1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জননিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজনীতিকদের দায়

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনের বাংলাদেশসহ গোটা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রায় ধারাবাহিক প্রতিবেদনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির চিত্র উঠে আসছে। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক চিত্র জটিল পরিস্থিতির দিকে মোড় নিচ্ছে। রাজনীতির নানা সমীকরণের হিসাব কষে আন্দোলনকারী দলগুলো মাঠপর্যায়ে আন্দোলন পরিচালনা করছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিবেশ কোন দিকে প্রবাহিত হবে তা আন্দাজ করা না গেলেও জননিরাপত্তা নিয়ে যে শঙ্কা, তা ঠিকই বাড়ছে। কারণ অক্টোবরের শেষে এসে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠা, আন্দোলন-সংগ্রামের নামে যানবাহনে আগুন লাগানো, ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলনে সমর্থন আদায়ের চেষ্টার মধ্যে জননিরাপত্তার শঙ্কার দিকটিই স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রথমে হরতাল, পরে একের পর এক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠ যেমন উত্তপ্ত হচ্ছে, তেমন আন্দোলন সহিংসতার দিকে ঠেলতেও রয়েছে উস্কানি। এরই প্রতিফলন কয়েকবার দেখা গেছে অবরোধ ডাকার আগের দিন রাতে যানবাহনে আগুন দিয়ে জনমনে ভীতি তৈরি এবং আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা। যদিও তাদের এ কৌশল খুব যে কার্যকর ভূমিকা রাখছে কিংবা আন্দোলনে গতি আনছে সঙ্গত কারণেই তা বলার সুযোগ নেই। কারণ জনগোষ্ঠীর বৃহদাংশ সহিংসতা কখনোই সমর্থন করে না। আর এ কারণেই সরকারি দলের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের ধারণা, বিরোধী দলের আন্দোলন বেকায়দায় পড়েছে। তবে অবস্থা যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী দল বিশেষত বিএনপির পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে তাদের সমমনা বেশ কয়েকটি দল আন্দোলনের পথ ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে আবারও যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে তা হলো, তফসিল ঘোষণার আগেও আমরা যেমন দেখেছি, আন্দোলনকারী দলগুলোর (সবার নয়) রাজনৈতিক কৌশল নির্বাচনমুখী ছিল না; তফসিল ঘোষণার পরও তা দেখা যায়নি। তাদের একাংশ সেই একই পথে এগোচ্ছে। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। কারণ তাদের দলের নীতিনির্ধারক অনেকেই জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী নন। তারা মনে করেন, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও তারা জয়ী হতে পারবেন না। তাদের এ রাজনৈতিক কৌশল সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যে বর্জন করেছে বলেই মনে হচ্ছে। তাই দলগুলো রাজনৈতিক কৌশলে বদল আনার কথাও ভাবছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন তাদের একাংশ বানচাল করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টাই করে চলেছে অভিযোগ আছে এও। নির্বাচন সঠিক সময়ে আয়োজিত না হলে একাধিক সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে এ তো অমূলক কথা নয়। নির্বাচিত নয় এমন কাউকে সরকারের দায়িত্বে আনার কৌশলের দিকে ঝুঁকছে আন্দোলনকারী দলগুলো এমন গুঞ্জনও শোনা গেছে। এমনটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্য সুখকর কিছু হতে পারে না।

রাজনৈতিক অঙ্গনের সংকট মেরুকরণের কৌশলে পরিবর্তন হচ্ছে। গণমুখী আন্দোলনের পরিবর্তে তারা এগিয়ে চলেছে আবেগের ভিত্তিতে। তাদের মধ্যে এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে, বাইরের কোনো শক্তি তাদের সহযোগিতা করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। তা ছাড়া আবেগ দ্বারা পরিচালিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও সহিংসতার কারণে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চিন্তা অপকৌশল ভিন্ন কিছু নয়; তাও শান্তিপ্রিয়দের অভিমত। আমরা দেখছি, বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে রাজপথে। তফসিলের আগে কূটনৈতিক পর্যায়ে তোড়জোড় চালিয়ে গেছে। তবে দৃশ্যমান অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে তফসিল ঘোষণার পরও বিভিন্ন কূটনীতিকের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছেন তারা এবং সম্পর্কোন্নয়নে জোর দিয়ে চলেছেন। ২৩ নভেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে হরতাল-অবরোধ-সহিংসতার নানা চিত্রের বিবরণ তুলে ধরে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠিতে দায়ী করে আন্তর্জাতিক তদন্তও দাবি করেছে বিএনপি।

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতা ছায়া ছড়িয়ে জটিলতা আরও বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। যদিও বিএনপি দাবি করছে সহিংসতার জন্য ক্ষমতাসীন দলই দায়ী কিন্তু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন আমাদের সামনে ভিন্ন চিত্রই উপস্থাপন করে। সহিংসতামূলক রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে কূটনৈতিক চ্যানেলে সমর্থন অর্জন সম্ভব নয়। আগেই বলেছি, দেশের সিংহভাগ মানুষ শান্তিপ্রিয়। তারা ইতোমধ্যে হরতাল-অবরোধের মতো সহিংসতামূলক কর্মসূচি ত্যাগ করেছে। আন্দোলনকারীদের পক্ষেও সহিংসতার মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। ক্রমাগত হরতাল-অবরোধের আবেদনও কমবে। তাদের সহযাত্রী কেউ কেউ তা অনুধাবন করেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের আবেদন হারাবে রাজপথের অনেক নেতাকর্মীর কাছেও। আর এ আবেদন হারানোর প্রেক্ষাপটেই সহিংসতার মাত্রা বাড়ার শঙ্কাও বাড়বে। তাই সঠিক সময়ে নির্বাচন আয়োজন এবং তা প্রশ্নমুক্ত করা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনে যারা অংশ নিতে চলেছেন তাদের রাজনৈতিক কৌশলে সমন্বয়মূলক প্রক্রিয়া যুক্ত করতে হবে।

জননিরাপত্তাই প্রাধান্য পায় সবার আগে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রযুক্তিগত ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দক্ষ করে তোলার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে সরকারকে। অতীতেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। তখনও আমরা দেখেছি, জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। অর্থনীতির ক্ষতির পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করেছে। যখন জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি জনসমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হবে তখন আন্দোলন তার নিজস্ব গতি হারাবেÑএমনটি তো আমাদের অভিজ্ঞতায়ই আছে। আলোচনায় সংকট নিরসনের পথ উন্মুক্ত রাখা উচিতÑএমন অভিমত নানা মহল থেকে বারবার ব্যক্ত হলেও কার্যত এর সুফল দৃশ্যমান হয়নি। আলোচনার টেবিলে অনেক সমস্যার নিরসন সম্ভব এ কথা অমূলক নয়। আন্দোলনকারী দলগুলোকে যদি আলোচনার টেবিলে একত্র করা যেত তাহলে হয়তো সমাধান মিলত। তা ছাড়া যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাননি তাদের আর কোনো অজুহাত দেখানোর সুযোগ থাকত না। অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাড়তি মনোযোগ রাখতে হবে। একই সঙ্গে রাজনীতিকদেরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সচেতন থাকতে হবে জনগণকেও। যেকোনো জায়গায় দুর্বৃত্তদের কোনো অপতৎপরতা দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করতে হবে।

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহনশীলতার পরিচয়ও দিতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সচেতন মানুষমাত্রই জানা। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পথেই অভিযুক্তদের বিচার করতে হবে। সহিংস আন্দোলন দমন করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী যেন বলপ্রয়োগ না করে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। সহিংস পরিস্থিতি যেন আরও জটিলতার দিকে না যায় মনোযোগ রাখতে হবে সেদিকেও। আমাদের অভিজ্ঞতায় এও আছে, নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ে। আবার বৈধ অস্ত্রের প্রদর্শনীও অনেক সময় বেড়ে যায়। অনেক সময় প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রদর্শনের জন্যই এমনটি ঘটে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। এসব বিষয়ে মানুষকে অবহিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রচার চালাতে হবে। নির্বাচনের সময় অবৈধ অস্ত্রের বাজার থাকে চাঙা। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে নির্বাচন প্রভাবিত করতে চেষ্টা করবে সমাজবিরোধী শক্তি এ আশঙ্কাও আমলে রাখা বাঞ্ছনীয়। যে চ্যানেলে অবৈধ অস্ত্র স্থানান্তরিত হয় তা চিহ্নিত করে অবশ্যই প্রতিবিধান করতে হবে। গণতন্ত্রে সহিংসতার স্থান নেই।

যে কর্মসূচি জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে তা রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। পরমতসহিষ্ণুতা খুব জরুরি। রাজনীতিকদের কাছে দেশ-জাতির স্বার্থ প্রাধান্য পাবে এটাই তো স্বাভাবিক প্রত্যাশা। রাজনীতিকরা যদি সত্যিকার অর্থেই জনকল্যাণের লক্ষ্যে রাজনীতি করেন, চলমান সহিংস পরিস্থিতির ব্যাখ্যা আন্দোলনকারীরা কী দেবেন? আন্দোলন কিংবা অধিকার আদায়ের জন্য তো জনশান্তির বিঘ্ন ঘটানোর অধিকার কারও নেই। মানুষ দগ্ধ হবে, সম্পদের বিনাশ ঘটবে, জনজীবন ত্রাসের বৃত্তে বন্দি থাকবে রাজনৈতিক কারণে; এর দায়ই বা আন্দোলনকারী দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা এড়াবেন কী করে? জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রথমত দায় সরকারের হলেও রাজনীতিকদেরও এ ব্যাপারে দায়দায়িত্ব নিশ্চয়ই রয়েছে। এ দায়টুকু যেন তারা ভুলে না যান।

লেখক: মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ – নিরাপত্তা-বিশ্লেষক ও নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ