1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিদ্যুৎ-সংকট: কারণ ও করণীয়

মাসুদ উর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০২২

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সবার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিদ্যুৎ স্টোর করে রাখার মতো কোনো ভোগ্যপণ্য নয়। এটি একটি চলমান ব্যবস্থা। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন করতে হয়। কাজেই উৎপাদন কম হলে লোডশেডিং অপরিহার্য।

বিদ্যুৎ একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সঞ্চালক ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখনো যথেষ্ট পিছিয়ে। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটাই সমাধান হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অন্য অনেক দেশের মতো বিদ্যুৎ-সংকটে পড়েছে বাংলাদেশও।

জ্বালানি তেল ও গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন খুবই সংকটে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েই কিনা, বাংলাদেশ সরকার রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পত্রিকার ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। অথচ করোনাকালের শুরুতেও তা ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার!

রিজার্ভের পরিমাণ এ রকম কমতে থাকলে দুশ্চিন্তা যেমন বাড়বে, তেমনি একধরনের অস্থিরতাও তৈরি হতে পারে দেশজুড়ে। তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুতের অন্যতম কাঁচামাল এলএনজির মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার আপাতত এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিচ্ছে বা বলা যায়, অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছে।

ফলে দেশে দেখা দিয়েছে গ্যাসের ঘাটতি। গ্যাসের ঘাটতির কারণে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, শিগগিরই এই ঘাটতি পূরণের কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তবে দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়ে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টার কথা জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।

দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের চড়া দামে বিপদে বাংলাদেশ। ২০১৮ থেকে চাহিদার বেশ বড় একটা অংশের জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে আমদানির ওপর। সেই সংকট কাটতে না কাটতেই এবার শঙ্কা বাড়িয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ।

ইউরোপজুড়ে চাহিদার ৪০ শতাংশের বেশি গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া। দেশভেদে তা শতভাগ পর্যন্ত। ফলে চলমান সংকটে সরবরাহ ব্যাহত হলে সেই গ্যাসের জন্য ইউরোপের দেশগুলোর নির্ভরতা বাড়বে এশিয়ার ওপর। অন্যদিকে, গ্যাসের জন্য বাংলাদেশের আমদানিনির্ভরতা এশিয়া, মূলত কাতারের ওপর। সেই কাতারকেই ইউরোপে সরবরাহ বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

ফলে দামের চেয়েও বাংলাদেশের জন্য এখন বড় দুশ্চিন্তা, প্রয়োজনীয় গ্যাসের প্রাপ্তি নিয়েই। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এখন যদি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ যে পরিমাণ গ্যাস আমদানি করে, তার পুরোটাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হলে তেল বা কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হতো। এবার তা হতে দেখা যাচ্ছে না।

কারণ হচ্ছে, গ্যাসের মতো আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। তেল উৎপাদকদের জোট ওপেকের বাইরে সবচেয়ে বড় জোগানদাতা রাশিয়া। তা ছাড়া, যুদ্ধকৌশলের অংশ হিসেবে তেল নিষেধাজ্ঞার ফলে সমুদ্রপথে রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে যে তেল রপ্তানি করে, সেটি ব্যাহত হচ্ছে।

কাজেই সার্বিক বিচারে পুরো বিশ্বের মতো তেল-গ্যাসের সংকট এখন বাংলাদেশেও। ফলে উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় সারা দেশে কম-বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। খোদ রাজধানীতে এত দিন যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল, সেখান থেকেও সরে আসা হয়েছে। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হওয়ার ওপর মনোযোগ দিয়েছে সরকার।

কিছুদিন যাবৎ বলা হচ্ছিল, অফিস-আদালতের সময়সীমা কমিয়ে আনা, রাত ৮টার পর বিপণিবিতান বন্ধ রাখা, সামাজিক অনুষ্ঠানে আলোকসজ্জা বন্ধ রাখা, এমনকি গভীর রাতে স্ট্রিট লাইট বন্ধ রাখার মতো সিদ্ধান্তও নিতে যাচ্ছে সরকার।

সোমবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সাশ্রয়ের স্বার্থে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জ্বালানি সাশ্রয়ে সোমবার থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র।

উৎপাদন কমে যাওয়ায় সারা দেশে এলাকাভেদে বিভিন্ন সময়ে দিনে এক-দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। সপ্তাহে এক দিন পেট্রলপাম্প বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাত ৮টার পরে বন্ধ থাকছে বিপণিবিতান ও শপিং মল। অফিস সময়ও কমানো হচ্ছে।

সময়ের প্রয়োজনে এই সিদ্ধান্তগুলোর সঠিক বাস্তবায়নকে আমি যৌক্তিক মনে করছি। এ ছাড়া, এর বাইরে আরও যা কিছু করা দরকার তা হলো:

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সবার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, বিদ্যুৎ স্টোর করে রাখার মতো কোনো ভোগ্যপণ্য নয়। এটি একটি চলমান ব্যবস্থা। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন করতে হয়। কাজেই উৎপাদন কম হলে লোডশেডিং অপরিহার্য। আপনি যখন অপ্রয়োজনে একটি বাতি, ফ্যান বা এসি চালিয়ে রাখবেন, তখন আপনাকে মনে রাখতে হবে এই বিলাসিতার জন্য অন্য একজনকে অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে, গরমে হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে। আপনি ভাবছেন, আমার টাকা আছে, আমি ইচ্ছেমতো চালিয়ে রাখব! না।

যত দিন আপনার এই বিলাসিতার সমপরিমাণ উৎপাদন দেশে ছিল, তত দিন পেরেছেন কিন্তু এখন উৎপাদন কম। কাজেই যাঁরা এই বিলাসিতা করবেন, তাঁরাই প্রকারান্তরে অনেকের দুর্ভোগের কারণ হবেন—এটি যেন সবার মাথায় থাকে। এখনো যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও অপচয় রোধ করা গেলে জনদুর্ভোগকে কিছুটা সহনীয় মাত্রায় রাখা যাবে।

তা না হলে একসময় হাহাকার সৃষ্টি হবে। ক্ষোভ বাড়বে, অসহিষ্ণু হবে আমজনতা। কিংবা কে জানে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো অর্ধেক দিন অন্ধকারেও নিমজ্জিত থাকতে হতে পারে!

জনসচেতনতার পাশাপাশি সরকারকে কঠিন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে যা যা করা দরকার তা করাসহ বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্তা-কর্মীর যোগসাজশে পাওয়া অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্নকরণ ও সিস্টেম লস সর্বোচ্চ কমিয়ে আনার ওপর জোর দিয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ব্যবস্থা নিতে হবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সুষমভাবে বণ্টনেরও। বায়োগ্যাসের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারি আনুকূল্যের পাশাপাশি সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়াতে মনোযোগী হতে হবে। এ ছাড়া এনার্জি সেভিংস বাল্ব কমমূল্যে স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে বিতরণ করাসহ সবদিক বিবেচনায় নিয়ে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে ব্যর্থ হলে চড়া মূল্য দিতে হবে জনগণ তথা গোটা দেশকে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

 

লেখক: মাসুদ উর রহমান – কলেজশিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ