1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধু টানেল : তিন ঘণ্টার পথ ৩০ মিনিটে শেষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৩ জুলাই, ২০২২

পদ্মা সেতুর পর এবার আরেক মেগা প্রকল্প ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের’ দ্বার খুলছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশ দিয়ে যাওয়া টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। টানেলটি খুলে দেওয়া হলে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা, বাঁশাখালী, পটিয়া ও চন্দনাইশসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজার জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। আনোয়ারা থেকে সড়কপথে বিমানবন্দর যেতে আগে যেখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগতো, টানেল দিয়ে লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির পাশ ঘেঁষে শুরু হয়ে কর্ণফুলী নদীর মাঝ দিয়ে দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তে উঠেছে এ টানেল। চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে টানেলটি।

কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে টানেল অবস্থান করবে ১৫০ ফুট গভীরে। টানেলের নির্মাণ কাজ করছে চায়নার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে ২১০ চীনা নাগরিক এবং ৮০০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক দিন রাত কাজ করছেন।

গত মে মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ ৮৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দিন-রাত সমান তালে চলছে নির্মাণ কাজ। বাকি ১৪ শতাংশ কাজ শেষ হলেই টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। টানেল দিয়ে দিনে ১৭ হাজার যানবাহন পার হতে পারবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাড়বে শিল্প-কারখানা, হবে কর্মসংস্থান

এদিকে টানেলকে ঘিরে নদীর অপর প্রান্তে থাকা দীর্ঘদিনের অবহেলিত উপজেলা আনোয়ারা, বাঁশাখালী, পটিয়া ও চন্দনাইশসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজার জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসছে আমূল পরিবর্তন।

সিইউএফএল এলাকায় টানেলের মুখ থেকে আনোয়ারা কালাবিবিরদীঘি পর্যন্ত পিএবি সড়কের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে টানেল রোড। অপরদিকে শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবিরদীঘি পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার ছয় লেনের সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে।

বলা হচ্ছে, টানেলকে ঘিরে চীনের সাংহাই সিটির আদলে চট্টগ্রাম শহর ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলের রূপ পাবে। টানেলকে ঘিরে পশ্চিম পটিয়া এবং আনোয়ার পরিণত হবে উপশহরে। টানেলের জন্য করা নতুন সড়কের পাশে আনোয়ারা ও পটিয়া এলাকায় নতুন নতুন শিল্প জোন করারও চিন্তা করছেন বিভিন্ন শিল্প মালিকরা।

আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, ‘টানেল চালু হলে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে অনেক বেশি শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। পর্যটন শিল্পে আরও বেশি প্রসার লাভ করবে। এ এলাকা শিল্প স্থাপনের জন্য উপযোগী হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়া এতদিন তা হয়ে ওঠেনি। এখন টানেলকে ঘিরে এ এলাকায় জমির দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আনোয়ারা থেকে সড়কপথে বিমানবন্দর যেতে আগে যেখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগতো, টানেল দিয়ে লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট।

টানেল দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজতর করতে কক্সবাজারে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণের চিন্তা করছে সংশ্লিষ্ট দফতর। এতে করে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

টানেল নিয়ে যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ ৮৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করে ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধনের মাধ্যমে যান চলাচলের জন্য টানেলটি উন্মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।’

সব কিছু ঠিক থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদী এ কর্মকর্তা। টানেল চালু হলে দৈনিক ১৭ হাজার যানবাহন পার হতে পারবে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বর মাসে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম নগরীতে যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে। এ কারণে আমরা ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছি।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র টানেলের কথা মাথায় রেখে নগরীর সড়ক নেটওয়ার্কে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে- নির্মাণাধীন এলিভেটড এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখানে যানবাহন উঠা-নামার জন্য বাড়ানো হচ্ছে ইউলুপ এবং আন্ডারপাস। যা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। টানেল চালু হওয়ার পর শহরের যানজটের চাপ সামাল দিতে আপাতত এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা থেকে নিমতলা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটারের কাজ দ্রুত শেষ করে ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারির মধ্যে খুলে দেওয়ার চিন্তা চলছে।

নগরীর টোল রোড সাগরিকা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। টানেল চালু হলে আউটার লিং রোড হবে হাইওয়ের অংশ। পতেঙ্গা থেকে ফিডার রোড পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়ক ৬ লেন এবং ইপিজেড থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সার্ভিস রোডটি ২ লেন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিডিএ’র এ কর্মকর্তা আরও বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে এ টানেল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। টানেল চালু হলে যাতায়াতে সময় বাঁচবে। এতে জ্বালানি ও অর্থের সাশ্রয় হবে। টানেলের এ সড়ক এক সময় এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হয়ে দাঁড়াবে। কিছুদিন পর সমুদ্র পাড়ে বে-টার্মিনাল চালু হবে। সেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল পুরোদমে চালু হলে লাখো মানুষ সেখানে থাকবে যার প্রভাব নগরীতে পড়বে। টানেলের অপর প্রান্তে আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড, চীনা শিল্পাঞ্চল, মহেশখালীর মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ চট্টগ্রামে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে বাড়বে মানুষের সমাগম। বাড়বে যানবাহনের চাপ। এ কারণে নগরীকে সাজানোর পরিকল্পনা এখন থেকেই নেওয়া হয়েছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ