প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য ও কৃষি সংস্থাকে (এফএও) একটি আন্তর্জাতিক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, একটি আন্তর্জাতিক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।
রোববার (১৩ মার্চ) এফএওর মহাপরিচালক (ডিজি) কু ডংইউ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় এই প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতাকে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ডিজিটালাইজেশন এবং উদ্ভাবনের প্রকল্প গ্রহণের জন্য একটি সমন্বিত তহবিল গঠনের জন্য এফএওর ডিজিকে পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অবদান রাখতে প্রস্তুত বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এফএও মহাপরিচালক এ বছর ইতালির রোমে ৩-৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব খাদ্য ফোরামে প্ল্যানারি স্পিকার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় তার সংস্থার অবিরাম সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আরও শক্তিশালী, উদ্ভাবনী এবং ডিজিটাল পদ্ধতির সঙ্গে বিদ্যমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখারও আশ্বাস দেন।
তবে চাষের উপযোগী পর্যাপ্ত জমি না থাকায় প্রধানমন্ত্রী সিভিএফ (ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম) দেশগুলো, বিশেষ করে এসআইডিএস (ছোট দ্বীপ উন্নয়ন রাজ্য) অর্জনের ক্ষেত্রে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই পদ্ধতিতে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য মহাপরিচালককে পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তিনি দেশকে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছেন, যেখানে মানুষ উন্নত জীবন পাবে।
শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে তার অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করে বলেন, সেসময় (১৯৯৬ সালে) তার সরকার গঠনের পরপরই বাংলাদেশ মারাত্মক খাদ্য ঘাটতিতে ভুগছিল। তারপর মাত্র দুই বছর পর তার সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে সামর্থ্যবান হয়ে ওঠে।
খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনই তার প্রথম অগ্রাধিকার ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ দেশটি বিপুল জনসংখ্যা এবং চাষযোগ্য জমির অভাবজনিত প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন ছিল। তবে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া- লবণ, খরা, জলাবদ্ধতা প্রভৃতি সহিষ্ণু ফসলের বিভিন্ন প্রজাতির বিকাশে দুর্দান্ত কাজ করছেন।
তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পর তার সরকার এখন সবার জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছে। চলমান কোভিড মহামারির মতো যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় তিনি খাদ্য সংরক্ষণ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ওপর জোর দিচ্ছেন বলেও জানান।
এফএও মহাপরিচালক ঢাকায় ৩৬তম এফএও আঞ্চলিক সম্মেলন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের (এপিআরসি) সফল আয়োজনে গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি খাদ্যশস্য, শাকসবজি, প্রাণিজ প্রোটিনসহ সব ধরনের খাদ্য নিরাপত্তা দ্রুত অর্জনে শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন।
কু ডংইউ আরও বেশি করে খাদ্য ও অর্থকরী ফসল উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় রাজনৈতিক সমর্থনের প্রশংসা করেন। এছাড়াও শেখ হাসিনার উন্নয়ন কৌশলের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে তার অগ্রণী ভূমিকার কথাও স্বীকার করেন, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহুল প্রশংসিত।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, রোমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান এবং প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এবিএম সরওয়ার-ই-আলম সরকার।
এছাড়াও এফএও সদর দপ্তরের (রোম) প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো তোরেরো, এফএও আঞ্চলিক অফিস, ব্যাংককের সহকারী মহাপরিচালক জং-জিন কিম এবং এফএওর ঢাকাস্থ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
