1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধু টানেল: গুরুত্ব পাবে পণ্যবাহী যান

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের টোলের খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে ব্যক্তিগত গাড়ির টোল পণ্যবাহী যানের তুলনায় বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে।

সেতু বিভাগের সূত্র জানায়, টোলের খসড়া প্রস্তাবে অর্থ বিভাগ অনুমোদন দেওয়ার পর তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে টানেলের টোলের তালিকা প্রকাশ করবে সেতু বিভাগ।

মূলত চট্টগ্রামে অবস্থিত শাহ আমানত সেতুর টোলের অঙ্ককে ভিত্তি ধরে টানেলের টোল নির্ধারণ করা হচ্ছে। শাহ আমানত সেতুর তুলনায় দেড় থেকে তিন গুণ পর্যন্ত টোল বাড়তে পারে বলে সূত্র জানায়। টোলের তালিকায় ১২ ধরনের যান চলাচলের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের প্রধান নদী কর্ণফুলীর দুই পার তলদেশ দিয়ে যুক্ত করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এটি দক্ষিণ এশিয়া ও দেশের প্রথম টানেল। এর নির্মাণকাজ আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এরপর শুরু হবে যান চলাচলের প্রস্তুতি।

বর্তমানে শাহ আমানত সেতুতে ১১ ধরনের যান চলাচল করে। এতে যাত্রীবাহী বাসে ১৫৫ টাকা, মিনিবাসে ৫০ টাকা, ট্রেইলারে ৭৫০ টাকা, বড় ট্রাকে ৩০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২০০ টাকা, ছোট ট্রাকে ১৭০ টাকা, কৃষিযানে ১৩৫ টাকা, মাইক্রোবাস ও পিকআপে ১০০ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ি ৭৫ টাকা, অটোরিকশা ৩০ টাকা এবং মোটরসাইকেলের জন্য ১০ টাকা টোল নেওয়া হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু টানেলের টোল নির্ধারণে একটি কমিটি রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘আমাদের দেশে এটিই প্রথম টানেল। তাই টানেলের টোল নির্ধারণে আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সেতুর তুলনায় টানেলের টোল কেমন ধরা হয়, খোঁজ নিয়ে সেটা দেখা হয়েছে। এ ছাড়া টানেলের কাছাকাছি শাহ আমানত সেতু হয়েছে। তাই আমরা শাহ আমানত সেতুকে ভিত্তি ধরে টোল নির্ধারণ করছি। ’ তিনি বলেন, টানেলে পণ্যবাহী যান গুরুত্ব পাবে। টোলের ক্ষেত্রে তারা কিছুটা ছাড়ও পাবে।

শাহ আমানত সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৫০ মিটার, প্রস্থ ২৪.৪০ মিটার। এতে চার লেনের সড়কপথ রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ১২০ মিটার সংযোগ সড়ক। সংযোগ সড়কও সেতুর সড়কের মতো প্রশস্ত। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে এতে যান চলাচল শুরু হয়। সেতুর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৫৯০ কোটি টাকা।

এদিকে টিউবসহ কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার। টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা প্রান্তে শূন্য দশমিক ৫৫ কিলোমিটার, আনোয়ারা প্রান্তে ৪.৮ কিলোমিটারসহ মোট ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ সড়কের সঙ্গে ৭২৭ মিটার উড়ালসেতু রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পে ৯.৩৯ কিলোমিটার নতুন পথ তৈরি করা হচ্ছে। নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।

সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, শাহ আমানত সেতুর তুলনায় বঙ্গবন্ধু টানেলের দৈর্ঘ্য তিন গুণের বেশি। সে অনুযায়ী সেতুর তুলনায় টানেলে টোল বেশি হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে সেতুকে ভিত্তি করে টানেলের টোল নির্ধারণ করা হচ্ছে না। কমিটি নানা কিছু যাচাই-বাছাই করে টোলের হার চূড়ান্ত করবে।

টোল নির্ধারণ কমিটি সূত্রে জানা যায়, টানেলে মোটরসাইকেল, কার ও জিপজাতীয় যান, পিকআপ, মাইক্রোবাস, ছোট বাস (৩১ আসন বা এর কম), মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি), বড় বাস (তিন এক্সেল), ছোট ট্রাক (পাঁচ টন পর্যন্ত), মাঝারি ট্রাক (পাঁচ টনের বেশি থেকে আট টন পর্যন্ত), মাঝারি ট্রাক (আট টনের বেশি থেকে ১১ টন পর্যন্ত), ট্রাক (তিন এক্সেল পর্যন্ত), ট্রেইলার (চার এক্সেল পর্যন্ত)—এসব যান চলাচল করবে। এমন বিভাজন করেই টোল নির্ধারণ করা হচ্ছে।

টানেল চালু হলে কী পরিমাণ যান চলাচল করবে, এ নিয়ে ২০১৩ সালে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। সেই সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, টানেল চালুর বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলবে। এর মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যান। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সালে এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।

বঙ্গবন্ধু টানেলটি কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে পশ্চিম প্রান্তে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) ও কর্ণফুলী সার কারখানার (কাফকো) মাঝখান দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছেছে। টানেলটি নির্মাণের মূল লক্ষ্য আনোয়ারা এলাকাকে শিল্প শহর হিসেবে গড়ে তোলা। তাই পণ্যবাহী যান চলাচলের সুবিধার্থে তাদের টোল তুলনামূলকভাবে কম থাকবে আর ব্যক্তিগত যানে টোল থাকবে বেশি।

টানেলের ব্যবস্থাপনার ব্যয় সেতুর তুলনায় অনেক বেশি। তাই টোলও যেকোনো সেতুর তুলনায় বেশি হবে, এটাই স্বাভাবিক বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক। তিনি বলেন, সেতুতে আলো-বাতাসের জন্য কোনো টাকা খরচ করতে হয় না। আগুন প্রতিরোধকের কোনো ব্যবস্থা রাখতে হয় না। কিন্তু টানেলে আলো-বাতাসের জন্যও টাকা খরচ করতে হবে। এখানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। বিদেশিরা নিয়মিত এর তদারক করবে। ফলে এসব খরচ তো টোল থেকেই তুলতে হবে।

শামছুল হক বলেন, মূলত টানেলের আসল দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার। সোয়া ছয় কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পরিচালন ও ব্যবস্থাপনায় ব্যয় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার মতো। আর এতে খরচ হবে ৯০০ কোটি টাকারও বেশি। টানেলের নির্মাণ ব্যয়ও বেশি। আবার ব্যবস্থাপনার খরচ ডলারে নিয়মিত বিদেশ যাবে। সব মিলিয়ে সেতুর তুলনায় বেশি টোল নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে দুটি টিউব রয়েছে। দক্ষিণ পাশের টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী যান চলাচল করবে। এই টিউবটির অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ঠিক পাশের উত্তর টিউবটি দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী যান চলাচল করবে। এই টিউবের সার্বিক নির্মাণকাজও প্রায় শেষের পথে। নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৪ শতাংশ।

টানেলের ২.৪৫ কিলোমিটার টিউবটি মূলত নদীর তলদেশে অবস্থিত। টিউবের ভেতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার।

সম্প্রতি টানেলসহ পুরো প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সংযোগ উড়ালসেতু ও সংযোগ সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। দুই প্রান্তে বসেছে টোল প্লাজা। আনোয়ারা প্রান্তে সড়কের দৈর্ঘ্য ও টোল প্লাজার সংখ্যা বেশি। টানেলে দক্ষিণ টিউবের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলেও চলছে উত্তর টিউবের নির্মাণকাজ। তবে দুই টিউবেই বর্তমানে একসঙ্গে চলছে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। এ ছাড়া বাতাস নির্গমন ব্যবস্থা সচল রাখা, অগ্নিনির্বাপণ, পানি নিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, কমিউনিকেশন ও মনিটরিং ব্যবস্থাপনা স্থাপনের কাজ চলছে। এই কাজগুলো শেষ হলে টানেল গাড়ি চলাচলের উপযোগী হবে।

টানেল উদ্বোধন হলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ। কর্ণফুলী নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ