1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

যে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে

অধ্যাপক ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩

৭ মার্চ ১৯৭১। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের বিশাল জনসমুদ্র। ‘সমুদ্র’ অর্থে সমুদ্র নয়- প্রকৃতপক্ষে সে এক উত্তপ্ত ও উষ্ণ জনসমাগম। লক্ষ লক্ষ মানুষের একত্রিত এই সম্মেলন সমুদ্রের জলরাশির সঙ্গেই তুলনীয়। সম্মিলিত জনতার সেই সমাবেশকে সমুদ্রের উপমা দিয়েই যথাযথ বুঝানো সম্ভব। সমুদ্রের জলরাশির মতোই অগণন মানুষের উপস্থিতিতে সেদিনকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের জনসভা রূপ নিয়েছিল মহা এক জনসমুদ্রে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের সেই জনসভা থেকে একটি ঘোষণা আসবে বলে, সেই জনসভা থেকে সাড়ে সাত কোটি নিপীড়িত মানুষের পক্ষে একটি অমর বাণীর উচ্চারণ ঘটবে বলে, সে দিনের সেই জনসভা থেকে একটি আগুন জ্বলে উঠবে বলে এবং বলাবাহুল্য, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের সেই জনসভা থেকে একটি অমর কবিতা রচিত হবে বলে উন্মুখ জনতার আগমন ঘটেছিল বাংলার নানা প্রান্ত থেকে। চা-শ্রমিক থেকে বাওয়ালিরা যেমন এসেছিলেন তেমনি এসেছিলেন সমতলের কৃষক, নদীর মাঝি ও জেলে, এসেছিলেন স্টেশনের কুলি, রিক্সাওয়ালা, কারখানার শ্রমিক, অফিসের বড়-ছোট কর্তা, কেরানি- কে নয়! এসেছিলেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-অধ্যাপক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। শারীরিক অক্ষমতা কিংবা বয়সের ভারের জন্য যারা আসতে পারেনি তারাও সমবেত হয়েছিলেন পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়- সমবেত হয়েছিলেন রেডিওতে সেই অমিত উচ্চারণ শ্রবণের আশায়। সমবেত হয়েছিলেন একটি ভাষণ শ্রবণের জন্য। সমবেত হয়েছিলেন অন্দর মহলের নারীরাও। বৈঠকখানার রেডিও থেকে ভেসে আসা বহু আকাক্সক্ষার বজ্রকণ্ঠ একটি ঘোষণা শোনবার জন্য। রেডিওতে সেই ঘোষণা শোনবার জন্য, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কাক্সিক্ষত সেই বাণীর উচ্চারণ শোনবার জন্য কত কত গ্রাম-গঞ্জ, শহর-নগরে কত কত মানুষ সমবেত হয়েছিলেন তার কোনো পরিসংখ্যান নেই! সকলেই সমবেত হয়েছিলেন একটি আগুন জ্বলে উঠবার শব্দ শোনবার জন্য, একটি গণঅগ্নুৎপাত দেখবার জন্য! সকলেই সমবেত হয়েছিলেন অমর একটি কবিতা শোনবার জন্য। অবশেষে উদগ্রীব ও উৎকর্ণ শ্রোতা-দর্শককে উজ্জীবিত করে, সকল শ্রেণির মানুষের প্রাণের আকাক্সক্ষাকে উদ্বেলিত করে ৭ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হলো সেই অমর ঘোষণা! নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হলো বিদ্রোহ! কথার পর কথার মালা সাজিয়ে বঙ্গবন্ধু একটি অমর কবিতা রচনা করলেন! সহস্র বর্ষের পরাধীনতার অর্গল ভস্মকারী এক অগ্নির প্রজ্জ্বলন ঘটালেন তিনি তার কবিতায়। বঙ্গবন্ধুর কথায়, কবিতায়, অগ্নির প্রজ্জ্বলনে, শৃঙ্খল ভাঙ্গার দীপ্ত প্রত্যয়ে সাতকোটি মানুষের বুকের ভেতর জেকে বসে থাকা হাজার বছরের মূক-বধির আকাক্সক্ষা ফল্গুধারার ন্যায় রূপ ও বাণী নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল : ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’-রূপ এই ঘোষণায়। বঙ্গবন্ধুর এই বাণী, এই কবিতায়, এই অগ্নির বিস্ফোরণের তেজ মানুষকে একত্রিত করেছিল। একটি মাত্র ভাষণে সাড়ে সাতকোটি বাঙালির কণ্ঠলগ্ন থেকে হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল যেন খুলে গেল!

সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের উত্তাল জনতা কিংবা রেডিওর সামনে আসরে আসরে বসে থাকা উন্মুখ জনতার প্রত্যেকেই অন্তর্গতভাবে কেমন এক-প্রকার ভারমুক্ত হয়ে উঠেছিল বাঙালির আত্মমুক্তির মন্ত্র শুনে! প্রজ্জ্বলিত আগুন যেমন চারিদিক আপ্লুত করে, আকর্ষণ করে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, জ্বালিয়ে নিয়ে যায় তেমনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের স্বাধীনতার এই অগ্নিগর্ভ ঘোষণা শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের মধ্যে আগুনের স্ফুলিঙ্গ সঞ্চারিত করে দিয়েছিল মুহূর্তেই। এরকম কোনো মুহূর্তকে আরো জীবন্ত করতেই হয়তো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ একদা গেয়ে উঠেছিলেন :
‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে
এ আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে।
যত সব মরা গাছের ডালে ডালে নাচে আগুন তালে তালে,
আকাশে হাত তোলে সে কার পানে?’
আঁধারের তারা যত অবাক হয়ে রয় চেয়ে,
কোথাকার পাগল হাওয়া বয় ধেয়ে!
নিশীথের বুকের মাঝে এই-যে অমল উঠল ফুটে স্বর্ণকমল,
আগুনের কী গুণ আছে কে জানে।।’

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু-ঘোষিত স্বাধীনতার সেই মহান বাণী বাঙালির চিত্তকে যেভাবে আলোড়িত করেছিল তা রবীন্দ্রনাথের এই গানের মর্মবাণীকে যেন গভীরভাবে জাজ্বল্যমান করে তোলে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার আহ্বান এদেশের সর্বস্তরের বাঙালিকে আগুনের মতো গ্রাস করেছিল, উদ্দীপ্ত করেছিল, আপ্লুত করেছিল। তাই তার ডাকে, তারই ঘোষণা মতো ‘যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা’ করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ৭ মার্চের স্বাধীনতার সেই ঘোষণাই বাঙালিকে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা লাভের লক্ষ্যে ধাবিত করেছিল। বিশাল বায়ুমণ্ডলের পরিবেষ্টনের মধ্যে বসবাস করে আমরা যেমন বাতাসের অস্তিত্বের কথা ভুলে যাই তেমনি এও মনে রাখার চেষ্টা করি না যে, কী রকমের বৈরী পরিবেশে বঙ্গবন্ধু সেদিন এরকম অগ্নিগর্ভ একটি ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। মনে রাখতে চাই না বলেই, আমাদের এই দুর্বলতার ফাঁক গলিয়ে স্বাধীন দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে নানা বিতর্কের অবকাশ সৃষ্টি করে চলেছে পাকিস্তানপন্থিরা, বিএনপির প্রথম সারির নেতারা। শুধু তাই নয়- পরাজিত পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা এখনো তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে, আর সেই আগুনে ঘি ঢেলে চলছে বিএনপি! পৃথিবীর কোনো দেশের স্থপতিকে নিয়ে এরূপ ধৃষ্টতা কেউ দেখাতে পারে না- দেখায়ও না। রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকলেও প্রত্যেক দেশেই স্ব-স্ব জাতির জনককে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার নজিরই সর্বত্র। এমনকি পাকিস্তানেও দেখি কাগুজে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মোহাম্মদ আলি জিন্নাহকেও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জনক হিসেবে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে- সম্মানের আসনে রাখা হয়েছে। অথচ, বঙ্গবন্ধুর মত তৃণমূল পর্যায় থেকে ওঠে আসা একজন নেতাকে জাতি হিসেবে আমরা যথাযোগ্য মর্যাদার আসনে বসাতে পারিনি! বাঙালি হিসেবে আমাদের চরিত্রে নৃতাত্ত্বিক কী এমন বৈশিষ্ট্য আছে তা আমাদের জানা নেই- যেজন্য হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে সপরিবারে প্রাণ হারাতে হয় এদেশেরই কিছু নরঘাতকের হাতে, যেজন্য বঙ্গবন্ধুর মত অবিসংবাদিত নেতাকেও সামরিক ছাওনি-জাত জেনারেলদের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনার সম্মুখীন করা হয়! ন্যূনতম চিন্তা পর্যন্ত করে দেখি না যে, পর্বতের সাথে মুষিকের তুলনামূলক আলোচনায় আমরা বরং নিজেদের ক্ষুদ্রত্বই প্রমাণ করি! এটি এক ধরনের ধৃষ্টতাও বটে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকদের একের পর এক ষড়যন্ত্রে বাঙালিদের মোহমুক্তি ঘটতে থাকে। পূর্ব-বাংলাকে শাসন-শোষণ, ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আঘাত, রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক বঞ্চনা প্রভৃতির মাধ্যমে বাংলাকে পশ্চাতে ফেলে রাখার পাকিস্তানি কৌশলে এদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি দিনদিন হতাশ হয়। এই হতাশাবোধ থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনার উন্মেষ ঘটে। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির সুপ্ত জাতীয় চেতনা বিকাশের পথ সৃষ্টি হয়। এই পথ সৃষ্টি করেছিলেন পঞ্চাশের দশকের তরুণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। এসব তরুণের অধিকাংশই এসেছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও ছিলেন এসব তরুণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন। শৈশব ও কৈশোর থেকে রাজনৈতিক চেতনা লালন ও রাজনীতি সচেতন ছিলেন বলে ভাষা আন্দোলনসহ সকল প্রকার আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে এই ভূগোল-বাংলায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রথমে বঙ্গবন্ধু এবং পরে জাতির জনক। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে পূর্ব-বাংলার মানুষের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পঞ্চাশের দশকে তার মতো সোচ্চার কাউকেই দেখা যায়নি। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৮ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সভায়ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দাবিতেও তার বক্তব্য ছিল বলিষ্ঠ। পূর্ব-বাংলায় শিল্পায়ন, এদেশের যুবকদের চাকরি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য তার বলিষ্ঠ বক্তব্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে চিন্তিত করে তুলেছিল। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের মধ্যেই তিনি বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি তথা ৬-দফা উত্থাপন করেছিলেন। এই ছয়-দফা পরবর্তীকালে বাঙালি জাতির জন্য ‘ম্যাগনাকার্টা’ হিসেবে বিবেচিত হয়। রাজনীতি বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন যে, এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালে ১১-দফা ভিত্তিক গণঅভ্যুত্থানে সত্তুরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পথ উন্মুক্ত হয়। বঞ্চনার বিরুদ্ধে সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লিগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই বিজয়ের কেন্দ্রবিন্দু ও হাজার বছরের শোষিত বাঙালির একমাত্র আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নির্বাচনোত্তর সত্তুরের দশকের শুরুতেই দেখি সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্টের নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পাকিস্তানি শাসকচক্রের অন্তহীন ষড়যন্ত্র। ক্ষমতা হস্তান্তর, প্রাদেশিক পরিষদের সভা আহ্বান প্রভৃতি নিয়ে পাকিস্তানিরা নতুন ষড়যন্ত্রে মত্ত হয়ে উঠে, নানা ঘটনা পরম্পরায় বিস্তার করে ষড়যন্ত্রের জাল। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র দীর্ঘস্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি। ফলে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির জন্য অনিবার্য হয়ে ওঠে। যে ভাষণের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতি একটি নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। সেই অভিজ্ঞতা স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতা রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মাধ্যমে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার প্রণোদনায় শাণিত।

৭ মার্চের ভাষণের পরে কার্যত এদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর কথাকেই রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান বলে মেনে নিয়েছিল। ফলে, পাকিস্তানি সরকার তথা রাষ্ট্রের করণীয় কিছু ছিল না- অকার্যকর হয়ে পড়েছিল শাসকের শাসনযন্ত্র। সকল ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তানিরা ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামক অভিযান চালিয়ে এদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে নিয়ে যায় পাকিস্তানের কারাগারে। সেখানে কারাগারের ভেতর চলে ‘কোর্ট মার্শাল আইনে’ বিচারের নামে প্রহসন। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে আহ্বান জানানো হয়। কোনো কোনো রাষ্ট্র পাকিস্তানের অন্যায় কোর্ট মার্শালের তীব্র নিন্দা জানায় এবং পাকিস্তানকে সতর্কও করে দেয়। অথচ শেখ মুজিব প্রসঙ্গে পাকিস্তান ছিল ‘অনড়’ অবস্থানে। কিন্তু ন্যায়ের বিপক্ষে অন্যায় টিকতে পারে না। বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র থেকে তীব্রতর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আর পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর অনিশ্চিত অবস্থান। বঙ্গবন্ধুর অবস্থান অনিশ্চিত, বঙ্গবন্ধু শারীরিকভাবে বাংলাদেশে অনুপস্থিত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এই অনিশ্চয়তা বঙ্গবন্ধুর এই অনুপস্থিতি এদেশের মুক্তিকামী বাঙালিকে কোনোভাবেই হতাশ করতে পারেনি। বরং আরো বেশি আগুনে অগ্নিল করে তুলেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রতিটি বাঙালির ভেতরকার আগুনকে শতসহস্র গুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে ৭ মার্চের ভাষণে এদেশের বাঙালিরা যে পরিমাণে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল বঙ্গবন্ধুকে বন্দি ও পাকিস্তানের কারাগারে নিক্ষেপ করায় সে আগুন বৃদ্ধি পেয়ে ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশের সর্বত্র। পাকিস্তানিরা সে আগুন থেকে রক্ষা পায়নি।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালির অন্তরে অন্তরে বঙ্গবন্ধু যে আগুনের সঞ্চার ঘটিয়েছিলেন তার উত্তাপ অনিঃশেষ। দীর্ঘদিন সামরিক ও আওয়ামী বিদ্বেষী শাসকচক্র রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় ছদ্ম-পাকিস্তানি আদর্শে পরিচালিত হয়েছে এদেশ। তাই বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি শাসকরা যেমন ঘৃণার চোখে দেখতো তেমনি দেখতো এদেশের সেনা-শাসকরাও। তারা পাকিস্তানিদের চোখ দিয়েই যেন দেখেছে বঙ্গবন্ধুকে, বাংলাদেশকে। বাঙালির অন্তর থেকে অবিনাশী সেই আগুন নিভিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে তারাও লিপ্ত ছিল নিরন্তর। কিন্তু, এখন আমরা অনেকটাই আমাদের উত্তর প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাসের ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। তাই আশা করি, অচিরেই সেই অনিঃশেষ আগুনে ভস্মীভূত হবে মিথ্যার অপলাপ। ৭ মার্চ তাই বাঙালির প্রণোদনা ও অন্তর্গত স্ফূর্তির দিন, আগুনে পুড়িয়ে আত্ম-আবিষ্কারের দিন। এ আগুন বুকের ভেতর লালন করেন বলেই বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে অভিশপ্ত দেশের কলংক মোচনে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ আগুন বুকের ভেতর লালন করে আমরাও ইতিহাস ও জাতীয় চেতনায় দিনদিন হয়ে উঠছি আরো শাণিত। আত্ম-আবিষ্কারে সক্ষম জাতি কখনো বিপথগামী হতে পারে না। একই চেতনায় আগামী প্রজন্মও বঙ্গবন্ধুর বার্তাকে যথার্থভাবে গ্রহণপূর্বক তার সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করে তুলবে। ৭ মার্চের অগ্নিল প্রেরণা বুকে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার অভিযাত্রা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার নেতৃতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাবে।

লেখক : ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম – অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ