1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রাষ্ট্র মেরামত নয়, বিনির্মাণ করতে হয়

অধ্যাপক ড. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩

বইপুস্তক ও পত্রপত্রিকায় এতকাল পড়ে এসেছি, রাষ্ট্র বিনির্মাণ বা সংস্কার করতে হয়। যেকোনো রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভের পর কী চরিত্রে পরবর্তীকালে গড়ে উঠবে, সেটি সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় অঙ্গপ্রতিষ্ঠানকে কাঠামোগত, আর্থ-সামাজিক ও আদর্শগত চরিত্র নিয়ে শুরু থেকে বিনির্মাণ করতে হয়। পুরনো ঔপনিবেশিক কিংবা আধা ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসার পর স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থাকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাথায় রেখেই নতুন রাষ্ট্রকাঠামো, আইন, বিধি-বিধান, সংবিধান, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি গড়ে তুলতে হয়। সেই সঙ্গে এর আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নও করতে হয়।

এ জন্য বলা হয়ে থাকে স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বিনির্মাণ করতে হয়, যুগের প্রয়োজনে এবং সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংস্কারেরও প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বিনির্মিত রাষ্ট্রব্যবস্থা হতে পারে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, হতে পারে রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, হতে পারে সমাজতান্ত্রিক, এমনকি নিয়মতান্ত্রিক রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাও। এটি বিভিন্ন রাষ্ট্রের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ অথবা নেতৃত্বের প্রতিশ্রুত ব্যবস্থা।

কোনো ব্যবস্থাই হয়তো চিরকাল টিকে থাকেনি কিংবা এক রকমও থাকেনি। যে ব্যবস্থাই জনগণ এবং নেতৃত্ব প্রদানকারী দল বা সরকার গ্রহণ করেছে, সেটিকে সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিনির্মাণ করতে হয়েছে। যারা প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করেছে, তারা প্রবর্তিত ও বিনির্মিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে জনগণের কাছে দীর্ঘকাল গ্রহণযোগ্যতা প্রদান করতে পেরেছে। যে রাষ্ট্রে সেই বিষয়গুলো রাজনৈতিক নেতৃত্ব যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারেনি, সে রাষ্ট্রব্যবস্থা অচল হয়েছে। সেটিকে শাসক শ্রেণি স্বৈরতন্ত্র দিয়ে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। কখনো কখনো স্বৈরতন্ত্র তা ধরে রাখতে পারেনি। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল, এগুলোর বিনির্মাণ সংস্কারের মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হয়নি। রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাও অনেক দেশে উচ্ছেদ হয়ে গেছে। আবার ভুটান সংস্কারের মাধ্যমে রাজতন্ত্রকে নামমাত্র অবস্থানে রেখে সংস্কারবাদী ধারায় গণতন্ত্রে উত্তরণের পাটাতন তৈরি করছে। রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিজ্ঞতা তাই কোথাও সুখকর, কোথাও সংকটময়, কোথাও বা দুঃখজনক অধ্যায় পার করছে।

স্বাধীনতা লাভ করাই শেষ কথা নয়, জনকল্যাণবাদী রাষ্ট্র নির্মাণ করা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেশপ্রেম, প্রজ্ঞা ও সৃজনশীলতারও গভীরতর বিষয়। সেটি করতে পারে একমাত্র সেই প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্র নির্মাণে সক্ষম রাজনৈতিক নেতৃত্ব, দল ও জনগণ। রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই সেই উদ্যোগ নিতে হয়। তবে রাষ্ট্র বিনির্মাণের মতো কঠিন, জটিল, দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ কোনো দেশেই অঢেল নয়, বরং ব্যতিক্রমী বাস্তবতা। সেই অল্পসংখ্যকের মধ্যেও সবাই সফল হবেন, এমনটি সরলভাবে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।

স্বাধীনতা যেমন একটি জাতির জন্য শত সহস্র বছরের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিষয় হতে পারে, রাষ্ট্র নির্মাণের বিষয়টিও এর চেয়ে মোটেও কম জটিল নয়, কম গুরুত্বপূর্ণও নয়। কিন্তু সব রাজনীতিবিদ যদি রাষ্ট্র, রাজনীতির ইতিহাসের এসব জটিল শিক্ষা নিতেন বা জানতেন, তাহলে আজকের দুনিয়ার রাষ্ট্রব্যবস্থার ভাগ্যাকাশ অন্যভাবে নির্মিত হতো। রাজনীতির বেশির ভাগ দল ও নেতাকর্মী রাষ্ট্র বিনির্মাণের কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মেধা, যোগ্যতা ও আদর্শ ধারণ করেন না। এর পরও তাঁরাই রাজনীতিবিদ। সব রাজনীতির নেতাকর্মীই রাষ্ট্র বিনির্মাণ বা সংস্কার সম্পর্কে সচেতন, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু ব্যতিক্রম যিনি হন, তিনিই ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনে স্মরণীয় হয়ে থাকেন।

রাষ্ট্রের স্বাধীনতা লাভ, বিনির্মাণ ও সংস্কারের এমন ঐতিহাসিক ভূমিকার বিষয় নিয়ে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অন্যান্য জ্ঞান শাখা কাজ করে থাকে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই রাজনীতি পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রের আইন, বিধি-বিধান, সংস্কারকে প্রাধান্যও দেওয়া হয়। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও একাডেমিয়ার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্ক বজায় রাখে। কারণ আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণের বিষয়গুলোর দিন দিন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর রাজনৈতিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও শক্তির ওপর নির্ভর করে চলতে পারে না। তাকে রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, জনমত এবং একাডেমিয়ার ওপরও আস্থা রাখতে হয়। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সেসব মতের কতটা গ্রহণ করতে হবে, কি হবে না, তা বোঝার মতো রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগ্যতা একক বা সমষ্টিগতভাবে হলেও থাকতে হয়। সেটি অনেকে করেও থাকেন। আবার অনেকে ততটা গভীরে যেতে পারছেন না।

এ ধরনের একটি ব্যবস্থা উন্নত দুনিয়ায় রয়েছে। কিন্তু আমাদের অবস্থাটা কী? এই প্রশ্নের উত্তর বোধ হয় আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের খুব অল্পসংখ্যকই বুঝতে বা প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারে। বেশির ভাগই পারে না, সেটি তো বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বক্তৃতা, কথাবার্তা, কর্মসূচি, দাবিনামা ইত্যাদির প্রায় পুরোটাই জড়িত থাকে ক্ষমতাকেন্দ্রিকতাকে ঘিরে। ক্ষমতায় যাওয়া এবং থাকার বাইরে ভাবার মতো দলের প্রচণ্ড অভাব, তেমন নেতৃত্ব বিরল প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিনির্মাণের যাত্রা শুরু করেছিলেন। রাজনীতিতে অনেকেই আছেন, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর সূচিত রাষ্ট্র বিনির্মাণের সেই জটিল ও কঠিন সময়ের উদ্যোগগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত নন। কারণ তাঁরা সেই সময়ের রাষ্ট্রীয় দলিল, নির্মিত প্রতিষ্ঠান, আইন-কানুন, উদ্যোগ ইত্যাদিকে রাষ্ট্র নির্মাণের প্রয়োজনীয় শর্ত হিসেবে দেখতে বা বুঝতে কতটা সক্ষম, সেটাই মৌলিক প্রশ্ন। তবে তথ্যহীনভাবে নানা বিকৃত কথাবার্তা শুনে মন্তব্য করতে অনেকেই অভ্যস্ত।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন, যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, যাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে নিয়ে দুনিয়ার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে এই সংবিধান রচনা করেছিলেন, যেটিকে নিয়ে বাংলাদেশ অনেক দূর পর্যন্ত স্বচ্ছন্দে যেতে পারবে বলে বিশ্বাস করত। তাঁদের এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়েই বঙ্গবন্ধু প্রথম পঞ্চবার্ষিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করলেন। একই সঙ্গে একাডেমিয়াকে ব্যবহার করে তিনি নতুন রাষ্ট্রের জন্য জাতি গঠনের একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিলেন। রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রতিষ্ঠান, আইন, বিচার, শিক্ষা, সংস্কৃতি, পররাষ্ট্রনীতি তিনি ও তাঁর সরকার নানা সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটিয়ে রাষ্ট্র বিনির্মাণের সূচনাকে প্রশস্ত করছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শুধু তাঁকেই নয়, আমাদের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদেরও জীবন কেড়ে নিয়েছিল। বাংলাদেশ বিনির্মাণ অসমাপ্ত রয়ে গেল।

এরপর সামরিক শাসন থেকে শুরু করে আধাসামরিক শাসন রাষ্ট্রের গতিপথ ঘুরিয়ে দিয়েছিল। রাষ্ট্রের আদর্শও পথ হারায়। দীর্ঘদিন রাষ্ট্র বিনির্মাণের আয়োজন বন্ধ রেখে একটি আধাসাম্প্রদায়িক, সামরিক ও নামমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আরোপিত ব্যবস্থাই এখানে শিকড় গেড়েছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের যাত্রা নতুন করে পুরোপুরি শুরু করা যায়নি। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৭২ সালের সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও পুরোপুরি সফল হননি। পদে পদে ছিল তাঁর বাধা। বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতির সর্বত্রই বিভাজিত এক জাতিরাষ্ট্রের বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে উঠল এবং ২০০১ সালের পর সেটি একটি প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রের অবস্থানকেই যেন জানান দেওয়ার চেষ্টা করল। ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনা পুনরায় কল্যাণবাদী রাষ্ট্রের ধারণায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেও পদে পদে বাধার সম্মুখীন হলেন। এই সময়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের এবং উন্নয়নশীল দেশের অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হলেও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সব দিক থেকেই বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। বাংলাদেশে রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিযাত্রা যেখানে প্রয়োজনীয় জায়গায় পৌঁছাতেই পারেনি, প্রয়োজনীয় সংস্কারও সাধন করা যায়নি, সেখানে এখন রাজনীতিতে নতুন এক চমক সৃষ্টির ধারণা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে ৩৬টি দল। রাষ্ট্র মেরামত তত্ত্ব নিয়ে বিভিন্ন দল ও জোট নানা দফা প্রতিশ্রুতির ফুল ফোটানোর চেষ্টা করছে।

বিএনপি ২৭ দফায় ‘রাষ্ট্র মেরামত রূপরেখা’ ঘোষণা করেছে, জামায়াত ১০ দফায় ২৭ দফার মূল বিষয়গুলো রেখেছে, সাতদলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ ১৪ দফায় প্রায় অভিন্ন কথাই বলেছে। মোট ৩৬টি রাজনৈতিক দল নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন ঘটিয়ে তারা বর্তমান সরকারকে উত্খাত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে মেরামত করার এসব দাবিনামা হাজির করেছে বলে দাবি করছে। মেরামত কথাটির মধ্যেই তাদের রাজনীতির অপরিপক্বতা ও কপটতা স্পষ্ট। এই রাজনৈতিক দলগুলোর কোনোটিই বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম বা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব কিংবা অংশগ্রহণ অথবা রাষ্ট্র বিনির্মাণের সূচনা পর্বের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। জামায়াত দলগতভাবে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্য, আদর্শের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন, বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক, সামরিক, আধাসামরিক, নামমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অতীতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁরাই এখন রাষ্ট্র বিনির্মাণ বা সংস্কার নয়, রাষ্ট্র মেরামত করার এক আজগুবি তত্ত্ব হাজির করেছেন।

এই রাষ্ট্রে ‘রংধনু জাতি’ গঠনের নামে স্বাধীনতাবিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ বিভিন্ন শক্তির এক জাতি গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রসিডেন্ট ডেসমন্ড টুটু ও নেলসন ম্যান্ডেলার ‘রেইনবো নেশন’ তত্ত্বের ব্যর্থ চেষ্টারই নামান্তর মাত্র। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ, জাতিগত বিরোধ গত ২৫ বছরে কয়েক গুণ বেড়েছে, কমেনি। ২৭ দফার বিভিন্ন দফায় সংবিধান পরিবর্তন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার, আওয়ামী লীগের শাসনামলের দুর্নীতি, লুটপাট, গুম, খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদির ব্যাপারে কমিশন গঠন, তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু পূর্ববর্তী শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, খুন, হত্যা, জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো বক্তব্য নেই। সংসদ দ্বিকক্ষ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। এসব প্রতিশ্রুতি রাষ্ট্র মেরামতের মুখরোচক কথায় যাঁরা উপস্থাপন করেছেন, তাঁরা স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্র নির্মাণের কোনো পর্বেই ছিলেন না। রাষ্ট্র সম্ভবত তাঁদের কাছে ভাঙা খেলনা অথবা ছোটখাটো যানবাহন মেরামতের মতোই মনে হতে পারে। তবে সে ধরনের কাজ করার জন্য হাতুড়ি, বাটাল, পেরেকও তাঁরা কোনো দিন হাতে নিয়ে দেখেছেন বলে তো মনে হয় না। সব দফার মধ্যেই রয়েছে স্ববিরোধিতা, আবার এসব দফা বাস্তবায়ন করতে হলে দলগুলোর গঠনতন্ত্র ও আদর্শের পরিবর্তন করতে হবে। ২৭ দফায় যখন বলা হয় ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’, তখন তাঁদের পূর্ববর্তী রাজনীতির সঙ্গে এর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাম্প্রদায়িক ডান চিন্তার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা রাষ্ট্র মেরামতের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা তাঁদের পক্ষে মেরামত করা সম্ভব নয়, এটি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত। তাহলে কেন তাঁদের এই মেরামত তত্ত্ব? আগে রাষ্ট্র নির্মাণের রাজনৈতিক কারিগর হতে হবে, প্রয়োজনীয় সব জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তা না করে যদি রাষ্ট্র মেরামত তত্ত্ব নিয়ে মাঠে নামেন, তাহলে নিজেদের দলের অভ্যন্তরেই প্রশ্ন উঠবে।

লেখক : ড়. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী – সাবেক অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ