1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অভূতপূর্ব উন্নয়ন দর্শন

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০২৩

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা দেশ ও জাতির নেতৃত্ব প্রদানে তার পিতার পরিপূরক হিসেবে কাজ করছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

আজ শেখ হাসিনা সেখান থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হিসেবে উত্তীর্ণ করেছেন। শেখ মুজিব জাতিসংঘের অধিবেশনে ঐতিহাসিক বিশ্বজাগরণী ভাষণ দেওয়ার পর পরই পুনরায় জাতিসংঘে গিয়ে বলেছেন, ‘আমার কিন্তু ভারতের সঙ্গে পানি নিয়ে বোঝাপড়া আছে। তোমরা আমার চিঠিটা নাও, সময়মতো সাহায্য করো।’ সে চিঠিটা বছরের পর বছর গেছে, কিন্তু কিছু করা হয়নি। শেখ হাসিনা এসে বিষয়টিকে আবার গুরুত্ব দিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধান ও প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রধান উপজীব্য হিসেবে মানুষকে রেখেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘প্রভার্টি রিডাকশন ইজ দ্য প্রাইমারি গোল অব দিজ প্ল্যান।’ এখন শেখ হাসিনা দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ রকম আরো কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনা পিতার পরিপূরক ভূমিকা পালন করছেন। জাতির পিতা উদ্যোগ নিয়েছেন, শেখ হাসিনা সে উদ্যোগের পরিপূর্ণতা দিচ্ছেন। শেখ মুজিব ভারতের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমার একটি লোক যদি না খেয়ে থাকে, আমার একটি লোক যদি ছায়ার নিচে না থাকে, আমার একটি লোক যদি বস্ত্রহীন হয়, তাহলে আমার স্বাধীনতা বিপন্ন।’ শেখ হাসিনা প্রতিটি খাতে উদ্যোগগুলোকে অক্ষরে অক্ষরে প্রোগ্রাম ধরে ধরে বাস্তবায়ন করেছেন। আমি তিনটি প্রত্যাবর্তনের ঘটনা দেখি, কোন তিনটি? ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারিতে শেখ মুজিবুরের প্রত্যাবর্তন। এরপর ৭ মে ১৯৮১-এ শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন। তার দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে অনেক অনুরোধ করে দেশে না নিয়ে এলে বাংলাদেশ যে কোথায় যেত, তার কোনো ঠিক নেই।

আরেকটি প্রত্যাবর্তনও অতি গুরুত্বপূর্ণ, যা ঘটে সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে বাধা দেয়া হয়েছিল। মাইনাস টু-এর কথা বলা হলেও আসলে তা ছিল মাইনাস ওয়ান। তিনি পরবর্তী সময়ে বলেছেন, ‘তারা আমাকে চেনে না। কোনোভাবেই আটকাতে পারবে না।’ তখন যদি তিনি শেখ মুজিবের মতোই জেদ করে না আসতেন, তখন বাংলাদেশের কী হতো? আমি বঙ্গবন্ধুর সাহসের যে যাত্রা, সে ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার তিনটি সাহসের কথা বলতে চাই। ১৯৯৬-৯৭ সালের বাজেটে কৃষিতে ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছিলেন। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের অনেক চাপ সত্ত্বেও তিনি বললেন, ‘এটা থাকবেই, তোমরা যদি গমের ওপর বিভিন্ন দেশে যে ভর্তুকি আছে, সেগুলো যদি ওঠাও তারপর এটা নিয়ে কথা বলো।’ ওই যে ভর্তুকি শুরু করেছিলেন, তারপর কিন্তু ভিশন-মিশনে যেটা শেখ মুজিবের প্রায়োরিটি ছিল, সেটা শেখ হাসিনারও প্রায়োরিটি হয়েছে। এক কোটি টনের খাদ্যশস্য এখন কিন্তু চার কোটি টন। আমাদের অনেক বন্ধু ভর্তুকির ওপর বিরাট বিরাট ভাষণ দেন, অনেক যুক্তি দেন। কিন্তু এক নাম্বার যুক্তি ভর্তুকি থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনার সাহস।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের সময় তার ওপরে প্রচণ্ড চাপ। সেনাবাহিনী প্রধান চারবার দেখা করে বলেছেন, ‘আপনি একটুখানি সমর্থন দেন। আমরা পরিবর্তন করে ফেলব।’ তিনি বললেন, ‘নো। আমি আমার মানুষকে মারতে দেব না।’ যদি দিতেন, গৃহযুদ্ধ হতো। শুধু তা-ই না, তখন সেনাবাহিনীকে হতাশাসহ গুজবের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধুর সন্তান বলেই শেখ হাসিনা এত সাহস পেয়েছিলেন। মতিয়া চৌধুরীকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন কিন্তু সমালোচকরা কত গালিগালাজ করেছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি তো মা।’ সেটি যদি না করতেন, তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাস যে কী হতো! তৃতীয়ত, পিতার হত্যার বিচার ও ’৭১-এর গণহত্যার বিচার, এটা কিন্তু অনেক সাহসের বিষয় এবং আস্থাজ্ঞাপক। আইনি ব্যবস্থায় তার আস্থার পরিচায়ক। শেখ হাসিনা এরকম ১০-১৫ বার তার সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ২০১৬ সালে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক শাজাহান একটি বই সম্পাদনা করেছিলেন। তিনি আমাকে বইটির নামকরণের অনুরোধ করেছিলেন। আমি নাম দিয়েছিলাম ‘ক্রান্তিকালের কাণ্ডারি শেখ হাসিনা’।

শেখ হাসিনার ওপর সম্প্রতি ড. শামসুল আলমের সম্পাদিত বইটির নাম ‘কারিগর’ না দিয়ে ‘কাণ্ডারি’ দিলে আমি খুশি হতাম। শেখ হাসিনা এখন কিন্তু বিশ্বনেতা। যা-ই হোক, তিনি যেটা ভালো মনে করেছেন, সেটাই সবাই গ্রহণ করছে। আমি তার তিনটি উদ্ভাবনের কথা বলছি। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা, যদিও আমি মনে করি সেটা তার পুত্রের মাথা থেকে এসেছে। কিন্তু তার পুত্রের ধারণাকে তিনি পছন্দ করেছেন বলেই সেটাকে বিকশিত করেছেন। আমরা যখন ২০০৮-০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম, তখন অনেকেই আমাদের উপহাস করেছিল। তারা বলতো, ‘এটা কি সম্ভব?’ কিন্তু আমরা দেখিয়েছি যে সম্ভব। তবে চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ ও বিআইডিএসের বিনায়ক সেনের কাছে শুনেছিলাম ইউনিয়ন পর্যায়ে যে রকম ডিজিটালাইজেশন হওয়ার কথা ছিল, সেরকম ডিজিটালাইজেশন হয়নি। আসলে হয়েছে, কিন্তু কৃষক-কৃষানি যেভাবে গ্রহণ করার কথা ছিল, সেভাবে গ্রহণ করেনি কিংবা তারা গ্রহণ করতে অক্ষম। এটার একটাই শুধু সমালোচনা করব এটা সেভাবে সমান্তরালভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল সেভাবে করা হয়নি। সমালোচনা খুব সহজ, আমি সেটা মানি। দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যারা দুর্বল, তাদের সমর্থন দিতে। এখন সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের বাজেট ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু যারা নীতি নির্ধারণ করেন তাদের কতজনের কাছে খবর আছে যে এর অর্ধেকের বেশি আত্মসাৎ করা হচ্ছে? পত্রিকাতেই এসেছে, যাদের একদমই পাওয়ার কথা নয়, তারা ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পেয়েছে। তিনি সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু এটা প্রাপ্যদের কাছে পৌঁছাচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব কার? তিনি কিন্তু সবটা দেখতে পান না। তৃতীয়ত, শেখ হাসিনা আঞ্চলিক মোড়লদের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন।

এখন চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান সবাই বাংলাদেশকে আপন করে পেতে চায়। এটি তার অসাধারণ নেতৃত্বের পরিচায়ক। ওই যে ‘ক্রান্তিকালের কাণ্ডারি শেখ হাসিনা’ বইয়ের কথা, সেখানে আমি একটি নিবন্ধে লিখেছিলাম পিতার মতোই সহকর্মী চয়নে শেখ হাসিনা সময়ে সময়ে শুদ্ধ সিদ্ধান্ত নেন না। এটা পরিষ্কার। তবে শুদ্ধ সিদ্ধান্ত যে নেন, তার প্রমাণ হিসেবে বলতে পারি, ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে, ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধিতার অবসান করেছেন। এসবের প্রস্তুতিতে দীপু মণি এবং খুরশেদ আলমকে যদি না নিতেন, তাহলে কী হতো? এরা অসাধারণভাবে গোপনে, প্রকাশ্যে এমনভাবে জরিপ করেছেÑ যেদিন সমুদ্রসীমা বিষয়ক আন্তর্জাতিক আদালতে আনক্লজ উঠবে সেদিন শেখ হাসিনা একদিকে মিয়ানমার, একদিকে ভারত, আরেকদিকে নেপালের সঙ্গে আলোচনা করেন। এটা তার বিচক্ষণতার প্রকাশ। অনেক অর্থনীতিবিদ সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির কথা বলেছেন। ১২ বছর আগে অমর্ত্য সেন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বলেছিলেন যদিও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের অর্ধেক (তখন অর্ধেক ছিল), কিন্তু তার আর্থসামাজিক অগ্রগতি ভারতের চেয়ে বেশি। ভারতের অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু আমাদের বিনায়ক সেনের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকেই বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে আছে। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে বৈষম্যের কথা যদি আমলে না নিই, আমরা কি বঞ্চিত মানুষদের প্রতি সুবিচার করছি? যদি ৭০০ কোটি ডলার বছরে বিদেশে পাচার হয়, এটি যদি আমলে না নেওয়া হয় তাহলে অবিচার হবে। এই যে ঋণখেলাপিদের জন্য অবাধ সুযোগ, এটা তো জাতির পিতার সমতাভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় ছিল না। বর্তমানে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত যৌক্তিক হচ্ছে? আর মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প এ দেশে কেন পুনরায় সচল করা হয়? পৃথিবীর প্রতিটি দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পে জরিমানা করা হয়। এখানে জরিমানা করা হয় না।

এটা কী রকম বিষয়? অথচ গরিব মানুষের টাকা, ট্যাক্সের টাকা অথবা ধার করে এনে মাথাপিছু ঋণের টাকায় ওসব প্রকল্প চলে। আমি একটি পরামর্শ দিয়েছিলাম যে কিছু বৃহৎ প্রকল্পকে ধীর গতির করে ডোনারদের সঙ্গে আলোচনা করে সময়সীমা পুনঃনির্ধারণ করলে বোধহয় ভালো হতো। কিন্তু অনেকেরই পছন্দ হয়নি। আর চূড়ান্তভাবে কেনাকাটায় সম্পূর্ণ নৈরাজ্য দেখা যায়। কোনো দেশে এক কিলোমিটার রাস্তা করতে ২০ কোটি টাকা লাগে, আমাদের দেশে ৯৯ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়। কেন আমরা পরিকল্পনা কমিশন থেকে পণ্য এবং সেবার ঋণকে মূল্য নির্ধারণ করে দিই না। এর বাইরে যারা বেশি দাম দেবে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিসকোয়ালিফাইড হয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ড. শামসুল আলমের সাম্প্রতিক পুস্তকটি পাঠ্য হওয়ার মতো, যদি সম্ভব হয় এর একটি ইংরেজি অনুবাদ করাতে পারলে এটি বিশ্ব সমাজেও সমাদৃত হবে বলে মনে করি। শেখ মুজিব সংবিধানের ১৩ নং অনুচ্ছেদে সমাজতন্ত্রের কথা বলেছেন। আরো বলেছেন, বাংলাদেশে সম্পদের মালিকানা হবে তিন রকম। রাষ্ট্রীয়, সমবায়ী ও ব্যক্তিগত মালিকানা। সমাজতন্ত্রকে উন্নত করলে ও সহযোগিতাকে প্রসারণ করলে মধ্যস্বত্বভোগীরা পিঁপড়ার মতো খেয়ে ফেলতে পারবে না। শেখ মুজিব আরো পরিষ্কারভাবে বলেছেন, গরিবের আয় যেন গড় আয়ের চেয়ে বেশি হয়। প্রয়োজনে উচ্চবিত্তদের ওপর বেশি কর ধার্য করে সেটি দিয়ে যেন গরিব মানুষের উপকারে প্রকল্প নেওয়া হয়।

লেখক : ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন – সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ