1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশের কাছ থেকে শেখার আছে : শ্রীলঙ্কার সচিব সাগিশ্বরা

সাগিশ্বরা সেনাধিরা : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১১ মে, ২০২২

শ্রীলঙ্কা এখন এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও রাজস্ব ঘাটতিজনিত সংকট মোকাবিলা করছে। দেশটি এ নরক থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাকে কিছু গাইডলাইন দিয়েছে; তবে আঞ্চলিক অভিজ্ঞতা থেকেও শ্রীলঙ্কা তার এ সমস্যার একটা সমাধান পেতে পারে, যে অভিজ্ঞতা বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের পুনরুজ্জীবনপ্রত্যাশী একটা দেশের জন্য অনেক বেশি বাস্তবায়নযোগ্য হতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু শ্রীলঙ্কা নয়; পাকিস্তান, নেপালও গুরুতর অর্থনৈতিক ও রাজস্ব সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলা করছে। শক্তিশালী রিজার্ভের কারণে ভারতের অর্থনীতিকে মজবুত মনে হলেও দেশটি কিন্তু বিদ্যুৎ সংকটের কারণে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। ১৯৯১ সালে ভারত শ্রীলঙ্কার মতোই এক সংকটের মুখে পড়েছিল। তখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন ড. মনমোহন সিং। তিনি বেশ ভালোভাবেই তা মোকাবিলা করেছিলেন। বলা যেতে পারে, তার এ সাফল্যই কংগ্রেস যখন পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে তখন তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ পেতে সহায়তা করেছিল। এটা ঠিক, শ্রীলঙ্কার মতো একটা ছোট দেশকে ভারতের সঙ্গে তুলনা করাটা খুব যুক্তিসংগত কিছু নয়; কারণ ভারত হলো একটা আঞ্চলিক পরাশক্তি; বিশাল ভূখণ্ড ও জনসংখ্যার কারণে তার অর্থনীতির রেজিলিয়েন্স বা আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা অনেক বেশি।

তবে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের সাফল্যগাথা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ব্যাপারে বাংলাদেশ একটা দারুণ নজির তৈরি করেছে। গত ১০ বছরে (২০১০-২০২০) দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল অর্থনীতিগুলোর একটি বলে পরিচিতি পেয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে দেশটির জনসংখ্যার বোনাস কাল (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড), তেজি তৈরি পোশাক খাতনির্ভর রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স ও স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির কারণে। শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও করোনাকালে নিম্নমুখী প্রবণতার শিকার হয়েছিল; কিন্তু উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার কল্যাণে দ্রুতই তা ঘুরে দাঁড়ায়। তবে বাংলাদেশের এ সাফল্যগাথা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এ কারণে যে, ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়ার পর দেশটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি। ওই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের কারণে দেশটির অবকাঠামো ও শিল্প খাত মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছিল।

একটা গরিব দেশ হিসেবে যাত্রা করে দেশটি মাত্র চার বছরে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে উঠে আসে। আর গত এক দশকের দ্রুত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বদৌলতে দেশটি ইতোমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। দেশটি ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। দৈনিক মাথাপিছু আয় ১ দশমিক ৯ মার্কিন ডলার হিসেবে দারিদ্র্য মাপার যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আছে, সে হিসেবে দেশটিতে ১৯৯১ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ; আর ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশে। তা ছাড়া, মানব উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকেও দেশটি ব্যাপক উন্নতি করেছে।

নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান যেখানে অর্থনীতি সামলাতে খাবি খাচ্ছে; বাংলাদেশ সেখানে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটা মডেল স্থাপন করেছে। মেগা প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যাপারে বাংলাদেশ চাইলে এখন গর্ব করতে পারে। সেখানে গ্রামাঞ্চলে নগরের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কাজ চলছে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় উড়াল সড়ক দেখা যায়। মেট্রোরেলও খুব শিগগির চালু হচ্ছে। প্রমত্ত পদ্মার ওপর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বিশাল দৈর্ঘ্যের সেতু এখন আর কোনো স্বপ্ন নয়।

কৌশলগত ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির বিশ্নেষক ও গবেষক জন রোজারিও বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার দেশটির অগ্রগতি সাধনে দারুণ প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছে। এ কারণেই দেশটি একেবারে নিঃশঙ্ক চিত্তে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প নিতে পারছে। বর্তমানে সেখানে দেশব্যাপী একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ট্র্যাক রেকর্ড ভালো হওয়ায় দেশটি বেশ ভালো পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগও পাচ্ছে। এটা এখন বলাই যায়, দেশটির অর্থনীতি বেশ মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয় সত্ত্বেও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় এখন ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে। আর, দেশটির অর্থমন্ত্রী আলি সাবরির মতে, শ্রীলঙ্কার আছে মাত্র দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক ভান্ডার, যার মধ্যে আবার মাত্র ৫০ মিলিয়ন ডলার তার হাতে আছে। কাজেই বাংলাদেশ কোনোভাবেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনীয় নয়।
এমনকি করোনা মহামারির আগেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি ছিল- ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশটি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যেখানে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ‘বিস্ময়কর ধাঁধা’ বলে উল্লেখ করেছে।

রোজারিওর মতে, বাংলাদেশ হলো অলৌকিক এক গল্প; আর শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান হলো বিপর্যয়গাথা। পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণ এখন ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। একই সঙ্গে মুদ্রাস্ম্ফীতি সেখানে কোনো বাঁধ মানছে না। গত তিন বছর ধরে উন্নয়ন সেখানে থমকে আছে। রুপির ধারাবাহিক অবমূল্যায়ন, ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রাভান্ডার, ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য ও রাজস্ব ঘাটতির কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতি ইতোমধ্যে ভঙ্গুর দশায় পড়েছে। শুধু যে পাকিস্তানি রুপির অবমূল্যায়ন ঘটেছে, তা নয়; দেশটির অর্থনীতির চাকা গত তিন বছর ধরে প্রায় অচল হয়ে আছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পোৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার সামনে বর্তমানে কী কী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ আছে, সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে অর্থনৈতিক বিশ্নেষক জন রোজারিও বহু বিষয় উল্লেখ করেছেন, যেখান থেকে আগ্রহী যে কোনো দেশ শ্রীলঙ্কার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং নিজেদের জন্য শিক্ষাও গ্রহণ করতে পারেন। রোজারিও বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কা বহু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এগুলোর মধ্যে আছে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, সড়ক ও অন্যান্য প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প এখন অপ্রয়োজনীয় ও বাতিল বলে গণ্য হচ্ছে। এসব প্রকল্পের নামে একেক সরকার দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে। তারা তা করেছে অনেকটা বাছবিচারহীনভাবেই। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমশ কমে এসেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, গত ১৫ বছরে শ্রীলঙ্কা একরত্তি পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগও টানতে পারেনি। বিদেশি বিনিয়োগ টানার বদলে সরকারগুলো বরং ঋণ সংগ্রহের ওপর বেশি নজর দিয়েছে।’

তবে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা একটু হলেও পাকিস্তান ও নেপালের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। এ কথা বলার কারণ হলো, দেশটি সম্প্রতি ভারত ও চীনের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়াটি পুনর্বিন্যাসের সুযোগ পেয়েছে; আইএমএফের কাছ থেকেও দেশটি কিছু জরুরি সহায়তা পাচ্ছে। এসব পাওয়ার কারণে শ্রীলঙ্কার জন্য একটু শ্বাস ফেলার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এ সময়টাতে দেশটি তার অর্থনীতিকে আবার ট্র্যাকে তোলার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের সুযোগ পাবে। তা করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে পারে- দেশটি তৈরি পোশাকসহ বহু শিল্প ও কৃষিপণ্য রপ্তানি কীভাবে বাড়িয়েছে; একই সঙ্গে কোন প্রক্রিয়ায় এসব খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ টানতে পেরেছে।

লেখক : সাগিশ্বরা সেনাধিরা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ের গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমবিষয়ক পরিচালক। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ