1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশ ইস্যুতে মিত্রদের পাশে পাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশ, পৃথিবীর ইতিহাসে আত্মমর্যাদায় বলিয়ান একটি সমৃদ্ধ জাতি। ১৯৭১ এ স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিগুলোর অপপ্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে লাল-সবুজের পতাকা ছিনিয়ে নিয়ে আসেন অসম সাহসী বাঙালি জাতি। আত্মমর্যাদায় পাহাড়সম বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যাদুকরী নেতৃত্বে এই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের উৎপত্তি। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিগুলোর সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী সকল অপশক্তিগুলোর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ সগৌরবে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে। হাঁটছেন বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পথে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে আত্মমর্যাদায় বলিয়ান এই বাঙালি জাতি যখনই নিজেদের মুক্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার পথে হাঁটতে শুরু করেছে তখনই তার বিরোধিতায় আবির্ভূত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো কর্তৃত্ববাদী মানসিকতাসম্পন্ন রাষ্ট্রটি। উল্লেখ্য, আমেরিকার কেন্দ্রীয় প্রশাসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্ন থেকেই পাকিস্তানের সপক্ষে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে তার নীতি ঘোষণা করেছিল। তারা গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের জনগণের সমর্থনে এগিয়ে আসেনি। তারা দাঁড়িয়েছে পাকিস্তানের অখণ্ডতার নামে স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা অগণতান্ত্রিক শক্তির সপক্ষে। এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে যেই বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে অভিযাত্রা শুরু করেছে সেই বাংলাদেশের বিরোধিতা শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করে দিতে সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের এই বিরোধী অবস্থানে মিত্রদের পাশে পাচ্ছেনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারমানে বাংলাদেশ ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের পাশে পাচ্ছেনা তারা।

যেমন, বিএনপির গত ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনার পর পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বিবৃতির ভাষা নিয়ে তাদের মধ্যে দেখা দেয় মতবিরোধ। একমত হতে সময় লাগে দু’দিন। এর পর যে বিবৃতি আসে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ সাতটি দেশ বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানায়। তবে সংঘর্ষের দিনই ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা জানায়। ভিসা নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে ঘটনাগুলো পর্যালোচনা হবে বলেও উল্লেখ করে। ২৯ অক্টোবর এ ব্যাপারে পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে ২৭ পশ্চিমা দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বিবৃতিতে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খোঁজার কথাও বলা হয়। তবে মজার বিষয় হচ্ছে গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ও বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউর অবস্থান স্পষ্টতই আলাদা। বাংলাদেশ নিয়ে ইদানীং বেশ কিছু ঘটনায় পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে একমত হতে যুক্তরাষ্ট্রকে বেগ পেতে হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যে ভাষায় বিবৃতি দিতে চাচ্ছে, অন্যরা তাতে রাজি হচ্ছে না। বিবৃতির ভাষা পরিবর্তনে শর্ত আসছে, ঐকমত্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে। শেষ পর্যন্ত নমনীয় ভাষায় বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। এছারাও বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও শ্রম অধিকার বিষয়ে সম্প্রতি ঢাকায় পশ্চিমা কূটনীতিকদের নির্বাচন ও শ্রম অধিকার নিয়ে তাদের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে কেউই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যে তারা তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বলেছে, তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে। এজন্য সংলাপ করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করলে ভিসা না দেওয়ার কথাও বলে দিয়েছে ওয়াশিংটন।

এদিকে বাংলাদেশের ব্যাপারে রাশিয়া ও চীন তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছে, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, যা সংবিধান অনুযায়ী হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করছে বলেও মনে করে রাশিয়া ও চীন। বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেছে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র বলে পরিচিত ভারত। তবে নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের মতের বিপরীতে গিয়ে ভারত বলেছে, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এছাড়াও বাংলাদেশ নিয়ে ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইতালি, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড ও জাপানের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, কৌশলগত লক্ষ্য ও অগ্রাধিকার রয়েছে। তাই বাংলাদেশে নির্বাচন ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে তাদের পাশে পাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই রয়েছে। তারমানে বৈশ্বিক নানা বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলিকে তারা পাশে পেলেও বাংলাদেশের ইস্যুতে পাশে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের মানুষের বিরোধিতা করে আসতেছে। বাংলাদেশ যখনই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে হাঁটা শুরু করেছে তখনই তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বিরোধিতা করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড এম. নিক্সন এবং হেনরি কিসিঞ্জার ছিলেন নিক্সনের একান্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি, যিনি তখন আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক প্রেসিডেন্টের একান্ত সহকারী। এই নিক্সন-কিসিঞ্জার নিয়ন্ত্রিত মার্কিন নীতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে পরিচালিত হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা পাকিস্তানের এমন একটি অত্যাচারী সরকারের সপক্ষে দাঁড়াল যে সরকার তার পূর্বাঞ্চলের নিরীহ জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানের পক্ষে নিক্সন-কিসিঞ্জারের প্রকাশ্য সমর্থন কিংবা পাকিস্তানের প্রতি ঝুঁকে পড়া নীতি অনুসরণ নিছক পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা ছিল না। তখনকার মার্কিন প্রশাসনের নীতি এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়, যা ঐ ঝুঁকে পড়ার সীমা ছাড়িয়ে যায়। বলা যায়, প্রায় অনেকটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে তথা পাকিস্তানের সপক্ষে আমেরিকার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ কিংবা মদদদান। আমেরিকা ঐ অবস্থান গ্রহণ করার কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বানচাল করতে পাকিস্তানকে সামরিক ও নৈতিক সমর্থন জানায়।

মুক্তিযুদ্ধের পরও বাংলাদেশের অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পিছনে সরাসরি মদদ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। যেমন ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ পর থেকে পরের সময় গুলোতে জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের সামরিক শাসনামলের সব ধরনের অগণতান্ত্রিক এবং অমানবিক কার্যকলাপেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের মন্তব্য করেনি। ঐ সময় নীরব থেকে সামরিক শাসনামলের সকল কার্যকলাপকে বৈধতা দিয়ে গিয়েছে। এছাড়াও এক-এগারোর সময় ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভুমিকা ও নীতি ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ ২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করে প্রথমেই আক্রমণ করে রাজনীতির ওপর। ঢালাওভাবে গ্রেফতার শুরু হয় রাজনীতিবিদদের। রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ প্রমাণের এক নোংরা খেলা শুরু হয়। প্রভাবশালী গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন চলে। বিনা অভিযোগে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। আওয়ামিলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামিলীগের কোনো নেতাকেই ছাড়েনি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এসব কিছুর পিছনে সরাসরি মদদ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানেই কারণে বা অকারণে বাংলাদেশের বিরোধিতা। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাদের বিরোধিতা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু তাদের এই বিরোধিতা কখনও বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার যাদুকরী নেতৃত্ব ও কঠোর পরিশ্রমে গড়ে তোলা আত্মমর্যাদায় বলিয়ান বাঙালি জাতির পথচলা তথা বাংলাদেশের পথ চলাকে ব্যাহত করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু হাতে গড়া বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে দেখিয়েছেন গণতন্ত্রের পথ। বাঙালি জনগণকে দিয়েছে ভাত ও ভোটের অধিকার। তার যাদুকরী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে স্মার্ট এবং আধুনিক বাংলাদেশ পথে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে এই পথচলা আজ বিশ্বজনীন। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ভুমিকা বিশ্ব বিদিত। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোসহ বিশ্বের অন্যান্য সকল দেশ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভুমিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সেজন্য গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের কোন ধরনের বিরোধিতা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেও অবগত এসব ব্যাপারে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিরোধিতা মূলত বিরোধিতা করার স্বার্থে বিরোধিতা। মানে বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের বিরোধিতা করা ঐতিহ্য ধরে রাখার স্বার্থেই তাদের এই বিরোধিতা। সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ইস্যুতে তাদের মিত্র দেশগুলোকে পাচ্ছে না। আর ভবিষ্যতেও পাবেনা। এই সব ধরনের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও বিরোধিতাকে উপেক্ষা করে আত্মমর্যাদায় বলিয়ান বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ক্রমে এগিয়ে যাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিরোধিতা অতীতেও বাংলাদেশের পথচলাকে কখনও ব্যাহত করতে পারেনি এবং বর্তমান বা ভবিষ্যতেও কোনদিন পারবেনা।

লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া – উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ