিসহ নানা খাত অধিকতর দক্ষতার দ্বারা পরিচালনা করা হবে। দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রচলন করা হবে। বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে গড়ে তোলার প্রকল্পসহ ৪০টি মেগাপ্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় অর্থনীতিতে আইসিটি খাতের অবদান অন্তত ২০ শতাংশ নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য, ডিজিটাল বাংলাদেশের মতোই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ন করছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি দেশীয় বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করেই তা করছেন।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য কয়েকটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। প্রথমত, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সাফল্য মানুষের মনে প্রযুক্তিনির্ভর যেকোনো কর্মসূচি গ্রহণের ব্যাপারে সরকারের প্রতি আস্থা তৈরি করেছে। ফলে বর্তমানে দেশে প্রযুক্তির বিরোধিতাকারী কোনো দল বা গোষ্ঠী নেই। এমনকি ২০০৯ সালে যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়, তখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ যে মহলটি ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে তির্যক ভাষায় কটাক্ষ করেছে, তারাও এখন তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার করছে; যদিও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে এর অপব্যবহারও করছে।

দ্বিতীয়ত, টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শীর্ষ নেতৃত্বের দূরদর্শিতা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়ন সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও জ্ঞান। তাঁরা সার্বক্ষণিক বিশ্বে প্রযুক্তির উন্নয়নগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সেই আলোকে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশবান্ধব পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল গ্রহণ করছেন। এই পরিকল্পনা ও নীতি-কৌশলে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগগুলোকে স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বিত করা হচ্ছে।

তৃতীয়ত, প্রযুক্তিতে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রবেশগম্যতা ও অভিযোজন, যা স্মার্ট বাংলাদেশের চার স্তম্ভের বাস্তবায়ন এগিয়ে নেওয়ার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে এবং চতুর্থত, সরকার শুধু স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই থেমে থাকেনি, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে একটি নির্বাহী কমিটি, যারা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ প্রতিষ্ঠার জন্য নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সুপারিশ করবে। এই কমিটিতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আলোচ্য বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিলে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত সুচিন্তিত ও সময়োচিত, যা প্রশংসার দাবি রাখে। মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি দ্রুতগামী ট্রেনের মতো। এতে যারা সময়মতো না চড়বে, তারা উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়বে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), বিগ ডাটা, রোবটিকস, ব্লকচেইন, থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মতো প্রাগ্রসর প্রযুক্তি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের গতিকে ক্ষিপ্র থেকে ক্ষিপ্রতর করছে। এই গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা অর্থনীতিবিদ ক্লস সোয়াব বলেছেন, ‘ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন ইজ ইভলভিং অ্যাট অ্যান এক্সপোনেন্সিয়াল রাদার দ্যান এ লিনিয়ার পেস। ’ এই বাক্যটির বাংলা অর্থ হলো—‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব একটি রৈখিক গতির পরিবর্তে সূচকীয় গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। ’ এই পরিবর্তন এমন একটি লাইন তৈরি করছে, যা আকাশচুম্বী। এই পরিবর্তনের সঙ্গে যারা তাল মিলিয়ে চলছে, তারা ট্রিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল ইকোনমি গড়ে তুলছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আইসিটি রপ্তানি ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বোঝাই যায়, এমন এক বাস্তবতায় এই পরিবর্তনের সঙ্গে মিলিয়ে চলার জন্যই সরকার ২০৪১ সাল নাগাদ একটি জ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধিশালী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। এখন শুধু দেখার অপেক্ষা কিভাবে এই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়।

লেখক : অজিত কুমার সরকার – সিনিয়র সাংবাদিক। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ