1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন গতি, বিদ্যুতে বদলে যাচ্ছে অর্থনীতি

এম আর মাসফি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০২২

দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রভাবে বদলে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এসেছে নতুন গতি। শিল্পকারখানাগুলোকে আর লোডশেডিংয়ের সমস্যায় পড়তে হয় না। বিদ্যুতের অভাবে কাজ না করে আর কলকারখানার কর্মীদের অলস সময় কাটাতে হয় না। শিল্পকারখানার আধুনিকায়নেও এসেছে নতুন প্রযুক্তি। আজ বিদ্যুতের সুফল কাজে লাগিয়ে গ্রামেও আধুনিক চাষাবাদ, খামার ও ইন্টারনেটভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। অথচ মাত্র একযুগ আগে, বড় বড় শহরগুলো পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে ডুবে থাকত। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিদ্যুৎ খাতের দৃশ্যপট আমূল বদলে দিয়েছে। এখন শুধু শহরাঞ্চলেই নয়, বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদও। বিদ্যুতের জাদুর ছোঁয়ায় চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযুগ আগে যে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা প্রায় সবই পূরণ হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ তার সুফলও পাচ্ছে। ২০০৯ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন দায়িত্ব নেন, তখনও দেশের মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত। নিয়মিত লোডশেডিংয়ে তখন জনজীবন বিপর্যস্ত ছিল। বিদ্যুৎ খাতের এই করুণ অবস্থার কারণে বৃহৎ শিল্পগুলো যেমন একদিকে ধুঁকছিল, তেমনিভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়েও কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু গত এক যুগে সেই পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। এখন দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। আর বিদ্যুৎ খাতের এই পরিবর্তনের ফলে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড মজবুত হতে শুরু করেছে। সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ খাতের সাফল্য ছোট-বড়-মাঝারি শিল্পে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। বিদ্যুতায়নের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক উন্নতির কারণেই বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ৯৯.৮৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে সরকার। বাকি শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ এলাকার মধ্যে অতিদুর্গম হিসেবে পরিচিত তিন পার্বত্য জেলার কিছু এলাকা রয়েছে এখনও বিদ্যুৎবিহীন। এসব এলাকাও দ্রুত বিদ্যুতের আওতায় চলে আসবে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।

গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, গ্রামে বিদ্যুৎ যাওয়ার ফলে কৃষি অর্থনীতিতে পড়েছে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব। কৃষি উৎপাদনে বেড়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার। এতে নতুন নতুন জীবিকার পথ তৈরি হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও বড় অবদান রাখবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, গত অর্থবছরে দেশের মোট জিডিপিতে বিদ্যুৎ খাতের অবদান ছিল ২৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। গত এক যুগে জিডিপিতে বিদ্যুৎ খাতের অবদান বেড়েছে পৌনে ৩ শতাংশ। জিডিপিতে এ খাতের অবদানে প্রবৃদ্ধি গত বছরে হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। মোট জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল ১ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। মোট বিদ্যুতের ৭০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় বেসরকারি খাতে। এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও বেসরকারি খাত এগিয়ে এসেছে। বর্তমানে মোট বিদ্যুতের ৪৩ শতাংশ বেসরকারি খাতে উৎপাদন হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন হচ্ছে ৬ শতাংশ।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এ মুহূর্তে আমরা বলতে পারি, পুরো দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসে গেছে। বিশেষ করে দুর্গম চরাঞ্চল ও বিচ্ছিন্ন কিছু এলাকা, যেখানে শুরুতে সৌরবিদ্যুৎ ও জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হয়েছিল, সেখানে এখন সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে গেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের সব পর্যায়ের মানুষের ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাব। আমরা প্রতিশ্রুতি রাখতে পেরেছি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ বছরে ৩ কোটি ১৩ লাখের বেশি নতুন গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে। এর ফলে দেশের ৯৯.৮৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বেড়েছে বিদ্যুতের মাথাপিছু ব্যবহারও, যা প্রায় ১৪৬ শতাংশ। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই হার ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ।

বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন হতো ৩২৬৮ মেগাওয়াট। ২০২১ সালে সেই উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৭৯২ মেগাওয়াট। ১২ বছরে বেড়েছে ১০ হাজার ৫৪২ মেগাওয়াট। উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। সেটিও বেড়ে হয়েছে ২২ হাজার ২৯৬ মেগাওয়াট। ১২ বছরে বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াট। একইভাবে ২০০৯ সালে যেখানে বিদ্যুতের গ্রাহক ছিল মাত্র ১ কোটি ৮ লাখ, সেখানে ১২ বছর পর বিদ্যুতের গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২১ লাখে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের মতে, বাংলাদেশে ১০ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে এর প্রভাব সামষ্টিক অর্থনীতিতেও পড়ে। এতে অর্থনীতিতে বাড়তি যোগ হয় প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ থেকে ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বিআইডিএসের গবেষণা মতে, ২০১০ সালের আগে দেশে চাল আমদানিতে প্রতিবছর প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হতো, সেচব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারায় কৃষি উৎপাদন বেড়েছে, এখন চাল আমদানির প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া শিল্প ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারার কারণে। বেড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পরিমাণ।

বিদ্যুতের এই সাফল্য শিল্প খাতে কেমন প্রভাব ফেলেছে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক মালিক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সময়ের আলোকে বলেন, বিদ্যুতের ফলে গত এক দশকে বৈপ্লবির পরিবর্তন এসেছে শিল্প খাতে। আগের মতো এখন আর সেই লোডশেডিং নেই। এখন আর কাজ ফেলে বসে থাকতে হয় না। শিল্পকারখানায় জেনারেটরের ব্যবহার একেবারে কমে এসেছে। চীনের মতো দেশেও যেখানে লোডশেডিংয়ের ঝামেলা পোহাতে হয় সেখানে আমরা খুব ভালো আছি।

 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ