1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

চিংড়ি বাংলাদেশের একটি ১০০ ভাগ কৃষিভিত্তিক ও রপ্তানীমুখী শিল্পখাত

বানিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১১ জুন, ২০২২

চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানিতে বছরে ৩০-৪০ হাজার কোটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা। স্থানীয় বাজারেও এই চিংড়ির প্রচুর চাহিদা আছে। ক্রমশ বিলুপ্ত হওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারে আভ্যন্তরিন চাহিদা পূরনের জন্য এর দাম যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, ঠিক তেমনই স্থানীয় বাজারে দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে বিশ্ববাজারেও এর রপ্তানি এখন শূন্যের কোঠায়।

বাংলাদেশ একটি অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। বাংলাদেশের উপকূলয় অঞ্চল বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এদেশে রয়েছে সামুদ্রিক খাবারজাত শিল্পের জন্য অসাধারণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ৭১০ কি.মি উপকূলীয় অঞ্চল এবং লোনা পানি ও মিষ্টি পানির চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের জন্য যথাযথ পরিবেশ। বাংলাদেশের আরোহিত মৎস্য সম্পদের প্রায় ৮০% উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়।

এর মধ্যে আছে ২৮ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৮৭ প্রজাতির মাছ। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষি। মৎস্যচাষ কৃষি খাতের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনায় একটি খাত। রপ্তানি খাতের মধ্যে চিংড়ি বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী রপ্তানি পণ্য। দেশের মোট উৎপাদিত চিংড়ির বেশিরভাগই উৎপাদিত হয় দেশের উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং কক্সবাজার এলাকায়।

হিমায়িত চিংড়ি বাংলাদেশের একটি ১০০ ভাগ কৃষিভিত্তিক ও রপ্তানীমুখী শিল্পখাত। সারাদেশের গ্রামগঞ্জের প্রায় দেড় কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চিংড়ি ও মাছ উৎপাদন, বিপনন, প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানীতে নিয়োজিত রয়েছে। হিমায়িত খাদ্য দেশের রপ্তানী বাণিজ্যে অত্যন্ত পুরোনো একটি খাত। নানা চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে আমরা দীর্ঘ প্রায় পাঁচদশক ধরে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানী বাণিজ্যে নিয়োজিত রয়েছি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আমরা স্বাধীনতার পর মাত্র ২.৩৮ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি আরম্ভ করে, ধীরে ধীরে ২০১৩-১৪ অর্থ বছর পর্যন্ত ৫,০০০ কোটি টাকার উপরে রপ্তানি আয় উন্নীত করেছি। কিন্তু নানাবিধ কারণে দিন দিন চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ায় রপ্তানিও ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শুধুমাত্র হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে ৩,৭৬৮ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছি। সুতরাং উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানি পুনরুদ্ধারে নিম্নলিখিত বিষয়াদির প্রতি সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে হিমায়িত মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে আসছে। আমদানিকারক দেশসমূহের মধ্যে- ইউনাইটেড কিংডম (গ্রেট ব্রিটেন), নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্স,ইতালি, ডেনমার্ক, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ষ্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস, পর্তুগাল, রাশিয়া, ইউএসএ, জাপান, চায়না, সৌদি-আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারত অন্যতম।

দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রতিফলন আশা করছি আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে। অতীতে সরকারের বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের নীতি সহায়তা পেয়ে হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকারী রপ্তানিখাত ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। তাই চিংড়ি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানি পুনরুদ্ধার হলে আগামী ১০ বছরে আমরা বর্তমান রপ্তানি আয় কম করে হলেও দশগুণ বৃদ্ধি করে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি সম পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবো।

গত ১৫বছর ধরে আমাদের একান্ত আন্তরিক প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত মৎস্য অধিদপ্তর ভেনামী চিংড়ি উৎপাদনের পাইলট প্রজেক্ট করার অনুমতি দেন। আমরা খুলনা জেলার পাইকগাছাস্থ বিএফআরআই লোনা পানি কেন্দ্রে বিএফএফইএ সদস্য প্রতিষ্ঠান যশোরস্থ এম.ইউ সী ফুড্স লিঃ নামীয় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় একটি পাইলট প্রজেক্ট করে সফলতা অর্জন হয়েছে। যেখানে “সেমি-ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে” বাগদা চিংড়ি প্রতি হেক্টর ১৫০০ থেকে ২০০০ কেজি উৎপাদন হয়, সেখানে ভেনামি চিংড়ি একই পদ্ধতিতে চাষ করে হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন প্রায় ১০ হাজার কেজি।

তাই লোনা পানির বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি অনতিবিলম্বে বাণিজ্যিকভাবে নতুন প্রজাতির এই ভেনামি চিংড়ি চাষ হ্যাচারিসহ উন্মুক্ত করা হলে দেশের জনগণের আমিষের চাহিদা পূরণ হবে, এখাতের রপ্তানি কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে এবং ইতোমধ্যে কাঁচামাল অর্থাৎ চিংড়ি মাছের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো পুনরায় চালু হবে এবং দেশের বিশেষ করে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বেকারত্ব হ্রাস পাবে।

বর্তমানে হ্যাচারিগুলোতে যে বাগদা চিংড়ির পোনা পাওয়া যায় তার অধিকাংশই সংক্রামক যুক্ত, ফলশ্রুতিতে চাষাবাদের সময় অধিকাংশ পোনা মারা যায়। তাই অনতিবিলম্বে বর্তমান হ্যাচারিগুলোকে সরকারি, বিশ্ব ব্যাংক কিংবা এনজিও-এর সহায়তায় আধুনিকায়ন করে জীবাণুমুক্ত পোনা উৎপাদনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

বিগত বহুবছর যাবৎ চিংড়ি চাষযোগ্য এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন যথাঃ ভরাটকৃত খাল-বিল পুনঃখনন, বাঁধ নির্মাণ, চিংড়ি চাষের ঘের খনন, বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি তেমন কাজ পরিকল্পিত ও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হয়নি; যা চিংড়ি চাষ বৃদ্ধি করার জন্য একান্ত আবশ্যক।

উপরন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিপরীতে ইউরো, রুবল ও ইয়েনের মূল্যস্ফীতি ঘটায় হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের রপ্তানি মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সুতরাং আমরা কম মূল্যে আমাদের পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। ফলে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির উপর বিদ্যমান ০.৫০% সোর্স ট্যাক্সকে কে ০.২৫%-এ রূপান্তর করে চূড়ান্ত ট্যাক্স হিসেবে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে অনুমোদন ঘোষণা করা হলে এ খাতের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে ও রপ্তানিকারকরা টিকে থাকতে পারবে।

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ জনিত এই সংকটময় মুহুর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি খাতটিকে অস্তিত্ব লড়াইয়ে টিকে থাকার লক্ষ্যে এবং দেশের স্বার্থে শতভাগ রপ্তানিযোগ্য এই কৃষিজাত পণ্য মাঠ পর্যায় হতে রপ্তানি পর্যন্ত কার্যক্রম চালু রেখে মুল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন অব্যাহত রাখার জন্য হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানিতে সরকার প্রদত্ত নগদ সহায়তা অন্যান্য কৃষিপণ্যের ন্যায় ১০%-এর স্থলে ২০%-এ উন্নীত করা আবশ্যক।

২০২০ সালের ৫ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেন। সরকার ঘোষিত এই আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের শর্তে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তি উল্লেখ থাকায় হিমায়িত প্রক্রিয়াজাতকারী রপ্তানিকারকদের স্বল্প সংখ্যক প্রতিষ্ঠান সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অতি সামান্য পরিমাণ সুবিধা পেয়েছে।

বিশ্ববাজারে ছোট চিংড়ি অর্থাৎ হরিণা, চাকা, চালি এর প্রচুর চাহিদা আছে। এই চিংড়িগুলো সি-ফুড রেস্টুরেন্টে খুবই উপাদেয় ও সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে বিবেচিত এবং বলা চলে প্রায় প্রতিটি আইটেম প্রস্তুত করার জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য। স্বাধীনতাত্তোর সময় থেকে গত দুই যুগের আগ পর্যন্ত এই চিংড়িগুলো প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হতো। স্থানীয় বাজারেও এই চিংড়ির প্রচুর চাহিদা আছে। ক্রমশ বিলুপ্ত হওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারে আভ্যন্তরিন চাহিদা পূরনের জন্য এর দাম যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, ঠিক তেমনই স্থানীয় বাজারে দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে বিশ্ববাজারেও এর রপ্তানি এখন শূন্যের কোঠায়।

আসন্ন বাজেটে হরিণা, চাকা, চালি চিংড়ি উৎপাদন কিভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে এই বিষয়টা নিয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইন্সটিটিউট (বিএফআরআই) এ বিষয়টি নিয়ে অনতিবিলম্বে এর গবেষণা ও পাইলট প্রজেক্ট হাতে নিতে পারে। এই কারণে বিএফআরআই এর জন্য আসন্ন বাজেটে অর্থের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যদি বিএফআরআই সফলতা লাভ করে, ধরে নেয়া যেতে পারে শুধুমাত্র এই ছোট চিংড়ি রপ্তানি করার জন্য ভবিষ্যতে কমপক্ষে ৫০টি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার প্রয়োজন হবে।

হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির পাশাপাশি হিমায়িত কাঁকড়া রপ্তানিও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য একটি অপার সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। ইতোমধ্যেই হিমায়িত নরম কাঁকড়া রপ্তানির জন্য দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলাতে তিনটি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে।

গত পাঁচ বছরে এই খাত থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। এই খাতটিকে যদি এখন থেকেই সরকারের গ্রহণযোগ্য নীতিমালার আওতায় এনে নার্সিং করা যায় তাহলে আগামী পাঁচ বছরে শুধুমাত্র হিমায়িত কাঁকড়া রপ্তানি করে কয়েকশত মিলিয়ন ডলার বাৎসরিক আয় করা সম্ভব।

 

 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ