1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ডিজিটাল ব্যাংক: বদলে দেবে অর্থনীতির চেহারা

তানভীর আহমেদ মিশুক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০২৩

মাত্র কয়েক বছর আগের কথা, দেশের এক জেলা থেকে আরেক জেলায় টাকা পাঠাতেও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। পোস্ট অফিসের মানি অর্ডার করলে তিন বা চার দিন পর টাকা পেতেন অন্য প্রান্তের মানুষটা। কখনও সপ্তাহও পেরিয়ে যেত। ব্যাংকের ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার পদ্ধতি লেনদেনে কিছুটা গতি আনলো। কিন্তু তাও দিন পেরিয়ে যেত। লেনদেনটা যখন মোবাইলে চলে এলো তখন তো মুহূর্তের গতিতে টাকা লেনদেন শুরু হলো। ফলে একই টাকা দিনে একাধিকবার হাতবদল হওয়া শুরু হলো। কিন্তু কখনও কিছু সমস্যা আর সীমাবদ্ধতায় আটকে গেলো গতি।

সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো মোবাইলে লেনদেনের ক্ষেত্রে দৈনিক বা মাসিক ভিত্তিতে একটা সীমা দেওয়া আছে। ফলে সুপারসনিক গতির সুবিধাও অনেক ক্ষেত্রেই অর্থহীন হয়ে গেলো দিনের ২৫ হাজার বা মাসের তিন লাখ টাকা লেনদেনের সীমার কাছে। একজন ব্যবসায়ীর কোনও অবস্থাতেই এই সীমায় থেকে ব্যবসায়িক লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছিল না। আর এখানেই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ালো ডিজিটাল ব্যাংকের।

আমার বিবেচনায় ডিজিটাল ব্যাংক কেবল নতুন একটি ধারণা নয়, এটা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বদলে দেওয়ার হাতিয়ার হতে যাচ্ছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে থাকা কয়েক কোটি মানুষকে প্রথাগত লেনদেনে আনার চূড়ান্ত অস্ত্র হতে যাচ্ছে এই ডিজিটাল ব্যাংক। আর সেই সঙ্গে মুহূর্তের গতি এবং যেকোনও অঙ্ক লেনদেনের স্বাধীনতা থাকার সুবিধা চুইয়ে চুইয়ে সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ফল্গু ধারা প্রবাহিত করবে।

দুই বছর আগে যখন প্রথম ডিজিটাল ব্যাংকের স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতে শুরু করি, তখন কাউকেই পাশে পাইনি। একটা সময় তো বলতে গেলে স্বপ্নটাকে ফেরি করে বেড়িয়েছি। জনে জনে স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে অনেক সময়, মানুষের মুখে বাঁকা হাসাহাসি দেখেছি। আমি জানতাম, এই সময়টা বদলে যাবে। অবশেষে জোর গলায় বলতে পারছি, আমার স্বপ্ন সত্যি হওয়ার হাত ছোঁয়া দূরত্বে চলে এসেছে। স্বপ্নের ডিজিটাল ব্যাংক এখন বাস্তবতার খুব কাছাকাছি রয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালাও চূড়ান্ত করে ফেলেছে। আমার তো বিশ্বাস চলতি বছরেই ডিজিটাল ব্যাংকের সেবা পেতে শুরু করবে গ্রাহক।

প্রশ্ন হচ্ছে, ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে কেন এত উচ্ছ্বাস? এক কথায় এর উত্তর দিলে বলতে হয়, ডিজিটাল ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র বদলে দেবে– অন্তত আমি সেভাবেই দেখি। শুধু তো এই একটা নয়, যুগে যুগে অর্থনীতিতে একটা করে বিপ্লব হয়েছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতি বদলে গেছে। বিনিময় প্রথা থেকে মুদ্রা এসেছে, সেখান থেকে ই-মানি এসেছে। মহাজনী প্রথা থেকে ব্যাংক হয়েছে। এখন সময় সমস্তটার একটা চূড়ান্ত আধুনিক ও সাশ্রয়ী ব্যবস্থা নিয়ে আসার। আর সেটাই ডিজিটাল ব্যাংক।

প্রথমেই বলা যায়, ডিজিটাল ব্যাংক দিয়ে আমরা বাংলাদেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে নিয়মিত আর্থিক কাঠামোতে নিয়ে আসতে পারবো। এর জন্যে বছরের বেশি লাগার কথা নয়।

একটি স্টাডি বলছে, এখনও বাংলাদেশের ৫০ শতাংশের মতো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আসেননি। কেন আসেননি? কারণ, প্রথাগত ব্যাংক, এমনকি আমাদের মোবাইল আর্থিক সেবাও তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না বা চাহিদা মেটাতে পারছে না।

কাওরান বাজারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কথা ধরুন। প্রতিদিন এসব ব্যবসায়ীর একেকজন এক-দেড় লাখ বা তার চেয়ে বেশি টাকা লেনদেন করে থাকেন। কিন্তু এরা বিভিন্ন সংকোচের কারণে, লজ্জার কারণে ব্যাংকে যেতে চান না। আবার আমরা এমএফএস থেকে তাদের চাহিদা মেটাতে পারি না, মূলত লেনদেনের সীমার কারণে। ফলে এই মানুষটিকে নিয়মিত চ্যানেলে ব্যাংকিংয়ে আনতে গেলে আপনার চাই ডিজিটাল ব্যাংক।

এবার দেশের প্রান্তিক একজন সাধারণ মানুষের কথা ভাবুন। যে মানুষটি তার জরুরি প্রয়োজনে মহাজনের কাছ থেকে দৈনিক চল্লিশ শতাংশ সুদে টাকা ধার করছেন, এই লোকটির জামানত নেই। তাকে সে জন্য প্রথাগত কোনও প্রতিষ্ঠান ঋণও দিচ্ছে না। ডিজিটাল ব্যাংক হলে আমরা এই লোকটিকেও ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসবো।

একজন সাধারণ ক্রেতার কথা ভাবুন। তিনি আলি এক্সপ্রেস বা এরকম কোনও বিদেশি ই-কমার্স সাইটে একটি পাঁচশ ডলারের জিনিস পছন্দ করলেন। তিনি কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিং বা কার্ড দিয়ে তাৎক্ষণিক ওই জিনিসটা কিনতে পারবেন না। তাকে একটা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। এই মানুষটিও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আসবেন; কারণ, এখানে একটি ক্লিকেই তার প্রয়োজনীয়তা মিটবে।

দেশের লাখো মানুষ এখনও ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে রয়ে গেছে। এতে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ এখনও বালিশের নিচে টাকা নিয়ে ঘুমায়। এই টাকাটা আপনি-আমি জোর করে বের করে আনতে পারবো না। তাদের এই টাকার জন্য প্ল্যাটফর্ম দিতে হবে। আর সেটাই হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংক।

অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ডিজিটাল ব্যাংক কী লাভ করতে পারবে আদৌ। দেশে এত ব্যাংক, এনবিএফআই; তারা সবাই লাভ করতে পারছে না; ডিজিটাল ব্যাংক কীভাবে পারবে? আমি একমত যে দেশে অনেক ব্যাংক আছে। তারা অনেকেই লাভ করতে পারছে না। কিন্তু আমি লিখে দিতে পারি, সব ব্যাংক মিলে যে লাভ করছে, একটা ডিজিটাল ব্যাংক করেই সেটা করা সম্ভব। কারণ, কস্ট মিনিমাইজেশন। একটা প্রথাগত ব্যাংকে প্রতিটি লেনদেনের পেছনে ১৩৭ টাকার বেশি খরচ হয়। তার শত শত ব্রাঞ্চ চালানোর খরচ, এসি, বিশাল জনশক্তি; হাজারটা খরচ আছে। এই খরচটা পোষানোর চেষ্টা করে তারা কাস্টমারের কাছ থেকে চার্জ নিয়ে। সেটা না পারায় লোকসান হতে থাকে। আর এই জায়গাটায়ই অনেক অনেক এগিয়ে যাবে ডিজিটাল ব্যাংক।

ডিজিটাল ব্যাংকের কোনও শাখার দরকার নেই। ফলে অবকাঠামো ও জনশক্তি বাবদ তার খরচ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। হাজার হাজার লোকের বদলে মেশিনই সব করে দেবে নিমিষে। সামান্য চার্জ করেই একটি ডিজিটাল ব্যাংক তাই লাভে চলে যেতে পারবেন।

এখন বলি আমাদের প্রস্তুতি কেমন। আমাদের বলতে যদি নগদ-এর কথা বলি, তাহলে আমরা মোবাইল ব্যাংকিং শুরুর করার পরই বুঝতে পেরেছি, এই দেশের ভবিষ্যৎ ডিজিটাল ব্যাংক। সেই লক্ষ্যে আমরা ভেতরে ভেতরে কাজ করেছি। আমরা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, শক্তিশালী ডেটাবেজ নিয়ে কাজ করছি। আমরা এমন একটা ব্যবস্থা করতে চেয়েছি, যেখানে আপনি এনআইডি নম্বর ও মোবাইল নম্বর দিয়ে সার্চ দিলেই ব্যবহারকারীর সব আর্থিক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড পেয়ে যাবেন। ফলে এই এআই-ই আপনাকে বলে দেবে, এই লোকটিকে ঋণ দেওয়া নিরাপদ কিনা।

আমাদের হাতে সাড়ে সাত কোটি গ্রাহকের একটি বিশাল পরিবার আছে। আমরা যাত্রা শুরু করলে এই মানুষগুলো নিয়েই কাজ শুরু করতে পারবো। একটা কথা আমি বলতে পারি, নগদ যদি ডিজিটাল ব্যাংক পায়, তাহলে আমরা পরদিন থেকেই কাজ শুরু করতে পারি।

আমরা বলতে পারি, আমরা প্রস্তুত, বাংলাদেশ প্রস্তুত। এখন শুধু ডিজিটাল ব্যাংকের যাত্রা শুরু করার পালা।

লেখক: তানভীর আহমেদ মিশুক – মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ