1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অপেক্ষা ছাড়া বিএনপির আর কোনো সুযোগ নেই

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩

এ বছর ১০ ডিসেম্বর ছিল জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের ৭৫তম বার্ষিকী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপ ও জাপানে যে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছিল আর যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই লক্ষ্যে জাতিসংঘে ১৯৪৮ সালে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে একটি মানবাধিকার সনদ গৃহীত হয়। এই সনদ প্রণয়নে যার সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তিনি হচ্ছেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের (১৯৩৩-৪৫) স্ত্রী ইলিনর রুজভেল্ট। মজার বিষয় হচ্ছে সেই সনদ যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন করে ৪৮ বছর পর প্রেসিডেন্ট কার্টারের সময়। আর সেই যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বে মানবাধিকারের স্বঘোষিত বড় রক্ষা কর্তা। আমরা দেখছি, ফিলিস্তিনে যে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটছে তার বড় পৃষ্ঠপোষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে তারা ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ার মতো দেশ ধ্বংস করেছে। তারপরও তারা মানবাধিকারের সবক দেয়! দুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রধারীরা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছে। এরকম ঘটনা মানবাধিকারের অন্যতম সবক দানকারী ওই দেশটিতে প্রায়ই ঘটে। তারা নিজের দিকে না তাকিয়ে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর জন্য সব সময়ই তৎপর থাকে এবং এর পেছনে নিহিত থাকে নানারকম কদর্য উদ্দেশ্য।

প্রতিবছর এই দিনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ৮ ডিসেম্বর। এই প্রতিবেদনটি সামনে রেখে বাংলাদেশে এক অভূতপূর্ব প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে বিএনপি ও তার নানা রঙের মিত্ররা আশা করছিল যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম একেবারে শীর্ষে থাকবে আর তাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের পরামর্শ না শোনার দায়ে শায়েস্তা করার জন্য তার ওপর বড় ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেবে। তারা বছরখানেক ধরে ‘শেখ হাসিনা হঠাও’ আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত বিএনপি ও তার মিত্রদের মদদ দিয়ে আসছে বলে সাধারণের ধারণা।

আমরা জানি, এরই মধ্যে বিএনপি ও তার মিত্ররা পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করেছে, ঘুমন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, গণহারে সাংবাদিক পিটিয়েছে, হাসপাতালে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে, প্রায় পৌনে ৩০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, রেলের ফিশপ্লেট খুলে নাশকতা করার চেষ্টা করেছে কিন্তু শেখ হাসিনা বা তার সরকারকে টলানো যায়নি। শেষ ভরসা যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কর্মকাণ্ড দেখে বিএনপি এবং তার মিত্ররা মনে করে এ মুহূর্তে তিনি তাদের বড় সুহৃদ ও ত্রাণকর্তা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ছাড়াও আর যে মহল এমন একটি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাশা করেছিল তাদের মধ্যে আছে বিদেশি অর্থে লালিত সুশীল সমাজের একটি বড় অংশ, কিছু এনজিও, আছে কিছু মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আর পণ্ডিতজন। অন্যদিকে সরকারি দলও আশা করছিল নির্বাচনের আগে এমন একটি নিষেধাজ্ঞা যেন না আসে। শেষতক দেখা গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে ১৩টি দেশ ও ৩৭ জন পদাধিকারীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের নাম নেই। তাদের এই ঘোষণায় চরমভাবে হতাশ হয়েছে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাশাকারীরা আর স্বস্তি পেয়েছে সরকার ও সরকারি দল। আমাদের সমাজে ‘আশায় গুড়েবালি’ প্রবাদটি বহুল প্রচলিত। এক্ষেত্রে এই প্রবাদটি অত্যন্ত সাযুজ্যপূর্ণ বলে মনে করি। একইসঙ্গে একথাও বলতে চাই, যারা দেশ-জাতির জন্য দুঃসংবাদের প্রত্যাশা করেন তাদের রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক।

বাংলাদেশে কিছু কিছু রাজনৈতিক দল আছে এবং একই সঙ্গে কিছু ব্যক্তিও আছেন যারা সর্বদা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে তৎপর থাকেন। নিজ স্বার্থে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে তারা কখনও কুণ্ঠিত হন না। ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বিএনপি প্রধান ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে তার লিখিত এক প্রবন্ধে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের দেয় সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানান। প্রয়োজনে তাদের কেউ কেউ সেই দেশের সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানদের বোঝানোর চেষ্টা করেন শেখ হাসিনার আমলে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। তারা যদি এগিয়ে না আসে তাহলে বাংলা নামের কোনো দেশ আর অবশিষ্ট থাকবে না। তারা ভুলে যান তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে কেমনভাবে পাল্টে গেছে, তা গোপন কোনো বিষয় নয়।

অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলাফল কী হতে পারে? বিশ্বায়নের এই যুগে তেমন একটা যে কিছু হয় তা কিন্তু নয়। গত জুলাই মাসে কম্বোডিয়ায় একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ক্ষমতাসীন পিপলস পার্টির প্রধান ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ঘোষণা করলেন তার দল ছাড়া আর কোনো দল এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। হলোও তাই। যুক্তরাষ্ট্র হুন সেনের ওপর তথাকথিত ‘ভিসা ব্যান’ ঘোষণা করল, যার অর্থ হুন সেন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন না। হুন সেন যুক্তরাষ্ট্রে নাইবা গেলেন তাতে কী হলো? দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য যথারীতি চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইএসএআইডি মাস দুয়েক সেই দেশে তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখল। এখন তা আবার চালু হয়েছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব (১৯৯২-৯৬) বুট্রোস ঘালি একবার বলেছিলেন এই সব নিষেধাজ্ঞা এখন ভোঁতা অস্ত্র বৈ আর কিছু নয়। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা যদি খাদ্য বা নিত্যপণ্য সরবরাহের ওপর হয়, তাহলে তা মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। নব্বইয়ের দশকে ইরাকে এমন একটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল জাতিসংঘ আর যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে সেই দেশে খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে কয়েক হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল শিশু মারা গিয়েছিল; যা ছিল এক ধরনের গণহত্যা। এমন ঘটনা ইরান, ভেনিজুয়েলা ও উত্তর কোরিয়াতেও ঘটেছিল।

যারা প্রত্যাশা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে সেই দেশে বাংলাদেশ থেকে আর পোশাক রপ্তানি করা যাবে না, তারা হয়তো জানে না বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে কোনো ধরনের শুল্ক সুবিধা পায় না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজনেই তারা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করে। ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি না করলে সেই ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে? চীন তো যুক্তরাষ্ট্রের ‘শত্রু’ দেশ। কিন্তু চীন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এক নম্বর। শুল্ক দেয় মাত্র ৩ শতাংশ। চীন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাও তৈরি করে। যে ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এত এত বাণিজ্যিক লেনদেন, সেই ভিয়েতনামে মানবাধিকার একটি অপরিচিত শব্দ। কারও কারও হিসাব ছিল যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে দেশে খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষতি হতে পারে। তারা ভুলে যান যে বাংলাদেশ মৌলিক খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়েক ডজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরিভাবে এককও বলা যাবে না, বলতে হবে তা সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা। কারণ, এই নিষেধাজ্ঞায় যুক্ত রয়েছে যুক্তরাজ্য এবং কানাডাও। এই তিনটি দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের নানামাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে, বাংলাদেশে সর্বাধিক বিদেশি বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের। তারা কোন দুঃখে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে? মাঝেমধ্যে তারা তাদের অপছন্দের মানুষকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। তেমন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ দিয়ে থাকে। এটি একটি প্রচলিত রীতি। এ নিয়ে এত হইহট্টগোল করার কোনো অর্থ নেই। যারা ‘শেখ হাসিনা হঠাও’ আন্দোলনের নামে দেশে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন তাদের উচিত বাস্তবমুখী কর্মসূচি দিয়ে পরবর্তী নির্বাচনের দিকে নজর দেওয়া। নির্বাচনের ট্রেন ছেড়ে গেছে। তাতে ওঠার সুযোগ নেই। পরবর্তী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা যেতে পারে।

লেখক: আবদুল মান্নান – শিক্ষাবিদ, গবেষক, রাজনীতি ও সমাজ বিশ্লেষক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ